চাঁদপুর শহরের মিশন রোডের একটি বেসরকারি ব্যাংকের ম্যানেজারের বাসার দ্বিতীয় তলায় ভাড়া থাকতেন শাহানারা বেগম (৫৬) ও শাহ আলম ভূঁইয়া (৬৫) নামের এক দম্পতি। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে দুই ছেলে রানা ও রকি দুবাই প্রবাসী এবং একমাত্র মেয়ে তানিয়া স্বামীকে নিয়ে ইউরোপে থাকেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুইদিন পূর্বে ওই দম্পতি করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে আসেন। নমুনা পরীক্ষায় তাদের রেজাল্টও পজিটিভ আসে। এরপর সোমবার সকালে শাহানারা বেগম হঠাৎ করে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু মৃত স্ত্রীকে দাফন তো দূরের কথা, করোনায় আক্রান্ত স্বামী নিজেও মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে ছিলেন বিছানায়। এমন অবস্থায় ফোনে খবর পেয়ে চাঁদপুর সদরের ইউএনও এসে মৃত নারীর লাশ দাফন ও সেই মুমূর্ষু স্বামীকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
ঘটনাটি ঘটেছে আজ সোমবার সকালে চাঁদপুর শহরের ট্রাক রোড এলাকার খানবাড়ি এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্বামী-স্ত্রী দুজনই কয়েক দিন ধরে করোনা পজিটিভ হয়ে বাড়িতে আইসোলেশনে ছিলেন। এর মধ্যে শাহানাজ বেগমের আজ সকালে মৃত্যু হয়। কিন্তু নিকট কোনো আত্মীয় পাশে না থাকায় ঘটনা পরিবারের কেউই জানতে পারেননি। অপরদিকে করোনায় আক্রান্ত পরিবার বলে প্রতিবেশীরাও কয়েকদিন যাবত এড়িয়ে চলছিলেন তাঁদের বাড়ি। এদিকে তাঁর স্বামী শাহ আলম ভূঁইয়া নিজেও শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে ছিলেন। এমন অবস্থায় ফোনে খবর পেয়ে তাঁদের উদ্ধার করতে আসেন চাঁদপুর সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা শাহনাজ।
জানা যায়, পরিবারটির অসহায়ত্বের খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান তিনি। এরপর বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে তিনি জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশকে অবহিত করেন। পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটোয়ারী দুলালের সহযোগিতায় শাহ আলমকে হাসপাতালে ভর্তি করতে সমর্থ হন। আর স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে মৃত শাহানারা বেগমের দাফনের ব্যবস্থা করেন তিনি।
ইউএনও সানজিদা শাহনাজ সাংবাদিকদের বলেন, সকাল ১০টার দিকে ওই দম্পতির একজন প্রতিবেশী তাঁকে মুঠোফোনে ঘটনাটি জানান। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁদের উদ্ধারের জন্য অ্যাম্বুলেন্স জোগাড়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু কোথাও অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে অবশেষে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকে দুলাল পাটোয়ারীর সহায়তায় আঞ্জুমান মুফিদুল ইনসানের একটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে লাশটি স্বজনদের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এতে তাদের সহায়তা করেন ইসলামী আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবীরগণ। আর অপরদিকে করোনায় আক্রান্ত শাহ আলমকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তির ব্যবস্থা করেন।
এ বিষয়ে ইউএনও সানজিদা শাহনাজ আরো বলেন, আমরা কখনোই চাই না এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আর কোথাও ঘটুক। এ ধরনের ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের সকলকে আরও সচেতন হতে হবে।














