মেজর জলিলঃ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজবন্দী ও একমাত্র রাষ্ট্রীয় ‘খেতাবহীন’ সেক্টর কমান্ডার

1
মেজর জলিল

১৯৪২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলার উজিরপুরে জোনাব আলি চৌধুরী ও রাবেয়া খাতুনের ঘরে জন্ম নেয় এক পুত্র শিশু। নাম রাখা হয় মোহাম্মদ আব্দুল জলিল। আব্দুল জলিল উজিরপুর থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে আইএ পড়তে ভর্তি হন পাকিস্তানের মারি ইয়ং ক্যাডেট ইনস্টিটিউশন এ। আইএ পাশ করে ১৯৬২ সালে পাকিস্তান আর্মিতে যোগ দেন ট্রেইনি অফিসার হিসেবে। ১৯৬৫ সালে কমিশন লাভ করে অংশ নেন ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান –ভারত যুদ্ধে। ১৯৭০ সালে তিনি মেজর পদে উন্নীত হন। পরবর্তীতে যার নামের সাথে স্থায়ীভাবে লেগে যায় এই মেজর শব্দ। মানুষ মোহাম্মদ আব্দুল জলিল কে এক নামে চিনে মেজর জলিল নামে। মেজর জলিল হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন বহুল আলোচিত চরিত্র।

১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অসুস্থ মাকে দেখতে পাকিস্তান থেকে ছুটি নিয়ে নিজের বাড়িতে আসেন মেজর জলিল। ছুটি শেষ হয়ে গেল, কিন্তু সারাদেশ তখন উত্তপ্ত। তাই মেজর সাহেব ফিরতে বিলম্ব করছিলেন। এর মাঝে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আক্রমন করে বসে নিরীহ বাংলাদেশিদের উপর। একদিন পর রেডিওতে শোনা যায় আরেকজন মেজরের কণ্ঠ – “I am major zia,  hereby proclaims, on behalf of Sheikh Mujibur Rahman, the independence of Bangladesh……”. (“আমি মেজর জিয়া, শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি……”) ।  স্বাধীনতার এই আহবানে দেশকে মুক্ত করতে পাকিস্তান বাহিনী ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন মেজর জলিল। একজন মেজরকে পেয়ে বরিশাল অঞ্চলের ইপিআর, পুলিশ, আনসার সহ তরুনরা আশাবাদী হয়ে ওঠে। মেজর জলিলের ভাষণে উদ্দীপিত হয়ে যোগ দেয় মুক্তিযুদ্ধে। মুজিব নগর সরকার গঠনের পর মেজর জলিলকে বানানো হয় খুলনা, বরিশাল অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৯ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক।

মেজর_জলিল
মেজর জলিল

৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অনেক ত্যাগ আর কষ্টের বিনিময়ে পাওয়া গেল স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশ! ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করা জাতি বিজয় পেল ১৬ ডিসেম্বর। স্বাধীন দেশে বিজয় অর্জনের ২ সপ্তাহ পরে খুলনা থেকে যশোর হয়ে একটি প্রাইভেট কার ও একটি মাইক্রোবাসে করে ঢাকা যাচ্ছেন ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা। যাদের মধ্যে ছিলেন ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পর্যন্ত ৯ নম্বর সেক্টরের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা কমান্ডার মেজর জলিল। এবং বাকি সকলেই ৯ নম্বর সেক্টরের শীর্ষস্থানীয় যোদ্ধা যারা দেশকে মুক্ত করতে বীরত্বের সাথে জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে লড়েছেন। এবং বাধ্য করেছেন খুলনার পাক বাহিনীকে আত্নসমর্পন করতে (১৭ ডিসেম্বর)। ছিলেন জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার।

সকাল ১০টার দিকে তাদের বহন করা প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস যখন যশোর শহরে প্রবেশ করবে তখনই কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮ নং সেক্টরের আরেকদল সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা পথরোধ করলো তাদের। যাদের সাথে ছিল অস্ত্র তাঁক করে পজিশন নিয়ে থাকা প্রায় ২০জন মেশিনগানধারী মুক্তিযোদ্ধা। মেজর জলিলের সঙ্গীরাও ছিল সশস্ত্র। তারা বন্দুক তাক করতে গেলে মেজর জলিল “ডোন্ট ফায়ার” বলে থামিয়ে দেন তাদের।

যে দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করলেন সেই দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের মাত্র ২ সপ্তাহের মাঝে ৯ নং সেক্টরের অধিনায়কসহ ১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে আটক করা হলো! আটক করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় যশোর সার্কিট হাউজে। মেজর জলিল কে আলাদা করে বাকিদের অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর সেখানে মেজর মঞ্জুর আসলে মঞ্জুর ও মেজর জলিলের মাঝে তুমুল কথা কাটাকাটি হয়। আমাকে গ্রেফতার করার সাহস হলো কিভাবে , কে নির্দেশ দিয়েছে- মেজর জলিলের এমন প্রশ্নের উত্তরে মেজর মঞ্জুর জানান- জেনারেল ওসমানীর নির্দেশে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাই কমান্ডের নির্দেশ অমান্য, খুলনা জয়ের পর লুটতরাজ করা ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তার বিভিন্ন বক্তব্য ও পদক্ষেপের কারনে কোর্ট মার্শালে তার বিচার করা হবে।

কিন্তু কেন গ্রেফতার কর হলো মেজর জলিল কে? কেন স্বাধীন দেশের প্রথম রাজবন্দী করা হলো একজন  সেক্টর কমান্ডারকে! কেন এরকম অভিযোগ আনা হলো!

এ নিয়ে খুব সরল উত্তর দেয়া হয়- বিজয়ের পর ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের ফেলে যাওয়া অস্ত্রসস্ত্র সব লুট করে নিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু জলিল এর জোড়ালো প্রতিবাদ করে, এর ফলেই ভারতীয় বাহিনী ক্ষুব্দ হয় । কিন্তু উত্তর টা কি আসলেই এত সরল? এটি একটি কারন কিন্তু একমাত্র কারন হয়ত নয়। ভারতীয় বাহিনী ক্ষুব্ধ হলেও কিন্তু কেন একজন সেক্টর কমান্ডার মেজর মঞ্জুর যে নিজেও চরম বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেছে, আরেকজন সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলকে গ্রেফতারে নেতৃত্ব দিবে! ভারতীয় বাহিনীর লুটতরাজ এর প্রতিবাদ করলে তো মেজর মঞ্জুর ও জেনারেল ওসমানীর খুশি থাকার কথা! তা না হয়ে গ্রেফতার! আবার কেন একজন সেক্টর কমান্ডার হয়েও কোন খেতাব পেলেন না মেজর জলিল? যেখানে অন্যসকল সেক্টর কমান্ডার বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন। কতজন বীরবিক্রম, বীরপ্রতীক হয়েছেন। দু একজন তো যুদ্ধ না করেও পেয়েছেন।

খুলনা স্বাধীন হল ১৭ ডিসেম্বর, ভারতীয় বাহিনীর লুটপাটের কথা আসলে সেটা ১৭ ডিসেম্বরের পরেই হওয়ার কথা। কিন্তু এর আগের কিছু ঘটনা আমাদের ব্যাপারটিতে অন্য ইঙ্গিতও দেয়। পুরোপুরি সফলতার পরিচয় দেয়ার পরও কেন জয়নাল আবেদিন নামে অন্য একজন মেজরকে যুদ্ধের শেষ প্রান্তে ৯ নং সেক্টরে নিয়ে এসে মেজর জলিলেল সাথে সেকটরের কাজ ভাগাভাগি করতে বলা হল? পরে মেজর জলিলকে সরিয়ে এই মেজর জয়নাল আবেদিনকে ৯ নং সেক্টরের অধিনায়ক করা হয়। কেন ৮ নং সেক্টরের অধিনায়ক মেজর মঞ্জুর কে ৮ নং সেকটরের পাশাপাশি ৯ নং সেক্টরের দায়িত্ব দেয়া হয়।

৯ নম্বর সেক্টরের স্টাফ অফিসার ওবায়দুর রহমান মোস্তফার লেখা – ‘মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টর ও আমার যুদ্ধকথা’ বইয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন তথ্য পাওয়া যায়।

শুধু ভারত বিরোধিতা নয় বরং এর সাথে মুক্তিবাহিনীর সেনাপতি এমএজি ওসমানীর সাথে দ্বন্দকে কারন হিসেবে দেখেন অনেকে।  বৃটিশ আর্মির সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল আতাউল গনি ওসমানির প্রথাগত যুদ্ধ পদ্ধতির সাথে তখনকার তরুন সেক্টর কমান্ডার দের যুদ্ধ কৌশল নিয়ে কয়েকবার মতবিরোধ হয়। মেজর জিয়া, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর জলিলসহ সেক্টর কমান্ডাররা তো একবার জেনারেল ওসমানীর নেতৃত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন। এর ফলে ওসমানী তখন পদত্যাগও করেছিলেন। যদিও পরে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের অনুরোধে আবারও সেনাপতির দায়িত্ব নেন। কিন্তু আবারো মেজর জলিলের গেরিলা যুদ্ধকৌশল নিয়ে দুজনের দন্দ্ব দেখা দেয়। জলিলের ‘হিট & রান’ (আঘাত করেই পলায়ন) পদ্ধতি পছন্দ ছিল না জেনারেল ওসমানীর। কলকাতায় ডেকে জলিলকে এরকম ছোটখাটো গেরিলা আক্রমণ এর বদলে জোড়ালো সম্মুখ আক্রমণ এর নির্দেশ দেন ওসমানী। কিন্তু জলিল সে নির্দেশ না মেনে গেরিলা আক্রমণই অব্যহত রাখেন। এবং ওসমানীকে টপকিয়ে ভারতীয় বাহিনীর সম্মতি আদায় করে নেন। কিছুদিন পরে মেজর জলিলের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা পারুলিয়া ব্রিজ ধ্বংস করে মুক্তিযোদ্ধারা। নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্রিজ ধ্বংসে ক্ষুব্ধ হয়ে জেনারেল ওসমানী সেক্টরের কমান্ডার মেজর জলিল, সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন হুদা এবং অপারেশনের নেতৃত্বে থাকা ক্যাপ্টেন বেগকে সকলের সামনে তিরস্কার করেন। ব্রিজ ধ্বংসের কারন বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেও জেনারেল ওসমানী কোন কথা শোনেন নি।

মেজর জলিল
জেনারেল ওসমানী ও মেজর জলিল

এর কিছুদিন পরেই মেজর মঞ্জুরকে যশোর সদর দপ্তর থেকে ৮ নং সেক্টরের পাশাপাশি ৯ নং সেক্টরও দেখতে বলা হয়। মেজর জলিল তার গেরিয়া যুদ্ধ কৌশল ও সাহসিকতার জন্য  ভারতীয় বাহিনীর কাছে বেশ আস্থাভাজন ছিলেন। এমনকি ১৯৭১ সালের মে মাসে সুন্দরবনে পাকিস্তানি বাহিনীর হঠাৎ আক্রমনে দুই লঞ্চ ভর্তি অস্ত্র ও গোলাবারুদ নষ্ট হয়ে যায় মুক্তিবাহিনীর। এতে প্রাথমিকভাবে কেউ কেউ মেজর জলিলকে সন্দেহ করলেও জেনারেল অরোরা ও দলবীর সিং এর আস্থা ও আশ্বাসে কোন অভিযোগ আনা হয় নি। বরং দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ মেজর জলিলকে পাকিস্তান বাহিনীর আত্নসমর্পন পর্যন্ত কলকাতা থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী ৯নং সেক্টর মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে রাখা হয় যেখানে বেশ কিছু সেক্টরে অধিনায়কে রদবদল হয়েছে। হয়ত এ কারনেই জলিলকে সরাসরি অপসারণ না করে মেজর মেজর মঞ্জুরকে ব্যবহার করলেন জেনারেল ওসমানী।

কিন্তু কিছু ভুল বুঝাবুঝিতে এই বদলের পরিনাম ভালো হয়নি। যশোরে পরাজিত পাক বাহিনী খুলনায় এসে প্রতিরোধ গড়ে তুললে মেজর মঞ্জুর তার বাহিনী নিয়ে খুলনা আসে এবং দুই সেক্টর মিলে শিরোমণির ভয়াবহ ট্যাংক যুদ্ধে অসীম সাহসিকতার সাথে লড়ে পাকিস্তান বাহিনীকে পরাজিত করে।

শিরোমণির ট্যাংক যুদ্ধ ও মেজর মঞ্জুরের বীরত্ব সম্পর্কে জানতে এই লিংকের লেখাটা পড়ে দেখতে পারেনঃ

‘শিরোমণি ট্যাংক যুদ্ধ’-মুক্তিযুদ্ধের যে যুদ্ধের কথা পড়ানো হয় ৩৫টি দেশে

খুলনা জয়ের পর মেজর জলিল তার ৯ নং সেক্টরের বাহিনী নিয়ে খুলনা শহীদ হাদিস পার্কের উত্তরে ইউনাইটেড ক্লাবে অবস্থান নেন। মেজর মঞ্জুর খুলনা সার্কিট হাউজে আসেন। মেজর মঞ্জুর মেজর জলিলকে ডেকে পাঠান। সেসময় মেজর জলিল একটি পত্রিকায় সাক্ষাতকার দিচ্ছিলেন। ফলে তিনি জানান পরে আসবেন তিনি। এতে মেজর মঞ্জুরের অহংবোধে আঘাত লাগে। ক্ষিপ্ত মঞ্জুর মেজর জলিলকে হুমকি দিয়ে যান এর পরিনাম ভাল হবে না।

পরদিন মেজর জলিল খুলনা থেকে বরিশাল যান। ২ দিন পর বরিশাল থেকে খুলনা ফিরে এসে দেখেন তাকে সেক্টর কমান্ডার এর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে মেজর জয়নাল আবেদিনকে কমান্ডার এর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

জলিল তার সহযোদ্ধাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব না আসা পর্যন্ত চুপচাপ থাকবেন তারা। এদিকে ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানিদের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্র নিয়ে যেতে চাইলে জলিল বাধা দেন। তিনি বলেন সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর মতামত না পাওয়া পর্যন্ত কোন অস্ত্র কেউ নিয়ে যেতে পারবে না। এ নিয়ে ভারতীয় বাহিনীর সাথে কথা কাটাকাটি হয় ।

কিছুক্ষণ পর মেজর মঞ্জুর ফোন করে জানান জেনারেল ওসমানী সকল সেক্টর কমান্ডারদের নিয়ে জরুরী মিটিং করবেন ঢাকায়। যশোর থেকে মেজর মঞ্জুরের জন্য একটা বিমান যাবে, মেজর জলিলও যেন একসাথে সেই বিমানে যায়। কিন্তু মেজর জলিল জানিয়ে দেন সে তার সঙ্গীদের নিয়ে সড়ক পথে যাবে। এবারো মেজর জলিলের এই সিদ্ধান্তে চরম অপমানিত হলেন মেজর মঞ্জুর।

এরপর মেজর মঞ্জুর ও জেনারেল ওসমানীর কি কথা হয়েছিল সেটা জানা যায়নি। শুধু আমরা জানতে পারি মেজর জলিল সহ তার সঙ্গীদের রাস্তায় গতিরোধ করে অস্ত্রের মুখে আটক করে নিয়ে আসা হয়।

এর পিছনে জেনারেল ওসমানী ও মেজর মঞ্জুরের ইগো বা অহংবোধই মূল কারন নাকি অন্য কোন বড় কারন আছে সেটাও পরিষ্কার জানা যায় না।

তবে দুঃখের বিষয় এই বীর মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ গুলোর মধ্যে একটা অভিযোগ ছিল লুটতরাজের। একজন সেক্টর কমান্ডারের বিরুদ্ধে আনা এরকম অভিযোগ আমাদের জন্য সত্যি লজ্জার।

মেজর জলিলের ও তার সঙ্গীদের ব্যাগ ও ট্র্যাংক একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ভাঙা হয়। কিন্তু আফসোস তাদের ব্যাগে কোন টাকা পয়সা , স্বর্ণালঙ্কার কিছুই ছিল না। মেজর জলিলের ব্যাগে পাওয়া গেল শুধু গেরিলা যুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন বই! পরে ম্যাজিস্ট্রেট বলেছিলেন- আমাকে বলা হয়েছিল এসব ব্যাগে লুট করা টাকা পয়সা ও সোনার অলংকার আছে! এরা খুলনা থেকে লুট করে ঢাকা নিয়ে যাচ্ছিল!

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরলেন। মেজর জলিলকে ঢাকায় আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে আসা হলো। বাকি সঙ্গীদের ছেড়ে দেয়া হলো। বঙ্গবন্ধুর সামনে জেনারেল ওসমানী সকল সেক্টর কমান্ডারদের নামের তালিকা জমা দিলেন। কিন্তু সে তালিকায় ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডারের নামের স্থানে ছিল মেজর জয়নাল আবেদিনের নাম। একজন বীর সৈনিকের বীরত্ব, নিবেদনের কথা পুরোটা জানা হলো না বঙ্গবন্ধুর!

মেজর জলিল হয়ে রইলেন একমাত্র খেতাব বিহীন সেক্টর কমান্ডার! স্বাধীন দেশের প্রথম রাজবন্ধী হতে হলো পাকিস্তান বাহিনীর মেজর পদের চাকুরীতে ফিরে না গিয়ে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করা বীর সৈনিককে!

এখানেই শেষ নয়, মেজর জলিলের জীবনের এর পরেও রয়েছে কয়েকবার জেলে যাওয়া, ফাঁসির হুকুম শোনার মত ট্র্যাজেডি। আছে জাসদকে প্রতিষ্ঠা করা, নির্বাচন করা, জাসদের সভাপতি থেকে সরে এসে ইসলামী রাজনীতি শুরু করার মত ঘটনা। এগুলো জানাবো পরের পর্বে।

(চলবে…)

 তথ্য সংগ্রহ, সংকলন ও লেখাঃ আসিফ আল রাজীব 

1 মন্তব্য

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে