মুক্তিযুদ্ধের ৯ম সেক্টরের সুন্দরবন সাব-সেক্টর কমান্ডার, সুন্দরবনের ‘মুকুটহীন সম্রাট’ বলে খ্যাত মেজর (অবঃ) মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন আহমেদ, বীরউত্তম শুক্রবার (২৮ জুলাই) সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।
জিয়াউদ্দিন আহমেদ ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭১ সালে মেজর হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জুলাই মাসে পাকিস্তান থেকে ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে সাহসী অবদানের জন্য জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান ‘বীরউত্তম’ উপাধিতে ভূষিত হন। এছাড়া তার বীরত্বপূর্ণ অবদানে স্থানীয়ভাবে তাকে সুন্দরবনের ‘মুকুটহীন সম্রাট’ উপাধি দেয়া হয়। চাকরিতে থাকা অবস্থায় ১৯৭৪ সালে একটি পত্রিকায় কলাম লেখায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে সেনাবাহিনী থেকে চাকরীচ্যুত করা হয়।
তিনি কর্ণেল তাহেরের বিপ্লবের মন্ত্রে আকৃষ্ট হয়ে ৭ নভেম্বরের সিপাহি বিপ্লবে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এরপর সামরিক সরকারের অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার কর্ণেল তাহেরের বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার পক্ষে অবস্থান নেন। ১৯৭৬ সালে সুন্দরবন থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সামরিক আদালতের বিচারে কর্ণেল তাহেরের ফাঁসি ও জিয়াউদ্দিন আহমেদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আন্দোলনের ফলে ১৯৮০ সালে তিনি মুক্তি পান।
১৯৮৪ সাল থেকে তিনি সুন্দরবন এলাকায় মৎস ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৮৯ সালে পিরোজপুর পৌরসভার চেয়ারারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর এ এলাকায় জেলেদের সাথে নিয়ে ডাকাতদের প্রতিহত করতে সক্রিয় হন। ফলে বিভিন্ন সময় ডাকাতরা ক্ষিপ্ত হয়ে তার উপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে। একাধিকবার তিনি হামলার শিকার হয়ে আহতও হোন।
প্রসঙ্গত, গত ১ জুলাই মেজর জিয়াউদ্দিন অসুস্থ হলে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষায় ধরা পড়ে তার দুটি কিডনি অচল ও লিভারের অবস্থা খারাপ। পরে তাকে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়।
মেজর জিয়াউদ্দিনের কবিতাঃ মেজর জিয়াউদ্দিনের লেখালেখির অভ্যাস ছিল। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও সুন্দরবন নিয়ে ‘সুন্দরবন সমরে ও সুষমায়’ নামে তার একটি বই আছে। কর্ণেল তাহের ফাঁসির আগে মেজর জিয়াউদ্দিনের নিচের কবিতা পাঠ করেন…
জন্মেছি সারা দেশটাকে কাঁপিয়ে তুলতে
কাঁপিয়েই গেলাম,
জন্মেছি পৃথিবীর বুকে পদচিহ্ন আঁকব বলে
এঁকেই গেলাম।
জন্মেছি মৃত্যুকে পরাজিত করব বলে
করেই গেলাম,
জন্ম আর মৃত্যুর দুটো বিশাল পাথর
রেখে গেলাম।
সেই পাথরের নীচে শোষক আর শাষকের
কবর দিলাম।
পৃথিবী অবশেষে এবারের মত বিদায় নিলাম।