যেন নিজের জীবনের গল্প নিয়েই নাটক

0
আনিসুল হক

ঢাকার এক ক্ষয়িষ্ণু সম্ভ্রান্ত পরিবার। আলেয়া চৌধুরী এই পরিবারের শেষ প্রতিনিধি। একসময় চৌধুরীবাড়ির সামনে দিয়ে মানুষ জুতা পায়ে হেঁটে যাওয়ার সাহস করেনি। সেই পরাক্রম আর শৌর্য এখন আর অবশিষ্ট নেই। একান্নবর্তী এই পরিবারের ছেলেরা সময়ের প্রয়োজনে মন দিয়েছে গার্মেন্টস ব্যবসায়।

শ্বশুর আলয় মধুর আলয়
নাটকের একটি দৃশ্য

বাবলু বড় ছেলে। আদুরে স্ত্রী বুলবুলি, আর দুই ছেলেমেয়ে পাইলট আর ভোরকে নিয়ে তার গোছানো সংসার। একই বাড়িতে থাকে ছোট ছেলে মাবলু। স্ত্রী মুক্তার কূটনামোর প্যাঁচ সামলাতে যার কেটে যায় পুরোটা সময়। শিউলি বড় মেয়ে। চৌধুরী পরিবারের ঐতিহ্য অনুসরণ করে তার স্বামী শাহেদ ঘরজামাই থাকে একই বাড়িতে। বাড়ির ছোট মেয়ে টগর এমন কাজ করেছে, যা পরিবারের ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না। সে হাসিব নামে এক গানপাগল ছেলেকে ভালোবাসে। এদিকে আলেয়া চৌধুরী টগরের জন্য নিজের পছন্দমতো কলিম আলী নামের এক ছেলেকে ঠিক করে। সমস্যার শুরু এখানেই। নানা হাস্যরসাত্মক কাণ্ড, আবার কখনো কখনো নিষ্ঠুর বাস্তবতায় গল্প এগোতে থাকে চৌধুরী পরিবারের।
আনিসুল হক

একটি নাটকের গল্প। নাম ‘শ্বশুর আলয় মধুর আলয়’। লিখেছেন আনিসুল হক। পরিচালনা করেছেন আলভী আহমেদ। আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবনে ধারাবাহিকটির পরিচিতি উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে নাগরিক টিভি। এখানে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুন নূর তুষার, অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান কামরুজ্জামান বাবু, নাট্যকার আনিসুল হক, ডিরেক্টরস গিল্ডসের সভাপতি গাজী রাকায়েত ও প্রথম আলোর সাংবাদিক জাহীদ রেজা নূর। নাটকের অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দিলারা জামান, শহীদুজ্জামান সেলিম, হিল্লোল, রাহুল আনন্দ, মৌটুসী বিশ্বাস, প্রভা ও অপর্ণা ঘোষ। শুরুতেই সদ্যপ্রয়াত সাংবাদিক জুটন চৌধুরীর স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

আব্দুন নূর তুষার বলেন, ‘নাগরিক টিভি নিজেকে দেশের বর্তমান কোনো চ্যানেলকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে না। নাগরিক টিভির লড়াই বিদেশি আকাশ সংস্কৃতির সঙ্গে।’ টিভি দর্শকদের চাহিদা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের দর্শকেরা অন্য দেশের চ্যানেল দেখেন, কিন্তু পাশের বাড়ির ছেলেটি বা মেয়েটির সঙ্গে তাদের ভালোবাসা হয়। তাই নাগরিক টিভি আমাদের নিজেদের জীবনের গল্প এ নাটকে তুলে ধরেছে, যা দর্শক অবশ্যই গ্রহণ করবে।’

সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন কামরুজ্জামান বাবু। তিনি সঞ্চালনার ফাঁকে ফাঁকে নাটক তৈরির পেছনের নানা গল্প তুলে ধরেন। নাটকের অংশবিশেষ দেখে নিজের ভালো লাগার কথা জানান জাহীদ রেজা নূর। তিনি বলেন, ‘নাটকটি তাঁর কাছে সাবলীল লেগেছে। নাটকে আমাদের জীবনের গল্পই উঠে এসেছে, অন্য দেশের ধারাবাহিক নাটককে অনুকরণ করা হয়নি।’ এ জন্য তিনি নাটকের লেখক, কলাকুশলী ও নাগরিক টিভিকে ধন্যবাদ দেন।

গাজী রাকায়েত বলেন, ‘শ্বশুর আলয় মধুর আলয়’ দেখে তাঁর কাছে এটি নিছক কমেডি নাটক মনে হয়নি। সংলাপের গভীরতা এবং কলাকুশলীদের অভিনয় দক্ষতার জন্য তিনি লেখক আনিসুল হকসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আরও বলেন, ‘ধারাবাহিক নাটক আবারও কীভাবে জনপ্রিয় করা যায়, তা সবাইকে নতুন করে ভাবতে হবে। দর্শক আমাদের নাটক না দেখার কারণ হিসেবে তিনি ইন্ডাস্ট্রির বিশৃঙ্খলাকে দায়ী করেন।’

আনিসুল হক বলেন, নাটকের সফলতার পেছনে লেখকের চেয়ে পরিচালকের ভূমিকা বেশি। তিনি নাটকটির পরিচালক আলভী আহমেদকে ধন্যবাদ জানান, কারণ তিনি নিজ গুণে নাটকটি চমৎকার করে তুলেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, যেহেতু দর্শক নাটকে নিজের জীবন দেখতে পাবেন, তাই তাঁরা নাটকটি অবশ্যই গ্রহণ করবেন।

আগেই জানানো হয়েছে, আগামী ১ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে সম্প্রচার শুরু করছে নাগরিক টিভি।