রমজান পণ্যের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০টাকা

0
রমজান পণ্য

রমজান আসতে এখনও সপ্তাহ দেড়েক বাকি। এরইমধ্যে তার প্রভাব পড়েছে বাজারে। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে বেড়েছে রমজান কেন্দ্রিক পণ্যের দাম। গড় হিসেবে দেখা গেছে প্রতিকেজি পণ্যে ২০ টাকা করে বেড়েছে। যা অস্বস্তিতে ফেলেছে বাজার করতে আসা ক্রেতাদেরকে। বরাবরের মতো খুচরা বিক্রেতারা দাম বাড়ার জন্য পাইকারদের দুষছেন। আর পাইকাররা এটাকে বাজারের স্বাভাবিক নিয়ম হিসেবেই দেখছেন।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও হাতিরপুল বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজানকেন্দ্রিক পণ্যের সঙ্গে পল্লা দিয়ে বেড়েছে মসলা জাতীয় কিছু পণ্যের দামও। বাজারে দেশী পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি। যা মাত্র এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা কেজি। পিয়াজের কেজিতে দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। একইভাবে বাজারে সপ্তাহ খানেক আগে যে আদা বিক্রি হতো ৭৫ টাকা সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ৪৫ টাকা। আদার সঙ্গে পল্লা দিয়ে বাজারে দাম বেড়েছে রসূনেরও। সপ্তাহ খানেক আগে যে রসূন ৭৫টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা। দাম বাড়ার এ তালিকায় আছে আলুও। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি আলুর দাম ৫ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা দরে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী প্রদীপ ঘোষ বলেন, রমজান মুসলমানদের বার্ষিক ধর্মীয় উৎসবের অংশ। এটিকে সামনে রেখে পণ্যমূল্য এতোটা বাড়ানো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। আসলে ব্যবসায়ীরা সুযোগ খুঁজেন অতি মুনাফা করার। তাই কারণ না থাকলেও পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এ ব্যাপারে সরকারকে আরো বেশি কঠোর তদারকি করতে হবে।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সরকার এবং ব্যবসায়ীরা বলছেন এবার বাজারে পণ্যের মজুদ পর্যাপ্ত। দাম কমবে না। কিন্তু এরইমধ্যে যদি দাম বেড়ে যায়, তবে সেটা খুবই অযৌক্তিক হবে। তবে বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার জন্য ভোক্তার আচরণও অনেক ক্ষেত্রে কাজ করে। ভোক্তারা যদি একই সময় এক সাথে বেশি পণ্য ক্রয় করে তবে সে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এছাড়া গত কয়েক দিন বৃষ্টি ও সপ্তাহ খানেক সরকারি ছুটি থাকার কারণে ভারত থেকে অনেক পণ্য আসতে দেরী হয়েছে। বাজারে তার প্রভাব পড়তে পারে। কিন্তু যে প্রভাবেই হোক আশা করবো এবার রমজানে পণ্যের দাম বাড়বে না। সরকার যথাযথ তদারকি করবে।

মসলা জাতীয় পণ্যের এ দাম বাড়ার ছোঁয়া লেগেছে রমজানে অধিক ব্যবহৃত পণ্যেও। পণ্যগুলোর দাম ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র দামের চেয়ে ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা বেশি। টিসিবি খেজুরের মূল্য তালিকায় প্রতিকেজি ১২০ টাকা করলেও বাজারে তা ১৪০ টাকা থেকে ১৫০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

দাম বাড়ার তালিকায় আছে ছোলাও। টিসিবির ছোলা প্রতিকেজি ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বাজারে ছোলা বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এ পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা।

টিসিবির সয়াবিন তেল প্রতিকেজি ৮৫ টাকা ধরা হলেও বাজারে তা কেজিপ্রতি ৯০টাকা থেকে ১০৫ টাকা। বাজারে বোতলজাত ৫ লিটারের তীর সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৫১০টাকা। রূপচাঁদা সয়াবিন ৫ লিটার বিক্রি হচ্ছে ৫৩০ টাকা। খোলা সয়াবিন প্রতিকেজি ৯০ টাকা।

একইভাবে টিসিবি মসুর ডাল প্রতিকেজি ৫৫ টাকা বিক্রি করছে। আর বাজারে প্রতিকেজি দেশী মুসুর ডাল ৯০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান ৭০ টাকা কেজি দের বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবি খোলাবাজারে প্রতিকেজি চিনি ৫৫ টাকা বিক্রি করেছে। বাজারে সাদা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা। তবে প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। আর সরকারি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭০টাকা।

রাজধানীর হাতিরপুল আতিক স্টোরের বিক্রেতা আরমান বলেন, দাম বাড়ার কারণ নেই। একটাই উদ্দেশ্য সামনে রমজান। তবে রমজানে অহেতুক দাম বাড়লে যত কষ্ট আমাদের মতো খুচরা ব্যবসায়ীদের। আমাদের কিনতে হয় বেশি দামে। আবার বিক্রির বেলায় পড়তে হয় জবাব দিহিতায়। বেশি দামে বিক্রি করলেই আমাদের জরিমানা গুণতে হয়। রমজানের আগে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম কম-বেশি বেড়েছে। এখন আমাদেরও তো সে অনুযায়ী বিক্রি করতে হবে। এখানে আমাদের মতো খুচরা ব্যবসায়ীদের কোনো দোষ নেই। টিসিবি বলেন, আর সিটি কর্পোরেশন বলেন, তাদের বেঁধে দেওয়া দামে পণ্য বিক্রি করলে আমাদের এক সপ্তাহের মধ্যে পথে নামতে হবে। পণ্যমূল্য ঠিক রাখতে হলে পাইকার পর্যায়ে ঠিক রাখতে হবে।

খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন আখ্যা দিয়ে রাজধানীর শ্যামবাজার রুনা বাণিজ্যালয়ের স্বত্ত্বাধিকারী পাইকারী বিক্রেতা ইলিয়াস হোসেন বলেন, পণ্যমূল্য উঠানামা করবে এটা বাজারের ধর্ম। হুট করে কিছু পণ্যে দাম বেড়েছে। এটা আবার কমে যাবে। তবে পেয়াজ ও আদার দাম বাড়ার কারণ হলো- ভারতে ক্যারালা আদার দাম বেড়েছে। ওই দেশে দাম বাড়ার প্রভাব বাংলাদেশে পড়েছে। আর পিয়াজের যে দাম বেড়েছে তা আবার কমে যাবে বলে মনে করছি। রসুন ইন্ডিয়ানটা কিছুটা বাড়লে তা খুব বেশি নয়।

টিসিবির পণ্যমূল্যের সঙ্গে বাজারের পণ্যমূল্যের এতো বেশি ব্যবধানের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র পরিচালক মো. রুহুল আমিন খান বলেন, টিসিবির পণ্য বাজারে ছাড়া হয় বাজারকে স্থিতিশীল ও সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য। এখন যদি টিসিবির পণ্যমূল্যের চেয়ে বাজারের পণ্যমূল্যের ব্যবধান যদি খুব বেশি হয় তবে টিসিবির লক্ষ্য অর্জন হচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘বাজারে টিসিবির চেয়ে পণ্যমূল্য বেশি অথচ ডিলাররা বলছে বাজারের দামের সঙ্গে টিসিবির দাম নাকি সমান হয়ে গেছে। যে কারণে ডিলারদের অনেকে পণ্য নিচ্ছে না। তবে (রোববার) থেকে টিসিবির পণ্য ডিলারদের মাধ্যমে দেমের জেলা পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। আশা করি দাম স্থিতিশীল হয়ে যাবে।’