কক্সবাজার শহর থেকে ৪৭ কিলোমিটার দূরে, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের পাশে উখিয়ার কাস্টমস ঘাট এলাকায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের সম্প্রচার উপকেন্দ্র রয়েছে। কেন্দ্রের বিপরীতে রাবার বাগানে আশ্রয় নিয়েছে কমপক্ষে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রের মূল ফটকের সামনেও দাঁড়িয়ে ছিল শত শত রোহিঙ্গা। গাড়ি দেখলেই তারা ছুটে যাচ্ছিল ত্রাণের আশায়।
মিয়ানমারের থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা উখিয়ার কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় পায়নি, তাদের একটি অংশ রাবার বাগানে আশ্রয় নিয়েছে। অনিবন্ধিত শিবির থেকে কেন্দ্রটি তিন কিলোমিটার দূরে।
সড়কের পাশে ত্রাণের আশায় দাঁড়িয়ে থাকা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পাগলিরবিল গ্রাম থেকে আসা দিলশাদ বেগম বলেন, সকাল সাতটা থেকে তিনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। খিদার জ্বালায় তাঁর দুই শিশুসন্তান কান্নাকাটি করছে। রাতে বৃষ্টিতে ভিজে এক ছেলের জ্বর হয়েছে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।
দিলশাদের একটু দূরে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করছেন রাখাইনের ফকিরাবাজার থেকে আসা রোহিঙ্গা নারী সখিনা খাতুন। পাশে তাঁর শিশুসন্তান। তিনি বলেন, এক লোকের দেওয়া ২০ টাকায় কলা আর বিস্কুট খাইয়েছেন শিশুকে। তিনি বলেন, চার দিন ধরে কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরে ঢোকার চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু সুযোগ পাচ্ছেন না। সেখানে কোনো ঘর খালি নেই। এই চার দিন তিনি কাটিয়েছেন গাছের নিচে। ছয় দিন আগে তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে তিনি রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে উখিয়ায় এসেছেন।
বেলা দুইটার দিকে টেলিভিশন উপকেন্দ্র থেকে সাত কিলোমিটার দূরে বালুখালী অনিবন্ধিত শিবির এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশমুখে দাঁড়িয়ে সহায়তা চাইছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রোহিঙ্গা যুবক সাদেক আহমদ। বললেন, দুই দিন ধরে না খেয়ে আছেন।
বালুখালী অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জামাল হোসেন বলেন, তিনটি অনিবন্ধিত শিবিরে নতুন করে ঢুকেছে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা। শিবিরে থাকার জায়গা না পেয়ে প্রধান সড়ক ও পাশের পাহাড়-জঙ্গলে অবস্থান করছেন আরও ৭০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা। ৩০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা চলে গেছে কক্সবাজার শহরের দিকে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের চাপ থেকে উখিয়া উপজেলার পাঁচ লাখ বাসিন্দাকে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। উপজেলার সামাজিক নিরাপত্তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ফ্যাক্স ও ই-মেইলে গত বৃহস্পতিবার স্মারকলিপি পাঠান তাঁরা। স্মারকলিপিতে সই করেন উখিয়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা।
স্মারকলিপিতে জনপ্রতিনিধিরা চার দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখায় একসঙ্গে রাখা; সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য, পানীয়, বস্ত্র ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ও নজরদারি বাড়ানো; রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ এবং রাখাইন রাজ্যে চলমান গণহত্যা বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন এ বিষয়ে বলেন, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের একসঙ্গে এক জায়গায় রাখা, তালিকা তৈরি, গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলাসহ সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি করে সীমান্ত আরও সুরক্ষার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।