রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টয়লেট ও পানির তীব্র সংকট

0
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টয়লেট ও পানির তীব্র সংকট

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে প্রাণ বাঁচতে আশ্রয় নিয়েছে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এদের জন্য বিভিন্ন ক্যাম্পে নির্মাণ করা হয়েছে ইমারজেন্সি টয়লেট ও পানির জন্য বসানো হয়েছে টিউবওয়েল। কিন্তু ইমারজেন্সি টয়লেট ও টিউবওয়েল চাহিদার  তুলনায় অনেক কম। এছাড়া টয়লেটগুলোতে স্যুয়ারেজ না থাকায় এরই মধ্যে অকেজো হয়ে গেছে অনেক টয়লেট। এ কারণে আগামী ছয় মাসের মধ্যে ব্যাপক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, একে তো স্যুয়ারেজ নেই, তার ওপর বিভিন্ন জায়গায় একটা মাত্র রিং দিয়েও টয়লেট বানানোয় এক মাসেই ক্যাম্পের আশপাশের পরিবেশ দূষিত হতে শুরু করেছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টয়লেট ও পানির তীব্র সংকট

এর আগে গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি তথ্যমতে, প্রায় ১০ হাজারের বেশি টয়লেট নির্মাণ করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট কমিটি (ব্রাক) ১০ হাজার ৩৯৫টি টয়লেট ও এক হাজার ৮৪টি টিউবওয়েল স্থাপন করেছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের জরুরি সহায়তার কাজে সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) ১৭ হাজার টয়লেট ও ১১ হাজার টিউবওয়েল স্থাপন করেছে।

সরেজমিন কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, থ্যাংখালী, পালংখালী, টেকনাফের নয়াপাড়া ও লেদা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন স্বাস্থসেবা কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি শরণার্থী শিবিরে ৩০ থেকে ৫০টি পরিবারের জন্য ৩ থেকে ৫টি টয়লেট। তবে প্রতিদিনই নতুন নতুন রোহিঙ্গা ডেরা তৈরি হলেও বাড়ছে না লেট্রিন। নারীরা লাইন করে টয়লেটে গেলেও পুরুষ ও শিশুরা মলমূত্র ত্যাগ করছে যেখানে-সেখানে। তাই দুর্গন্ধে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

থ্যাংখালী ক্যাম্পে চার সন্তান নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় ঠাঁই হয়েছে বিধবা তাসলিমার। তাসলিমা যুগান্তরকে বলেন, সকাল থেকে রাত অবধি টয়লেটে লাইন ধরে লোক দাঁড়িয়ে থাকে। বাচ্চারা খোলা জায়গায় টয়লেট করলেও নারীদের ক্ষেত্রে টয়লেটের বিকল্প নেই। এছাড়া বেশিরভাগ টয়লেটের স্যুয়ারেজ লাইন না থাকায় অকেজো হয়ে পড়েছে।

ওই বিধবা রোহিঙ্গা নারী আরও জানান, শুধু টয়লেটই নয় পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে। যেসব টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে, তার বেশিরভাগই পানি ওঠে না। এছাড়া যে পানি পাওয়া যায় তার রঙ লাল বর্ণের, খাওয়ার উপযোগী নয়।

রাখাইনের মংডু ছালিপাড়া থেকে কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া ১১ সন্তানের জনক সৈয়দ ইসলাম বলেন, ক্যাম্পে ল্যাট্রিন ও পানির তীব্র সংকট। পুরুষরা জঙ্গলে টয়লেটের কাজ সারলেও নারী ও শিশুরা বিপাকে পড়েছে।

টয়লেট ও পানির  বিষয়ে বাংলাদেশ রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট কমিটির (ব্রাক) বিশেষজ্ঞ, মিডিয়া ডেভেলপমেন্ট এবং অ্যাডভোকেসি মামুনুর রশিদ যুগান্তরকে বলেন, প্রতিটি  ক্যাম্পে প্রয়োজনের তুলনায় টয়লেট ও পানির  সংকট রয়েছে। এছাড়া অনেক টয়লেট এরই মধ্যে অকেজো হয়ে গেছে। এসব টয়লেটে স্যুয়ারেজ লাইন না থাকায় পরিবেশ বিপর্যয়ের শংকা  রয়েছে।

রোহিঙ্গাদের জরুরি সহায়তার কাজে সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) এক কর্মকর্তা জানায়, রোহিঙ্গাদের প্রাথমিক চাহিদা মেটাতেই এখন প্রতিদিন অন্তত পাঁচ কোটি ৯০ লাখ লিটার নিরাপদ সুপেয় পানি এবং ১৮ হাজার টয়লেট প্রয়োজন।  প্রতিদিন রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, তাই চাহিদাও বাড়ছে।

ক্যাম্পের আশপাশের পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং প্রতিষ্ঠাতা ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান যুগান্তরকে বলেন, ইমারজেন্সি টয়লেটের কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের শংকা রয়েছে। আর চলমান এই বৃষ্টির কারণে সয়লাব হবে পুরো এলাকা।  এছাড়া এই টয়লেটগুলোর কারণে সংক্রামণ ব্যাধি যেমন-কলেরা, টাইফয়েড, আমাশা, জন্ডিস ইত্যাদি রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে ভয়াবহ আকারে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের এই নেতা বলেন, রোহিঙ্গা সংকট বড় ধরনের একটি মানবিক বিপর্যয়। এটি বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ। তাই সব সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারেরর পাশাপাশি সহয়তাকারী সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে