রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ : গভীর সংকটে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

1
রোহিঙ্গা

২৫ আগস্ট সীমান্ত এলাকা মংডু ও রাথেডংয়ের পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করে মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ৯ সদস্যকে হত্যার অভিযোগ ওঠে আরসার (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি) বিরুদ্ধে। আর এরই সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে রোহিঙ্গা নিধন শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
আরসার ভাষ্যমতে ২৫ আগস্টের হামলা ছিল ‘আত্মরক্ষামূলক’ এবং রোহিঙ্গাদের অধিকার ফিরে পাওয়া পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলবে বলে ‘ আরসা ‘ঘোষণা করেছে। ২০১২ সালের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিক্রিয়া থেকেই আরসার জন্ম বলে বিশেষ সাক্ষাৎকারে জানান সংগঠনের মুখপাত্র ‘আতাউ উল্লাহ’। তিনি বলেন, আরসা ধর্মভিত্তিক নয়, জাতিগত অধিকারভিত্তিক সংগঠন।

আর দশজনের মতো আমি নিজেও ভীষণ আশাবাদী হয়েছিলাম যে রোহিঙ্গারা স্বাধীনতার আন্দোলনে নেমেছে । কিন্তু একটু গভীর পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেলো – এই আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি) মূলত বাংলাদেশ বিরোধী একটি সংগঠন ।

এই আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি নামক তথাকথিত মুক্তিকামী সংগঠনটি আদৌ কি রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনরত , নাকি পাকিস্তান এবং চীনের যৌথ প্রযোজনার ফসল – সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ পোষণ করছি । আরসার প্রধান আতা উল্লাহ আবু আম্মার এর জন্ম পাকিস্তানের করাচিতে। আতাউল্লাহ এর বাবা ছিল রাখাইনের বাসিন্দা। রাখাইন থেকে পাকিস্তান এবং এরপর পাকিস্তান থেকে পরিবারসাহ সৌদি আরব চলে যায়। আতা উল্লাহ জেহাদী ট্রেণিং নিয়েছে পাকিস্তান ও সৌদিআরব থেকে। আরসার সদর দপ্তর সৌদি আরবে।
আরসা খুব সুচিন্চিত পদ্ধতিতে পাকিস্তানের গ্রীণ সিগন্যাল পেয়েই মিয়ানমারের সামরিক ও পুলিশ চৌকিতে হামলা চালিয়েছে ।

প্রশ্ন হচ্ছে পাকিস্তান এবং চীনের কি লাভ আরসার জন্ম দিয়ে ?

পাকিস্তানের লাভ হচ্ছে বাংলাদেশের আভ্যন্তরে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের সাথে জেহাদী জঙ্গী প্রবেশ করিয়ে বাংলাদেশকে অস্হিতিশীল করে তোলা । ( ১৯৭১ এর দগদগে ক্ষত তারা এখোনো ভুলতে পারেনি ) বর্তমান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি তুলনামূলক ভারত কেন্দ্রিক ও নতজানু হবার দরুণ পাকিস্তান ও চীন একজোট হয়ে জন্ম দিয়েছে ‘আরসা’র । এতে মূলত লাভ –

প্রথমত – বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ করানো , সাথে বিশাল মিলিশিয়া গ্রুপ বা জেহাদী জঙ্গীরা বাংলাদেশে প্রবেশ করবে । এদেশের দক্ষিনাণ্চল অস্হিতিশীল করে তুলবে ।
দ্বিতীয়ত – মিয়ানমারের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হচ্ছে একারণে আরাকানের রোহিঙ্গাদের জাতিগত নির্মূল করে সেখানে গভীর সমুদ্রবন্দরে বিনিয়োগ করে বঙ্গোপসাগরের বিশাল এলাকায় কর্তৃত্ব স্হাপন করতে মরিয়া চীন এবং পাকিস্তান ।
তৃতীয়ত – বাংলাদেশে প্রবেশ করা রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের উপর চালাবে জঙ্গী আক্রমণ , অত:পর বাংলাদেশকে জঙ্গী রাষ্ট্রের তকমা দেয়া এবং আন্তর্জাতিক মাতবরীর দ্বারকে প্রশস্ত করাই হচ্ছে এই মিশনের মূল লক্ষ্য ।

এবার আসি ভারত প্রসঙ্গে –
চীন বাংলাদেশকে সাবমেরিন দেয়া মাত্রই ভারত মিয়ানমারকে সরবরাহ করেছে সাবমেরিন বিধ্বংসী টর্পেডো । কি বুঝলেন ? বাংলাদেশ ভারতের আন্তর্জাতিক রাজনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । ভারত আর ইসরায়েল খুব ঠান্ডা মস্তিষ্কে মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছে – পাকিস্তান ও চিনকে মোকাবেলার জন্য । মিয়ানমারে চীনের কর্তৃত্ব যাতে না বাড়ে সেজন্য মোদীর মিয়ানমার সফর ও সূচী সরকারকে সমর্থন প্রদান এটাই বোঝায় যে , বাংলাদেশকে বিপদে ফেলে ফায়দা হাসিল করাই মোদির মূল রাজনীতি । এখানেও বাংলাদেশের পাশে কেও নেই।যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সমর্থন দিচ্ছে চীন কে মোকাবিলার জন্য ।

এ উপমহাদেশে মুসলিম বিদ্বেষী সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোর জন্য সরাসরি কাজ করছে ইসরায়েল । ( বার্মিজ আর্মি যখনই রোহিংগাদের ওপর অত্যাচার শুরু করলো তার ৪ দিন পর ইজরাইল এর ডিফেন্স থেকে সব ধরনের অস্ত্র দিয়ে সাহায্যের প্রস্তাব দিলো ! )
উপমহাদেশকে অস্হির করার জন্য ইসরায়েল বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংগঠন তৈরী করছে, যেমন-
আরএসএস : ভারতের সমস্ত হিন্দু সংগঠনগুলো মাদার সংগঠন। ভারতের মুসলিমবিরোধী সাম্প্রদায়িক পরিবেশ তারাই সৃষ্টি করেছে এবং তা রাজনীতিতে তার সফল প্রয়োগও ঘটিয়েছে। এদের মূল লক্ষ্য- ১০০% মুসলিমমুক্ত অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠা করা।

rohingya crisis
রোহিঙ্গা সংকট (ছবিঃ সংগৃহিত)

৯৬৯ মুভমেন্ট :

মায়ানমারে ২০০১ সাল থেকে এ সংগঠনটি কাজ করছে। এদের উদ্দেশ্য বৌদ্ধদেরকে স্থানীয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা, গণহত্যা ঘটানো ও মুসলমানদের তাড়িয়ে দেয়া। এ সংগঠনের প্রধান হচ্ছে বৌদ্ধ ভিক্ষু আশ্বিন উইরাথু। উগ্রপন্থার দায়ে তাকে ২০০৩ সালে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১০ সালে অন্যান্য রাজবন্দির সঙ্গে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। এ বছর রোহিঙ্গা নিধন ও তাড়িয়ে দেয়া প্রমাণ করে তারা কতটুকু সফলভাবে কাজ করেছে।

বধু বালা সেনা (শ্রীলংকা) :

মায়ানমারের মত এটাও পরিচালিত হয় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দ্বারা। ২০১২ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করে বৌদ্ধ ভিক্ষু Galagoda Aththe Gnanasara। কিছুদিন আগে মুসলমানদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার জন্য এই সংগঠনের একজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। শ্রীলঙ্কা থেকে মুসলমান তাড়ানো এর প্রধান লক্ষ্য।

পাশাপাশি বাংলাদেশেও ইহুদীদের প্রভাব বিস্তার শুরু হয়েছে। বিষয়টি বুঝতে হলে আপনাকে ইসরাইলের লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদি ফেসবুক আইডিটি ঘাটতে হবে। ঘাটলেই পাবেন-
http://bit.ly/2rvGOwP
http://bit.ly/2jjTYxi
http://bit.ly/2eSL04W
http://bit.ly/2ff4P7e
http://bit.ly/2xu7e8M
http://bit.ly/2wUmQS3
http://bit.ly/2eRQexV

আমাদের এই বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি নষ্ট করে অরাজকতা তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে । হিন্দুদের প্রতীমা ভাঙ্গা , জাতিগত বিদ্বেষ ছড়াতে তারা চূড়ান্ত তৎপর । অথচ আমরা বাংলাদেশীরা কখনোই চাইনা মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ সংঘাত ।
আমরা নষ্ট করতে চাইনা আমাদের হাজার বছরের মিলেমিশে থাকার সংস্কৃতি ।
সময় এসে গেছে নতুন করে ভাববার । কি আওয়ামিলীগ , কি বিএনপি – এখন আর বিভেদের সময় নেই ।
আসেন পাক ভারত প্রীতি ভুলে যাই ।
আসেন বাংলাদেশী চেতনাকে সমৃদ্ধ করি ।
কঠিন ক্রান্তিকালে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে বিধৌত আমার আপনার সোনার বাংলাদেশ ।

 

1 মন্তব্য

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে