মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতন বন্ধের দাবিতে আজ শুক্রবার সকালে মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের খুব সুস্পষ্ট দাবি, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হোক, তাদের খাদ্য, নিরাপত্তা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। একই সঙ্গে সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করা হোক এই রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ওরা হিন্দু না মুসলিম, এটা জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন নেই। ওরা মানুষ। সেই মানবতার বিরুদ্ধে আজকে মিয়ানমার সরকার যুদ্ধ শুরু করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। আসুন আমরা আজকে জনমত সংগঠিত করে সমগ্র বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই তারা যেন এই গণহত্যা বন্ধ করে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
মিয়ানমারের বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারসমূহ বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের সীমানা লঙ্ঘন করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যখন তাদের (মিয়ানমার) বিমান আকাশ সীমা লঙ্ঘন করে তখন এই সরকার চুপ করে থাকে। এটা হচ্ছে এদের (সরকার) নতজানু পররাষ্ট্রনীতির পরিচায়ক।
বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতন বন্ধের দাবি সংবলিত নানা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড বহন করে।জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে দীর্ঘ এই মানববন্ধন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে শেষ হয় ১১টায়।
ঢাকাসহ সারা দেশে ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচি একযোগে পালনের ঘোষণা থাকলেও বিএনপির নেতারা বলেছেন, বিভিন্ন জেলায় পুলিশ এই কর্মসূচি করতে দেয়নি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা যখন মিডিয়াতে দেখি সেই নাফ নদীর তীরে শিশুদের লাশ পড়ে আছে, যখন আমরা দেখি নৌকা ডুবে শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে এবং সেই আরাকান রাজ্যের সমস্ত গ্রাম জ্বলছে, তখন আমাদের সরকার নীরব ভূমিকা পালন করেছে। আজকেও তারা (সরকার) সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে কূটনৈতিক দিক থেকে এবং মানবিক দিক থেকে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে নাই।
১৯৭৯ সালে রোহিঙ্গা সংকটের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময় একই ঘটনা ঘটেছিল, নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল। তখন তিনি তাদের আশ্রয় দিয়েছেন, খাদ্য ও চিকিৎসা প্রদান করেছেন এবং একই সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করেছেন সেই সময়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে নিতে। পরে খালেদা জিয়াও ১৯৯২ সালে যখন রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সরকারের অত্যাচারে আবার পালিয়ে চলে আসে, তখনো তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করেছিলেন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার একটি ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীকে তাদের দেশ থেকে নৃশংসতার মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে, এটা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের কাছে কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তারা নারী-পুরুষদের হত্যা করেছে, এমনকি নবজাতক শিশুকেও রেহাই দেয়নি। এই পরিস্থিতিতে আমাদের একটি মাত্র সমাধান সেটা হচ্ছে, আমরা মানবতার হাত রোহিঙ্গাদের প্রতি বাড়িয়ে দেব এবং সারা বাংলাদেশের মানুষ এ জন্য প্রস্তুত আছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দুঃখের বিষয় মিয়ানমারের এই ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। নিরাপত্তার দিক থেকে এবং মানবেতর যে অবস্থা, তার শিকার হয়েছে বাংলাদেশ। অথচ আমরা নিরাপত্তা পরিষদে এই বিষয়টি তুলতে পারিনি।
দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আজকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এই অমানবিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার অথচ সেই দেশের কাছে খাদ্য-চাল আনতে গেছেন আমাদের খাদ্যমন্ত্রী স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে। অর্থাৎ নাফ নদীর রক্তাক্ত লাশের ওপর দিয়ে কামরুল ইসলাম গেছেন মিয়ানমারে। কত বড় নতজানু এই সরকার, প্রতিবাদ করতে পারে না, তাদের কাছে অনুনয়-বিনয় করছেন।

প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরীর পরিচালনায় মানববন্ধনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী-খান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।