একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে এখনও অনড় বিএনপি। এই নির্বাচনে জনগণের রায়ের মাধ্যমে জয়ী হয়ে সরকারের সব ধরনের কর্মকাণ্ডের জবাব দিতে চায় দলটি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায়-পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় দলের নেতারা জানান, কোনোভাবেই নির্বাচনে পথ থেকে সরবে না বিএনপি। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) খালেদা জিয়ার ৫ বছরের সাজা হওয়ার পর প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে নেতারা বলেছেন, খালেদা জিয়া কোনও ধরনের সহিংসতা করতে নিষেধ করেছেন। মূলত জনমতের কথা বিবেচনা করেই এই অবস্থান নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, যেকোনও মূল্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে দলটি। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা একাধিকবার অভিযোগ করে বলেছেন, নির্বাচনে যেন বিএনপি অংশ না নেয় এ কারণেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাজার ব্যবস্থা করেছে সরকার। দলটির একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘সরকার খালেদা জিয়াকে জেল দিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভুল করেছে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে এর মাশুল গুনতে হবে। এই নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকারকে জবাব দেবে বিএনপি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাস করে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিম্ন আদালতে গেছি। আগামীতে উচ্চ আদালতেও যাবো।’
শামসুজ্জামান দুদু জানান, বিএনপি রাজনৈতিকভাবে খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দেওয়ার বিষয়টির প্রতিবাদ করবে, আইনি পথেও মোকাবিলা করবে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন থেকে বিএনপিকে দূরে রাখতেই দলের চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনের পথেই থাকবে।’
বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার মামলার রায় ঘোষণা দেওয়ার পরে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের কথা উল্লেখ করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গতকাল বুধবার (৭ জানুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনের পর আমরা যখন দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে কথা বলি, তখন আমরা জানতে চেয়েছিলাম, যদি রায় আপনার বিপক্ষে যায় তাহলে আমাদের কী ধরনের কর্মসূচি দেবো? জবাবে তিনি বলেছেন, কোনও সহিংস কর্মসূচি দেওয়া যাবে না।’
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আমাকে আপনাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা হলেও বিশ্বাস করবেন, আমি আপনাদের সঙ্গেই আছি। আপনারা গণতন্ত্র, অধিকার প্রতিষ্ঠা, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ও জনগণের সরকার গঠনের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।’
সাবেক ছাত্রনেতা, বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু আরও বলেন, ‘সরকার বিএনপিকে ভয় পায়, খালেদা জিয়াকে তো আরও বেশি ভয় পায়। নির্বাচনের আগে যদি তিনি মুক্তি নাও পান তাহলে শুধু তার ছবি বুকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবো, মানুষ ভোট দেবে। এটা বলতে পারি, পনেরো শতাংশ ভোটও নৌকায় যাবে না।’
বৃহস্পতিবার বিকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে ঠিক কী কারণে সাজা দেওয়া হলো সেটিই বিচারক আদালতে বলেননি।’ তার ভাষ্য, ‘৪০৯-এর অধীনে বিএনপির চেয়ারপারসনের সাজা হলেও এই রায়ে বলা হয়নি, কী কারণে খালেদা জিয়া দোষী সাব্যস্ত হলেন।’
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সরকার অন্যায় যেটা করলো এই জন্যই তাদের ভরাডুবি হবে। একটা সিটও পাবে না আগামী নির্বাচনে।’ বিএনপিপন্থী এই আইনজীবী বলেন, ‘আমি মনে করি, এই রায় বিএনপিকে জনসমর্থন আরও অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।’