সাইনুসাইটিস এক যন্ত্রণাদায়ক রোগের নাম! এ রোগে মাথা তীব্র ব্যথা করে, কোন কাজে মনযোগ দেয়া যায় না, কোন কিছুই ভাল লাগে না! কেন হয় এই রোগ? এর লক্ষণ কি? চিকিৎসা কি?
আমাদের মুখমন্ডলের হাড়ের ভিতরে কিছু ফাঁপা জায়গা আছে তাকে সাইনাস বলে। কোন কারণে যদি সাইনাসগুলির মধ্যে ঘা বা বা প্রদাহ হয় তখন তাকে সাইনুসাইটিস বলে।
রোগের কারণ
- দাঁত, চোখ, নাকের অসুখ থেকে সাইনুসাইটিস হতে পারে
- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা এলার্জির কারণেও সাইনুসাইটিস হয়ে থাকে
- দীর্ঘদিন ঠান্ডা লেগে থাকলে সাইনুসাইটিস হতে পারে
লক্ষণ ও উপসর্গ
- প্রচন্ড মাথাব্যথা হয়। সকালে কম থাকে, দুপুরের দিকে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায় আবার বিকেলের দিকে সামান্য কমে যায় আবার সন্ধ্যা বা রাতে তীব্র হয়।
- মাথা নাড়াচাড়া করলে, হাঁটলে বা মাথা নিচু করলে ব্যথার তীব্রতা আরো বেড়ে যায়
- জ্বর জ্বর ভাব থাকে, কোনো কিছুতেই ভালো লাগে না এবং অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যায়
- তীব্র সর্দি থাকে
- নাক বন্ধ থাকে। পরীক্ষা করলে নাকের ভেতর পুঁজ পাওয়া যেতে পারে
- সাইনাস এর এক্স রে করলে সাইনাস ঘোলাটে দেখায়।
সাইনাসের ইনফেকশন
- নাকের এলার্জি থাকলে, নাকের হাড্ডি বাঁকা থাকলে, নাকের ভেতর বাইরের কিছু ঢুকলে এবং এডিনয়েড (নাকের পেছনের টনসিল) বড় হলে
- দাঁতের ইনফেশন থেকে বা দাঁত তুলতে গিয়েও সাইনাসে ইনফেকশন হতে পারে
- সাইনাসের হাড্ডি ফেটে গেলেও এরূপ হতে পারে
- ময়লা পানিতে ঝাঁপ দিলে ঐ পানি নাকের ভেতর দিয়ে সাইনাসে ঢুকেও এ ধরণের সমস্যা তৈরি করতে পারে
- এছাড়াও অপুষ্টি, আবহাওয়া দূষণ এবং ঠান্ডা স্যাঁতসেতে আবহাওয়ায় এই রোগ বেশি হয়।
জটিলতা
সাইনাসগুলো চোখ এবং ব্রেইনের পাশে থাকে বলে সাইনাসের ইনফেকশন হলে তা চোখ এবং মস্তিষ্কেরও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন-
-
অরবিটাল সেলুলাইটিস এবং এবসেস বা চোখের ভেতরের ইনফেকশন।
- মেনিনজাইটিস বা ব্রেইনের পর্দার প্রদাহ।
- এক্সট্রাডুরাল এবং সাবডুরাল এবসেস।
- অস্টিওমায়েলাইটিস (মাথার অস্থির প্রদাহ)।
- কেভেরনাস সাইনাস থ্রম্বোসিস প্রভৃতি।
সাইনুসাইটিসের কারণে চোখের ভেতরে ইনফেকশন ঢুকে চোখটি নষ্ট করে দিতে পারে, আবার মাথার ভেতর ইনফেকশন ঢুকে মেনিনজাইটিস এমনকি ব্রেইন এবসেসের মতে মারাত্মক জটিল রোগের জন্ম দিতে পারে।
চিকিৎসা:
সাইনুসাইটিসের কারণে মাথব্যথা হয়েছে বলে মনে হলে যতদ্রুত সম্ভব একজন নাক, কান, গলারোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক, এন্টিহিস্টামিন, নাকের ড্রপ এবং ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে হোমিওপ্যাথিতেও সারতে পারে। যদি ওষুধপত্রে এই রোগ নিরাময় না হয় তবে সাইনাসের ওয়াশ বা আরো বড় ধরনের অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।
সাইনুসাইটিস থেকে বাঁচতে সতর্কতা হিসেবে ধুলাবালি এড়িয়ে চলা, প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করা, নাকের ভিতর ময়লা পানি যাতে না ঢুকে সেদিকে খেয়াল রাখা, দাঁতে সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসা নেয়া, ঠান্ডা যাতে না লাগে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা, ঘর যাতে ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা যেতে পারে।
সুত্রঃ সহজ স্বাস্থ্য সেবা- মোহাম্মদ আব্দুস সালাম