প্রেমের টানে বাড়িছাড়া দুই কিশোর–কিশোরীকে নিয়ে ডাকা সালিসে এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিজেই ওই কিশোরীকে (১৪) বিয়ে করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউপির বিবাহিত চেয়ারম্যান মো. শাহিন হাওলাদারের (৬০) বিরুদ্ধে।
ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন। তাঁর প্রথম স্ত্রীর সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে বিবাহিত।
কিশোরী একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা শ্রমিক। ১৪ বছরের কিশোরীকে ৬০ বছরের একজন ইউপি চেয়ারম্যানের বিয়ে করার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয়রা জানায়, কিশোরীর সঙ্গে কিশোরের প্রেমের সম্পর্ক। গত বৃহস্পতিবার রাতে তারা দুজন পালিয়ে যায়। কিশোরীর বাবা ঘটনাটি ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে জানালে চেয়ারম্যান কিশোর–কিশোরীর বিয়ে দেওয়ার কথা বলে শুক্রবার ইউপি কার্যালয়ে যেতে বলেন। কথামতো শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে দুই পরিবারের সদস্যরা ইউপি কার্যালয়ে গেলে মেয়েটিকে দেখে পছন্দ হয়ে যায় চেয়ারম্যানের। তিনি মেয়েটিকে বিয়ে করার আগ্রহ দেখান। এরপর কিশোর–কিশোরীর বিয়ের বিষয়ে আর কিছু বললে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে সাদা কাগজে সই নিয়ে সবাইকে দুপুরের দিকে বের করে দেন চেয়ারম্যান।
মেয়েটির পরিবার থেকে জানা গেছে, কাজি ডেকে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীকে বিয়ে করেন চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার। কাবিননামায় মেয়েটির জন্মতারিখ ২০০৩ সালের ১১ এপ্রিল দেয়া হলেও বিদ্যালয়ে দেওয়া জন্মনিবন্ধন ও পঞ্চম শ্রেণি পাসের সনদ ঘেটে দেখা যায় ওই ছাত্রীটির জন্মতারিখ ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল। বিয়ের পরেই মেয়েটিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান চেয়ারম্যান।
স্থানীয় কাজি মো. আবু সাদেকও বিয়ে পড়ানোর কথা স্বীকার করে জানান জন্মনিবন্ধন দেখেই তিনি বিয়ে পড়িয়েছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার জানান, “নিজের প্রয়োজনে গরিব ঘরের একটি মেয়েকে বিয়ে করেছি। কাউকে মেরে ফেলার হুমকি কিংবা জোর করার বিষয়টি মিথ্যা। মেয়ের বয়স ১৮ বছর।”
এদিকে বিয়ের খবর শুনে ছেলেটি আত্মহত্যার চেষ্টা করে। অচেতন অবস্থায় শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান গ্রাম পুলিশ সদস্য মো. ফিরোজ আলম।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পুলিশ পাঠানো হয়েছে ছেলেটির খোঁজখবর নেওয়ার জন্য।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, “ইউপি চেয়ারম্যান এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে তা ঠিক হয়নি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে আমাদের পক্ষ থেকে।”