রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর কো-অপারেটিভ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আদেল উদ্দিন মোল্লার কাছে সিগারেট চেয়ে না পেয়ে তাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান মিয়ার বিরুদ্ধে। বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে ওই স্কুলে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান শেষে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান মো. আদেল উদ্দিন মোল্লা। তবে আব্দুল মান্নান মিয়ার দাবি, তাকে হেয় করার জন্য তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হচ্ছে।
আব্দুল মান্নান মিয়া বসন্তপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। বসন্তপুর কো-অপারেটিভ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আদেল উদ্দিন মোল্লা অভিযোগ করেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টার দিকে বিদ্যালয়ে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে আসেন আব্দুল মান্নান মিয়া। অনুষ্ঠান শেষে তিনি আমাকে এক প্যাকেট সিগারেট কিনে এনে দেওয়ার জন্য বলেন। আমি সিগারেট দিতে অস্বীকার করলে তিনি আমার গায়ে হাত তুলতে যান এবং মা-বাবা তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরবর্তীতে তিনি আমাকে বিদ্যালয়ের নারী শিক্ষকদের দিয়ে কেলেঙ্কারিতে ফেলে এবং শিক্ষার্থীদের দিয়ে আন্দোলন করিয়ে দেখে নেবেন বলে হুমকি দেন।’
তিনি বলেন, ‘মান্নান মিয়া বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ছিলেন। তিনি বিদ্যালয়ের সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পদবির প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন সময়ে আমার কাছে স্কুলের কোষাগার থেকে মাসোহারা চেয়েছেন এবং নিয়েছেনও। তিনি প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন সময় আমাকে দিয়ে জোর করে এসএসসির টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া শিক্ষার্থীদের উত্তীর্ণও করিয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি ওইসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের কাছ থেকে উৎকোচ হিসেবে টাকা নিয়েছেন। তিনি জোর করে আমাকে দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তির সময় ও এসএসসির ফরম পূরণের সময় অতিরিক্ত টাকা নিতে বাধ্য করেছেন। পরে ওই অতিরিক্ত টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন। বিদ্যালয়ে এলেই তাকে ১-২ প্যাকেট করে সিগারেট কিনে দিতেই হবে। এক পর্যায়ে আমি তার এসব চাহিদা পূরণ করতে অস্বীকার করায় তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন।’
এই প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারির বিষয়সহ পুরো বিষয়টি আমি রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীকে জানিয়েছি। প্রতিমন্ত্রী রাজবাড়ী এসে ঘটনার বিচার করবেন বলে আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে আব্দুল মান্নান মিয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি যে আদেল উদ্দিনকে লাঞ্ছিত করেছি তার একজন সাক্ষীও তিনি দেখাতে পারবেন না। মূলত তিনি নিজেই স্কুলে না এসে বিভিন্ন জায়গায় রাজনীতি করে বেড়ান। এতে স্কুলের শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে। আমি এসব করতে তাকে নিষেধ করায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে হেয় করার জন্য কুৎসা রটাচ্ছেন।’এ বিষয়ে বসন্তপুর কো-অপারেটিভ উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তারা বিষয়টি নিয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হননি। তবে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য কাজী লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমরা স্কুল ম্যানেজিং কমিটির চার সদস্য প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে ঘটনা শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোচনা হচ্ছে।’ এর বাইরে তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি।