সমঝোতা স্মারকের অধীনে ১৯ ধরনের গৃহকর্মে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেছেন, এর মাধ্যমে আমিরাতের বন্ধ শ্রমবাজার ছয় বছর পর বাংলাদেশিদের জন্য খুলতে যাচ্ছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় আগামী তিন মাসের মধ্যে কর্মী পাঠানো শুরু হবে।
সোমবার রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। গত বুধবার দুবাইয়ে বাংলাদেশ ও আমিরাতের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। বিস্তারিত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রণালয়। এতে দাবি করা হয়, সমঝোতা স্মারক বড় অর্জন। তবে জনশক্তি রফতানিকারকদের দাবি, অবকাঠামো, সেবা ও উৎপাদন খাতে কর্মী পাঠানোর সুযোগ না থাকায় সই হওয়া সমঝোতা স্মারকের অধীনে বড় সংখ্যায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ নেই।
সোমবার মগবাজারে জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রা কার্যালয়ে বৈঠক শেষে এ কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি বেনজির আহমেদ।
তিনি বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় কর্মী পাঠানোর কোনো উদ্যোগ অতীতে সফল হয়নি। আমিরাতেও হবে না। কর্মী পাঠানোর দায়িত্ব এজেন্সিকেই দিতে হবে।
নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ২০১২ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় আরব আমিরাত। ২০০৮ সালে চার লাখ ২০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী যান দেশটিতে। ২০১২ সালে যান দুই লাখ ১৫ হাজার কর্মী। পরের বছর থেকেই জনশক্তি রফতানি তলানিতে ঠেকে। ২০১৩ সালে ১৪ হাজার ২৪১ জন বাংলাদেশি কর্মী যান। তাদের মধ্যে ১৩ হাজার ৭১০ জনই ছিলেন নারী। গত বছর মাত্র চার হাজার বাংলাদেশি কর্মী আমিরাতে গিয়েছেন। এর মধ্যে সোয়া তিন হাজার নারী।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, সমঝোতা স্মারকের আওতায় দুই দেশের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে যৌথ কমিটি গঠিত হবে। কমিটি নির্ধারণ করবে কীভাবে কত খরচে লোক যাবে। অভিবাসন ব্যয়, মেডিকেল ফিও নির্ধারণ করবে কমিটি। আমিরাতের মানবসম্পদ ও এমিরাটাইজেশন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে সেখানকার তাদবির সেন্টারের মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়োগ করা হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় (জিটুজি) কর্মী যাবে, সিন্ডিকেট হবে না।
নুরুল ইসলাম বলেন, আমিরাতে সব সময় বাংলাদেশি কর্মী যাচ্ছে। গৃহকর্মের ১৯টি খাতে কর্মী পাঠাতে সমঝোতা স্মারক হয়েছে। খাতগুলো হলো- গৃহশ্রমিক, ব্যক্তি মালিকানাধীন জাহাজের নাবিক, নিরাপত্তারক্ষী, রাখাল, ব্যক্তিগত গাড়িচালক, গাড়ি পার্কিংয়ের শ্রমিক, ঘোড়ার সহিস, বাজপাখি পালক, গৃহভৃত্য, গৃহ তত্ত্বাবধায়ক, গৃহ প্রশিক্ষক, শিশু পরিচর্যাকারী, খামার শ্রমিক, মালী, ব্যক্তিগত সেবিকা, ব্যক্তিগত সহকারী, ব্যক্তি মালিকানাধীন খামারের প্রকৌশলী ও কৃষিবিদ এবং বাবুর্চি।
মন্ত্রী আগ্রহীদের সতর্ক করে বলেন, আগ্রহীরা যেন কাউকে টাকা না দেন। নিয়োগ শুরু হলে মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাবে।
প্রবাসী কল্যাণ সচিব ডা. নমিতা হালদার বলেন, কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিকের নেতিবাচক কাজের জন্য আমিরাতে শ্রমবাজার খুলতে দেরি হচ্ছে। আমিরাতের কারাগারে এখনও এক হাজারের বেশি বাংলাদেশি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫৬ জন খুনের মামলার আসামি। ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় রয়েছে।
সচিব জানান, সমঝোতা স্মারক সই হলেও অপরাধপ্রবণতা বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিয়েছে বলে জানান তিনি।
আমিরাতের মানবসম্পদ মন্ত্রীর বরাতে সচিব জানান, অতীতের বিশৃঙ্খলার অভিজ্ঞতার কারণে দেশটি ৫০০ এজেন্সির সনদ বাতিল করেছে। বিশৃঙ্খলা বন্ধে ‘তাদবির সেন্টারের’ মাধ্যমে কর্মী নেওয়া হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় কর্মী যাবে।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় (জিটুজি) মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে ২০১২ সালে চুক্তি করে বাংলাদেশ। ওই চুক্তির ব্যর্থতায় সরকারি-বেসরকারি যৌথ ব্যবস্থাপনায় (জিটুজি প্লাস) কর্মী পাঠাতে ২০১৫ সালে সমঝোতা স্মারক সই করে দুই দেশ। মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠান ‘সিনারফ্ল্যাপ’র মনোনীত ১০টি বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি দেশটিতে কর্মী পাঠাচ্ছে। যারা ‘সিন্ডিকেট’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। আমিরাতের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।