প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে যে আট হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার তালিকা দেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে ৩৭৪ জনকে ফিরিয়ে নিতে দেশটি রাজি হয়েছে বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বুধবার মিয়ানমারের রাজধানী নাইপিদোতে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির কর্মকর্তারা ওই ৩৭৪ জনের রাখাইনে বসবাসের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার কথা জানান। বাকিদের বিষয়ে তথ্য অসম্পূর্ণ বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মিন্ট থু বলেন, ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের দেওয়া ৮০৩২ জনের কাগজপত্র কর্মকর্তারা পরীক্ষা করেছেন। “৮০৩২ জনের মধ্যে ৩৭৪ জনের বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। এই ৩৭৪ জনের প্রথম দফায় প্রত্যাবাসন হবে। “তাদের সুবিধাজনক সময়ে তারা ফিরতে পারেন।” বাকিদের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকের ক্ষেত্রে আঙুলের ছাপ ও ছবি যুক্ত করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উইন তুন বলেন, এসব নথিপত্র “আমাদের চুক্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়নি।”
বাংলাদেশের প্রস্তাবিত ওই তালিকায় তিনজন ‘সন্ত্রাসী’ রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের ওপর গত ২৫ অগাস্ট নতুন করে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরু হলে ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে তারা। এই কয় মাসে সাত লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। আগে বিভিন্ন সময়ে আসা আরও চার লাখের মতো রোহিঙ্গার ভার বহন করছে বাংলাদেশ।
এই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য গত ২৩ নভেম্বর মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্মতিপত্র সই হয়। এর ভিত্তিতে দুই দেশ যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে এবং ১৬ জানুয়ারি ওই গ্রুপের প্রথম বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিভিন্ন বিষয় ঠিক করে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ স্বাক্ষরিত হয়।
তারই আলোকে প্রত্যাবাসনের জন্য মধ্য ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল খ শোয়ের হাতে ৮০৩২ রোহিঙ্গার তালিকা তুলে দেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। ১৬ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ওই বৈঠকে দুই দেশের সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থানরত সাড়ে ছয় হাজার রোহিঙ্গাকে ‘শিগগির’ ফিরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দেয় মিয়ানমার। সে বিষয়েও এখনও কোনো অগ্রগতি হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমারের কর্মকর্তারা দাবি করেন, রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা বা জাতিগত নিধনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।