৭ জানুয়ারি, কুড়িগ্রাম সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার সাত বছর আজ। আলোচিত এ হত্যার বিচার চলছে ভারতের উচ্চ আদালতে। সাত বছর অতিবাহিত হলেও এখনও বিচার পায়নি ফেলানীর পরিবার। ন্যায়বিচারের আশায় ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে দুটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। আগামী ১৮ জানুয়ারি রিটের শুনানি হবে। এদিকে, ফেলানী হত্যার ন্যায়বিচারের আশায় দিন গুনছে তার পরিবার।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পার হতে গিয়ে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)-এর গুলিতে নির্মমভাবে খুন হয় কিশোরী ফেলানী। বিএসএফের ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নিহত ফেলানীর মরদেহ কাঁটাতারে ঝুলে থাকে দীর্ঘ চার ঘণ্টা। তার ঝুলে থাকা লাশের ছবি দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। তীব্র নিন্দা জানায় মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
পরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দাবির মুখে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার কাজ শুরু হয়। ফেলানীর বাবা দু’দফা বিএসএফের আদালতে সাক্ষী দিয়ে আসলেও ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয় আদালত। তখন রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আদালতে আবেদন করে বিজিবি। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মামলার পুনর্বিচারেও অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিশেষ আদালত।
ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে ফেলানীকে বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ পাখির মতো গুলি ছুড়ে হত্যা করেছে। কিন্তু এখনও আমরা এই হত্যার বিচার পাইনি। আমি চাই, ফেলানীর হত্যাকারী অমিয় ঘোষের যেন ফাঁসি হয়। তাহলে, আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে। ’
ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, ‘বিএসএফের বিশেষ আদালতে মেয়ের হত্যার ন্যায়বিচার না পেয়ে ২০১৫ সালে ভারতের আইনজীবী অপণর্অ ভাট ও মানবাধিকার সংগঠন মাসুম-এর সহায়তায় সেদেশের উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করি। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সেই রিট গ্রহণ করে আগামী ১৮ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেছেন। আমি আশা করছি, এবার ভারতের সুপ্রিম কোর্টে ন্যায়বিচার পাবো। এখন ন্যায়বিচারের আশায় আদালতের দিকে তাকিয়ে আছি।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে বিএসএফের বিশেষ আদালতে পরপর দু’বার আমি সাক্ষী দিয়ে আসলেও অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে দু’দফায় বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।’
ফেলানীর মির্মম হত্যার কথা এখনও ভুলতে পারেননি তার স্বজনরা। এ হত্যার ন্যায়বিচারসহ সীমান্তে সব ধরনের হত্যা বন্ধের দাবি জানান তারা।
এই হত্যা মামলায় ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরুর পক্ষে আইন সহায়তা দিচ্ছেন কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন। তিনি বলেন, ‘ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরুর দায়ের করা দুটি রিট গ্রহণ করেন। একাধিকবার এই রিটের শুনানির তারিখ পেছানোর পর আগামী ১৮ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত। আমরা আশা করতে পারি, ভারতের সর্বোচ্চ আদালত ফেলানী হত্যা মামলায় একটা ইতিবাচক রায় দেবেন, যেটা উভয় রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক হবে।’