বর্তমান সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, “গত মহাজোট সরকারের ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দিনবদলের সনদ ‘রূপকল্প-২০২১’ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে সরকারের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।”
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্ন মধ্য-আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার কথা উল্লেখ করে হামিদ বলেন, “এখন জাতির দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে ২০৪১ সালের দিকে-বিশ্বসভায় একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়ার মানসে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সরকার উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রেখে জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণে সক্ষম হবে।”
রোববার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান সমুন্নত এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখে ২০১৪ সালে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দশম জাতীয় সংসদ গঠিত হয় এবং বর্তমান সরকারের ওপর দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়।”
গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে মত-পথের পার্থক্য ভুলে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, “দেশ থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে বাঙালি জাতিকে আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। একাত্তরের শহীদদের নিকট আমাদের অপরিশোধ্য ঋণ রয়েছে।
“আসুন ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে মত-পথের পার্থক্য ভুলে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মধ্য দিয়ে আমরা লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি।”
প্রতিবারের মতো এবারও মন্ত্রিসভার ঠিক করে দেওয়া ভাষণের সংক্ষিপ্তসার পড়েন রাষ্ট্রপতি। এই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে সংসদে বছর শুরুর অধিবেশনে শেষ ভাষণ দিলেন আবদুল হমিদ।
বিকাল ৪টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।
অধিবেশন শুরুর পর সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. ছায়েদুল হক এবং সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা আহমেদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ হয়। এরপর রেওয়াজ অনুযায়ী অধিবেশন মুলতবি করেন স্পিকার। পরে সন্ধ্যা ৬টায় আবার অধিবেশন শুরু হয়।
কোনও সংসদের প্রথম এবং নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণ দেওয়ার বিধান রয়েছে। পরে পুরো অধিবেশনজুড়ে তার ভাষণের ওপর আলোচনা করবেন সংসদ সদস্যরা। আলোচনা শেষে রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংসদে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।
রোববার সংসদের মুলতবি বৈঠক শুরুর পরে স্পিকার রাষ্ট্রপতির আগমনের ঘোষণা দিলে সশস্ত্র বাহিনীর একটি বাদক দল বিউগলে ‘ফ্যানফেয়ার’ বাজিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সম্ভাষণ জানান।
সংসদ কক্ষে রাষ্ট্রপতি ঢোকার পর নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। সংসদে রাষ্ট্রপতির জন্য স্পিকারের ডান পাশে লাল রঙের গদি সম্বলিত চেয়ার রাখা হয়।
স্পিকারের অনুরোধের পর রাষ্ট্রপতি তার লিখিত ভাষণের সংক্ষিপ্তসার পড়া শুরু করেন। এ সময় তার মূল বক্তব্য পঠিত বলে গণ্য করার জন্য স্পিকার শিরীন শারমিনকে অনুরোধ জানান আবদুল হামিদ। স্পিকারের আসনের বাঁ পাশে রাখা ‘রোস্ট্রামে’ দাঁড়িয়ে ভাষণ দেন তিনি।
১৫৭ পৃষ্ঠার ভাষণের সংক্ষিপ্তসারে রাষ্ট্রপতি অর্থনীতি, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, খাদ্য-কৃষি, পরিবেশ-জলবায়ু, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের কার্যক্রম ও সাফল্য তুলে ধরেন।