বাংলাদেশে প্রতিশ্রুত দুই প্রকল্প থেকে ১৭ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের সহায়তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি)। বর্তমান বিনিময় হার (১ ডলার=৮১ টাকা) অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৪২২ কোটি টাকা।
গত ৭ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে চিঠি পাঠিয়ে সংস্থাটির কান্ট্রি রিলেশন অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহা-পরিচালক ড. ওয়ালিদ আব্দেলওয়াহাব ঋণ প্রত্যাহারের কথা জানায়।
এতে বলা হয়, প্রকল্প বাস্তবায়নের দেরি হওয়ায় আইডিবির এএএ ক্রেডিট রেটিং বজায় রাখার জন্য এ পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।
প্রকল্প দুটির একটি হচ্ছে, ‘প্রি পেমেন্ট মিটারিং সিস্টেম প্রজেক্ট’। এটি থেকে ১৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার প্রত্যাহার করা হয়েছে। অন্য প্রকল্পটি হচ্ছে, ‘সাসটেইনেবল হাউজিং ফর লো-ইনকাম আরবান কমিউনিটি প্রজেক্ট’। এ থেকে প্রত্যাহার হয়েছে ২ কোটি ডলার।
আইডিবি অর্থ প্রত্যাহার করলেও অন্য কোনো সংস্থা থেকে প্রকল্প দুটি অর্থায়নে আশাবাদী অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আজম।
তিনি বলেন, “প্রকল্প দুটিতে প্রস্তাবিত অর্থায়ন আইডিবির বোর্ড সভায় অনুমোদন হয়। তবে আমাদের একনেক সভায় অনুমোদন পায়নি। তাই প্রকল্প দুটির বাস্তবায়নে আমরা অন্য কোনও সংস্থা থেকে অর্থায়ন করতে পরবো বলে আশাবাদী।”
বিদ্যুৎ বিভাগের সমন্বয়-৩ শাখার যুগ্ম সচিব আবুল খায়ের মো. আমিনুর রহমান বলেন, আইডিবির ‘বাড়তি কিছু কঠিন শর্ত’ থাকায় প্রি পেমেন্ট মিটারিং সিস্টেম প্রকল্পটি এগিয়ে নিতে পারেননি তারা।
প্রকল্পটির ভবিষ্যতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানি আইন অনুযায়ী বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় ডিপিডিসি, ডেসকো এবং আরইবিসহ বেশ কয়েকটা কোম্পানি গঠিত হয়ে বিদ্যুতের উন্নয়নে কাজ করছে।
“এ পরিস্থিতিতে আমাদের যে কোনো একটি কোম্পানি নিজস্ব অর্থায়ন বা বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারে।” এদিকে ইআরডির একজন কর্মকর্তা জানান, আইডিবি বোর্ড গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই প্রকল্পের জন্য ১৫ কোটি ৫৫ লাখ মার্কিন ডলার বরাদ্দ অনুমোদন দিয়েছিল। কিন্তু গত এক বছরে ডেসকো প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হয়েছে।“এমনকি ডেসকো প্রাথমিক প্রকল্প বাস্তবায়ন পদ্ধতিগুলি শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। যার ফলে আইডিবি অর্থায়ন বাতিল করে দেয়।”
এদিকে শহরের নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য গৃহায়ন প্রকল্পটি নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ইআরডি কর্মকর্তা বলেন, “বাস্তবায়নকারী সংস্থা জমি অধিগ্রহণই করতে পারেনি। তহবিল বাতিল করার জন্য যথেষ্ট কারণ আছে।”
ইআরডির আরেক কর্মকর্তা জানান, গত বছরের ১৬ মে এই প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে চুক্তি হয়েছিল সরকার ও আইডিবির মধ্যে। আইডিবির নিয়ম অনুযায়ী, চুক্তির ছয় মাসের মধ্যে কাজ শুরু করতে হয়।
চিঠিতে আইডিবি লিখেছে, “বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সব রেটিং এজেন্সির কাছ থেকে আমরা এএএ রেটিং পেয়ে আসছি। আমরা এএএ রেটিংয়ে থাকতে চাই।”
প্রতিশ্রুত তহবিলের অর্থ ছাড় না করে জমিয়ে রাখলে তা সংশ্লিষ্ট সংস্থার রেটিংয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশে দেরির কারণে রেটিং অটুট রাখতে অর্থায়ন বাতিল করা হচ্ছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।