প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিকের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার বেসরকারি সংস্থাটি আশঙ্কা করছে, এই আইনের ফলে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অপরাধের অধিকতর বিস্তার ঘটবে। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মানহানি, প্রতারণা, গুপ্তচরবৃত্তিসহ উদ্ধৃত বিবিধ বিষয়ের অপব্যাখ্যা ও অপব্যবহারের ব্যাপক সুযোগের কারণে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে বরং জনগণের সংবিধানপ্রদত্ত বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে রুদ্ধ হওয়া এবং বাস্তবে নাগরিকের নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা তৈরির কারণ হবে।
প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক আখ্যায়িত করে টিআইবি এর সব বিতর্কিত ধারা সংশোধন এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনের অভিমতের ভিত্তিতে পরিমার্জনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।
১৯২৩ সালের সরকারি গোপনীয়তা আইনের ৩ ধারায় গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধের শাস্তির বিভিন্ন বিধানকে ভিন্ন মোড়কে খসড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা-৩২তে সন্নিবেশিত করা হয়েছে বলে দাবি করা হয় বিবৃতিতে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গুপ্তচরবৃত্তির অজুহাতে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ব্যক্তির মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে তদন্তকারী কর্মকর্তার ‘অভিপ্রায়-নির্ভর’করায় প্রস্তাবিত আইনটি ক্ষেত্রবিশেষে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত আইনের ৩২ ধারার অপপ্রয়োগের ফলে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত তথ্য জানার আইনি অধিকার ব্যাপকভাবে রুদ্ধ হবে।’ আর তাতে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অপরাধের অধিকতর বিস্তার ঘটবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ইন্টারনেট তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সম্প্রসারণের প্রেক্ষাপটে মত ও তথ্য প্রকাশ এবং সত্যানুসন্ধানের যে অবাধ সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে, প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংসদে অনুমোদিত হলে সেই সম্ভাবনা ধুলিসাৎ হবে। গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার চর্চা ব্যাহত হবে যা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার জন্য আত্মঘাতী হবে।