সীমান্তের পাশের দেশ মিয়ানমার যে আচরণ করেছে তাতে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) একটু ধৈর্য হারালে যুদ্ধ বেজে যেত বলে মনে করেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন। রোহিঙ্গা ইস্যু সৃষ্টির পর মিয়ানমার ১৮ বার সীমান্ত অতিক্রম করেছে বলেও জানান বিজিবি প্রধান।
রবিবার দুপুরে বিজিবির দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, ‘ওই সময়ে আমরা উত্তেজিত হলে বাংলাদেশ আজকে যুদ্ধে থাকতাম। মিয়ানমারের উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধ বাঁধিয়ে একটি অশান্ত পরিবেশ তৈরি করা। কিন্তু আমরা তা কৌশলে এড়িয়ে গেছি।’
বিজিবি প্রধান বলেন, ‘বিজিবির ২২২ বছরের ইতিহাস চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এগিয়ে চলেছে। ২০০৯ সালের দুর্ভাগ্যজনক ট্রাজেডির পর বাহিনী পুনর্গঠন করা হয়েছে। ২০১০ সালে আইন পুনর্গঠন করা হয়েছে। আমাদের পদোন্নতি পলিসিতে অর্ধেকের মতো ব্যক্তির পদোন্নতি হয়েছে। আমরা এখন বাহিনীটি যুগোপযোগী করার কাজ করছি।’
বিজিবি ডিজি বলেন, ‘মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে চলার জন্য যত কিছু প্রয়োজন এর সবই সরকারের কাছ থেকে আমরা পাচ্ছি। চার হাজার ৪২৭ কিলোমিটার বর্ডার, দুইটি প্রতিবেশী দেশ। সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেই বন্ধুত্বমূলক পলিসি গ্রহণ করেছি। দেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে গেলে বর্ডার থাকতে হবে। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর ছিটমহল বিনিময় করে। বর্ডারে এখন কোনো সমস্যা নেই। ’
বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, ‘বিজিবি পায়ে হেঁটে বর্ডারে ডিউটি করে। সেখানে কোনো রাস্তা নেই। পতাকা উঠালেই গোলাগুলি বন্ধ হয়ে যায়। এভাবেই পর্যায়ক্রমে সম্যসার সমাধান করা হয়েছে।’
মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বলেন, ‘ইকুইপমেন্টের মাধ্যমেই বর্ডার সমস্যার সমাধান করা যায়। ৫১১ কিলোমিটার পর্যায়ক্রমে আমরা রাডার ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসব। সরকার আমাদের টাকাও দিয়েছে। তখন আমরা সদরদপ্তরে বসেই সব নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো।’
বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, ‘সরকার নারী-শিশু পাচার, চোরাচালান বন্ধ করতে দায়িত্ব দিয়েছে, আমরা সেটা সঠিকভাবে পালন করি। ’ তিনি বলেন, ‘আমরা ১০ লাখ রোহিঙ্গাদের সুন্দরভাবেই ম্যানেজ করেছি। সেইজন্য আমাদের ফোর্সের মধ্যে কুইক রিয়েকশন ফোর্স চালু করতে চাচ্ছি।’
মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের পর্যায়ক্রমে ৫৩৯ কিলোমিটার বর্ডার অরক্ষিত ছিল। আরও ২০টি ভিওপি করলে পুরো কভার করবে। আমরা ২০৪১ সালে সমৃদ্ধশালী দেশ হবো। সেভাবেই আমরা ১৫ হাজার ফোর্স দিয়ে তিন বছর চলব। পরে আবারও বাড়াব।’
বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, ‘বিশ্বের কোনো জিনিসের জন্য তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ আমাদের সঠিক তথ্য দেয়ার জন্য। আমরা সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছি। আপনাদের নিয়েও করছি।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, ‘ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ একটি বাহিনীর পক্ষে সম্ভব নয়। এটা পরিবারসহ সামাজের সবার দায়িত্ব। ইয়াবা মিয়ানমারে তৈরি হয়। ওখানে সবাই এর সঙ্গে জড়িত। এর সঙ্গে রোহিঙ্গারাও জড়িত থাকে। এছাড়াও আমাদের দেশের কিছু ব্যক্তিও জড়িত। আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে তাদের গ্রেপ্তার করে থাকি। আমরা শুধু সীমান্তে কাজ করে থাকি। এক কোটির বেশি ইয়াবা ইতোমধ্যে ধরেছি। আমাদের আরেকটু সময় দেন তাহলে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।’
বিজিবির ডিজি বলেন, ‘আমি যেদিন যোগদান করেছি তার পরদিনই রোহিঙ্গাদের প্রবেশ শুরু হয়েছে। আমরা দুই আড়াই দিন তাদের বর্ডারে আটকে রেখেছিলাম। তাদের দেখে মানবিক হয়েছি। তাদের খাওয়া দাওয়া ছিল না, চিকিৎসা ছিল না। আমরা সেই কাজটিও করেছি। এখন সারা বিশ্ব আমাদের প্রশংসা করছে।’