গভীর ভালোবাসা আর বিনম্র শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানালো জাতি। একুশের প্রথম প্রহরে বাংলা বর্ণমালার সৈনিকদের অবদানের দিনগুলোকে স্মরণ করলো জাতি। একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তি থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের পদভারে জেগে উঠে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। রক্ত দিয়ে যে মিনার গড়েছেন ভাষা শহীদ-সংগ্রামীরা, ভালোবাসার অর্ঘ্যে তা ভরিয়ে তোলে জনতা।
রাত ১১টার পর থেকেই শাহবাগ, আজিমপুর, নীলক্ষেতসহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাওয়ার প্রতিটি প্রবেশপথেই ছিল মিছিলের সারি। শহীদ মিনারের আশপাশের এলাকায় মাইকে বাজানো হয়, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি’।
রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর একে একে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবর্গ এবং বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। ১৪ দলের পর বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ দলীয় নেতাদের নিয়ে শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সহযোগী সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ছাত্র, যুব, শ্রমিক, কৃষক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ একে-একে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানান।
দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে শহীদ মিনারের বেদীতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন রাজনীতিক, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, ছাত্রসহ সকল শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষ। মনোরম আল্পনা আঁকা মিনার প্রাঙ্গণে খালিপায়ে ভীড় করেন তারা। রাত ১২টায় শহীদ মিনারে মানুষের যে ঢল নামে, তা অব্যাহত থাকে ভোর পর্যন্ত।
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির এই দিনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকসহ নাম না জানা শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা। পরে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে ইউনেস্কো। এরপর ২০০০ সাল থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে দিনটি।