দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় এবার ‘অত্যন্ত দুঃখ ও কষ্টের মধ্য দিয়ে’ শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করছে বিএনপি। প্রতি বছরের মতো একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে না গিয়ে দলটি শ্রদ্ধা জানিয়েছে সকালে।
পাকিস্তান আমলে মাতৃভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতির দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বুধবার সকাল আটটায় রাজধানীর আজিমপুর গোরস্থানে শহীদ শফিউর রহমান, শহীদ আবুল বরকত ও শহীদ আবদুল জব্বারের সমাধিতে দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এরপর বিএনপি নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন। সেখানে আসা মানুষের ঢলের কারণে তাদের বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়। বেলা ১১টার পর শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগ পান তারা। এরপর গণমাধ্যম কর্মীদের মুখোমুখি হন মির্জা ফখরুল। বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত দুঃখ, কষ্ট ও ভারাক্রান্ত হৃদয়ে দিনটি পালন করছি।’
‘বিচার বিভাগ থেকে শুরু সংসদ পর্যন্ত দলীয়করণ করা হয়েছে। তাই আজকে এই দিনে তখন আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যিনি চিরকাল গণতন্ত্রের সংগ্রাম করছেন, লড়াই করছেন, তাকে একটি মিথ্যা মামলায় কারাগারে দিনযাপন করতে হচ্ছে।’
গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। আর এ কারণে অন্যান্য বড় রাজনৈতিক দলের মতো বিএনপি রাতে একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে যাবে না বলে জানানো হয়েছিল গত ১৫ ফেব্রুয়ারি।
মির্জা ফখরুল জানান, তারা শহীদ বেদীতে যে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সেটা বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকেই। তিনি বলেন, ‘আজকে এমন এক সময় এ দিবস আমাদেরকে পালন করতে হচ্ছে, যখন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কবর রচনা করা হয়েছে। সমস্ত রীতিনীতি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে। মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই।’
‘আমরা সমগ্র বাংলাদেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র ও দেশনেত্রীকে মুক্ত করার জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তুলব।…যে সরকার জগদ্দল পাথরের মত বসে আছে, তাদেরকে সরিয়ে ও পরাজিত করার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
বিএনপি এই ঐক্যের আহ্বান গত কয়েক বছর ধরেই জানিয়ে আসছে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে দলের মহাসচিব বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত ঐক্য প্রতিষ্ঠা না হয়, যতদিন পর্যন্ত এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন না হয়, ততদিন আমাদের এই আহ্বান অব্যাহত থাকবে।’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে ফখরুল বলেন, ‘এই দিনে শুরু হয়েছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল ভিত্তি। সমগ্র জাতি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিল।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বরকতুল্লাহ বুলু, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, জয়নাল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কেন্দ্রীয় নেতা হেলেন জেরিন খান, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, খালেদা জিয়ার প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়াও শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, শ্রমিকদল, বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)সহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন।