বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে ২০-দলীয় জোট। বেগম জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে ও পরে জোটের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে শরিক দলের নেতারা এ অঙ্গীকার করেন। জোটের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানা গেছে। তবে জোট নেতাদের এটাও বলা হয়, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচন প্রস্তুতিও নিতে হবে।
জানতে চাইলে জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক জানান, ‘জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারান্তরীণ হওয়ার আগে জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে জোট নেতারা অঙ্গীকার করেন, বেগম জিয়াকে বাইরে রেখে ২০ দল নির্বাচনে যাবে না। আমরা আশা করছি, আইনি প্রক্রিয়ায় শিগগিরই বেগম খালেদা জিয়া কারামুক্তি হবেন। তার নেতৃত্বেই আমরা আগামী নির্বাচনে যাব।
লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম জানান, বেগম খালেদা জিয়া ২০-দলীয় জোটের শীর্ষ নেত্রী। তার নেতৃত্বেই আমরা বিগত সময়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। আগামী নির্বাচনেও তার নেতৃত্বেই নির্বাচনে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে জোট। সূত্রমতে, বেগম জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর বিএনপি এককভাবে কর্মসূচি পালন করে। সেখানে জোটের শীর্ষ নেতারা অংশ নেননি। পরবর্তীতে জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিএনপি ঘোষিত কর্মসূচিতে জোট শুধু সমর্থনই নয়, অংশগ্রহণও করবে। এরপর থেকে সব কর্মসূচিতেই ২০-দলীয় জোটের নেতারা অংশ নেন। এ ছাড়া যুগপৎ আন্দোলনের চিন্তাভাবনাও আছে বিএনপি জোটের। এ বিষয়েও জোটের বৈঠকে আলোচনা হয়। বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করছে বিএনপি। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্না নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
বেগম জিয়াকে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট অবশ্য একটি সতর্ক বিবৃতিও দিয়েছে। বাম ও অন্য ইসলামী দলগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে বিএনপি। এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে নানা পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ২০-দলীয় জোট। আপাতত রাজপথের ‘নরম’ কর্মসূচি থাকলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাল্টে যেতে পারে প্রতিবাদের ধরন। মুক্তি বিলম্বিত হলে কঠোর কর্মসূচিতেও যেতে পারে ২০ দল। এ নিয়ে বিএনপি ও জোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে।
লন্ডন থেকে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবিতে বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে। এটা অব্যাহত থাকবে। ২০-দলীয় জোটও আমাদের কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে। তবে বিএনপি প্রধানের কারামুক্তি বিলম্বিত হলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জোট ও দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে। তবে যা-ই হোক, বিএনপি চেয়ারপারসন কারাগারে যাওয়ার আগে তাঁর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক কর্মসূচিই হবে।’ জানা গেছে, মার্চ মাস পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিনের বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করবে বিএনপি। এরপর খালেদার মুক্তি আন্দোলনের সঙ্গে চলবে নির্বাচন প্রস্তুতিও।
যে কোনো পরিস্থিতিতেও নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রাখবে দলটি। এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘উইদাউট খালেদা জিয়া নো ইলেকশন।’ তবে তিনি এও বলেন, ‘আমাদের চেয়ারপারসন বেগম জিয়ার নেতৃত্বেই বিএনপি একাদশ জাতীয় নির্বাচনে যাবে। সেই নির্বাচন হবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য।’ বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, বেগম জিয়াকে ‘মাইনাস’ করে নির্বাচন চায় সরকার। এ জন্য নির্বাচন পর্যন্ত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে কারাগারেই আটকে রাখতে চায়। একই সঙ্গে আদালতকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বেগম জিয়াকে নির্বাচনে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করার চক্রান্ত চলছে।
এ ধরনের তৎপরতা চালালে বিএনপি হাতগুটিয়ে বসে থাকবে না। প্রয়োজনে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এর উপযুক্ত সময় হিসেবে একাদশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ মুহূর্তকে বেছে নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরে সরকারকে একটি বড় ধাক্কা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। জানা যায়, সর্বশেষ সাংগঠনিক সফরে বিএনপি নেতারা বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার দিকনির্দেশনা দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। নির্বাচনকালীন সরকার পর্যন্ত কঠোর কর্মসূচিতেই থাকবে দলটি। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের এও নির্দেশনা দেওয়া হয়, বেগম জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এ জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের কর্মসূচিই নেওয়া হবে। জানা যায়, বেগম জিয়ার কারাগারে যাওয়ার আগে ও পরে ঢাকায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
কূটনীতিকদের পরামর্শ ছিল, খালেদা জিয়া জেলে গেলে বিএনপি যেন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের মধ্যেই থাকে। কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে বিদেশিদের মতামতকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সরকার খুব আশায় ছিল, খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার পর আমরা বাসে ঢিল দেব, তাতে কাচ ভাঙবে। আর ওরা আগুন ধরিয়ে মানুষ মেরে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেবে। এই সুযোগ এবার তারা পায়নি। এ জন্য সরকারি দলের মনে অনেক কষ্ট।’