ফরিদপুরে প্রায় ১৫ কিলোমিটার একটি খালে ৪০টি বাঁধ দিয়ে তার ওপর দিয়ে মালামাল পরিবহন করছে ৩৭টি ইটভাটা কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের কারণে খালটিতে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে এখন কেবল ছোট ছোট দেখা যাচ্ছে। আর খালটি পানিশূন্য হয়ে পড়ার কারণে এর পাড়ের কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে কৃষি কাজের সেচ ব্যবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষক।
ফরিদপুর শহর রক্ষা বাঁধের টেপাখোলা স্লুইস গেইট থেকে জেলা সীমানা পেরিয়ে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ মহাসড়ক পর্যন্ত খালটিকে ‘শুষে নেওয়া’ ইটভাটার মালিকদের দাবি, তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাছ থেকে জায়গা লিজ নিয়ে খালের ওপর রাস্তা বানিয়েছেন। যদিও পাউবো কর্তৃপক্ষ বলছে, খাল বন্ধ করে রাস্তা বানানোর জন্য কোনো জমিই লিজ দেওয়া হয়নি।
ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মিলন পালের এমপিএ, ওয়াহিদ মিয়া কুটির এমজেডএম, মুজিবুর মাতুব্বরের এমএমবি, আ. লতিফ মিয়া, আব্দুস সালাম, মাহমুদ, পান্নু, শহীদ, মহসীন, সিদ্দিক, শাহজাহান, খলিফা কামাল, সরোয়ার, জলিল খান, রেজওয়ান মোল্যাসহ ২৫ জন মালিকের ৩৭টি ইটভাটা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মালামাল আনা-নেওয়ার জন্য ট্রাক প্রবেশে খাল বন্ধ করে রাস্তা বানিয়েছে।
এ নিয়ে ভীষণ ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। আব্দুর রাজ্জাক নামের এক কৃষক বলেন, যে জমিতে ফসল ফলাতাম, সেটি এখন ইটভাটা। বাকি যে জায়গাটুকু আছে তাতেও কৃষি কাজ করা যাচ্ছে না। আশেপাশে পানি ওঠানোর কোনো মেশিন বসানো নেই। আগে এই খালের পানি দিয়েই সেচের কাজ চলতো। এখনতো ইটভাটা মালিকেরা খাল বন্ধ করে রাস্তা বানিয়েছে।
আদমপুর গ্রামের বিল্লাল মিয়া নামের আরেক কৃষক জানান, শুধু খাল বন্ধ নয়। ইটভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে ট্রাক্টরও। এসব ট্রাক্টর কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য সরকার ভর্তুকি দেয়। অথচ সেই ট্রাক্টর দিয়ে চলছে পরিবেশ ধ্বংসকারী ইটভাটার মাটি আনা-নেওয়ার কাজ।
যোগাযোগ করা হলে মুজিবর মাতুব্বর নামের এক ইটভাটা মালিক বাংলানিউজের কাছে দাবি করেন, খালের ওপর প্রত্যেক ইটভাটা মালিক যে অংশটুকু ভরাট করেছেন, তা পাউবো’র কাছ থেকে লিজ নেওয়া। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, ইটভাটা মালিককে খাল বন্ধ করে রাস্তা করার জন্য কোনো জমিই লিজ দেওয়া হয়নি। বিষয়টি আমাদের নজরে ছিল না। অবশ্যই এই বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।