জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পাইলট আবিদের স্ত্রী

0
আবিদের স্ত্রী আফসানা

একদিকে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত স্বামীর জানাজা, অন্যদিকে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন আফসানা তপি। অচেতন মুখে লাগানো অক্সিজেন মাস্ক। বিধির লিখন বুঝি এমনই। স্বামীর শেষ বিদায়ে অংশ নেওয়া হলো না তার। রাজধানীর নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের আইসিইউয়ে লাইফসাপোর্টে থাকা এই নারী পাঞ্জা লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে।
আবিদের স্ত্রী আফসানা
চিকিৎসায় নিয়োজিত বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা জানান, পাইলট আবিদ সুলতানের স্ত্রী আফসানা আবারও স্ট্রোক করায় শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। তিনি বর্তমানে কোমায় চলে গেছেন। তাই লাইফসাপোর্ট দেওয়া হয়েছে। স্বজনরা জানান, গত ১২ মার্চ নেপালের কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত হন পাইলট আবিদ সুলতান। স্বামী হারানোর চাপা কষ্ট সইতে না পেরে গত রবিবার সকালে উত্তরায় নিজ বাসায় স্ট্রোক করেন ৪০ বছর বয়সী আফসানা। এর পর তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার চিকিৎসার জন্য একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। ওই দিন সকালেই জরুরিভাবে বোর্ড তার অস্ত্রোপচার করে।

হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার অ্যান্ড কনসালট্যান্ট ডা. মো. আসাদুজ্জামান আমাদের সময়কে জানান, রবিবার সকাল ১০টার দিকে ‘মেকানিক্যাল থ্রোমব্যাক’ অপারেশন করা হয় আফসানার মস্তিষ্কে। তবে অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। পরে রাত ১১টার দিকে তিনি আবার স্ট্রোক করেন। রাত ১টার দিকে ‘ক্রানিয়েকটমি’ অপারেশন করা হয়। বর্তমানে লাইফসাপোর্টে আছেন তিনি।

ডা. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আফসানাকে হাসপাতালের সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তাই পরিস্থিতি বুঝে গতকাল সকালে নতুন করে ১২ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রফেসর দ্বীন মোহাম্মদ ও প্রফেসর বদিউল আলমের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে এ বোর্ড।

১২ সদস্যের ওই মেডিক্যাল টিমের সদস্য ড. উজ্জল কুমার মল্লিক আমাদের সময়কে বলেন, গতকাল রাতে রোগীর মস্তিষ্কের ডান পাশে আবার স্ট্রোক হয়। বর্তমানে মস্তিষ্কের ডানদিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রক্তনালি দিয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ আছে। তবে তার হৃদযন্ত্র, ফুসফুস ও কিডনি সচল রয়েছে। তিনি বেঁচে আছেন। আগামী ৭২ ঘণ্টার আগে কিছুই বলা যাবে না। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।
এদিকে দুর্ঘটনার সাত দিন পর গতকাল নিহত ২৩ বাংলাদেশির মরদেহ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বাবার মরদেহ বুঝে নিতে আর্মি স্টেডিয়ামে গিয়েছিল ক্যাপ্টেন আবিদের একমাত্র সন্তান তামজিদ বিন সুলতান। পরিবারের এমন কঠিন সময়ে শোক আর শঙ্কায় সে অনেকটাই নীরব হয়ে গেছে বলে জানান স্বজনরা।

হাসপাতালে আইসিইউ বিভাগের সামনে অশ্রুসজল স্বজনরা শঙ্কার মাঝে কাটাচ্ছেন প্রতিটি মুহূর্ত। মুমূর্ষু আফসানাকে একনজর দেখতে আসা তার পাঁচ স্কুলবান্ধবীও আইসিইউর সামনে ছিলেন বেশ উদ্বিগ্ন। বান্ধবী লাকি বলেন, অনেক বড় খারাপ সময় যাচ্ছে এ পরিবারের। সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে তামজিদের জন্য। একদিকে ওর বাবার জানাজা, অন্যদিকে ওর মায়ের এমন করুণ দশা।
আফসানার ফুফাতো বোনের স্বামী মাহমুদুল হাসান বলেন, আমরা কেউই তার (আফসানা) এমন দুর্ভাগ্যকে মেনে নিতে পারছি না। পরিবারের সবাই আছি এখানে। সবাই ভেঙে পড়েছেন।

ড. মাসুদ কবির বলেন, রোগীর অবস্থা বর্তমানে ভীষণ ক্রিটিক্যাল। তাকে স্থানান্তরের কোনো সম্ভাবনা নেই। তার মস্তিষ্কে এখনো রক্ত জমাট বেঁধে আছে। যে কোনো সময় অবস্থার অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে আফসানার বাবাসহ তার স্বজনদের মানসিকভাবে শক্ত হওয়ার ব্যাপারে কাউন্সেলিং (সান্তনা) দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ড. আসাদ।

গত ১২ মার্চ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার বিমানটি অবতরণের সময় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৫১ জন। তাদের মধ্যে পাইলট আবিদ, ফার্স্ট অফিসার পৃথুলা রশিদ, কেবিন ক্রু খাজা হোসেন ও শারমিন আক্তার নাবিলাসহ বাংলাদেশি ২৬ জন। তবে দুর্ঘটনার পর পাইলট আবিদ আহতাবস্থায় কাঠমান্ডুর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু পর দিন সকালে মারা যান পাঁচ হাজার ঘণ্টা ফ্লাইট চালানোর অভিজ্ঞতা থাকা এ পাইলট।