নতুন নেতৃত্বে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের

0
কর্মসূচি ঘোষণা

কোটাব্যবস্থা সংস্কারের আন্দোলন আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত স্থগিতের সিদ্ধান্ত মানছেন না সাধারণ আন্দোলনকারীরা। তারা স্থগিতের সিদ্ধান্ত না মেনে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বিপাশা চৌধুরী নামে এক শিক্ষার্থী সাহসিকতার সাথে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য সামনের কাতারে এসে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন। অবশ্য এই কর্মসূচি সকলের সম্মতিতেই নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
কর্মসূচি ঘোষণা
সোমবার রাতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাদের বাইরে সাধারণ আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে এক শিক্ষার্থী নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে আজকের মতো আন্দোলন স্থগিত করেন।

ওই শিক্ষার্থীই ছিলেন বিপাশা চৌধুরী। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের যে কমিটি ছিল। তারা আমাদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই আন্দোলন স্থগিত করেছেন। আমরা এই সিদ্ধান্ত মানি না। আন্দোলন চলবে। আমি অনুরোধ করবো পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করতে।

সূত্র বলছে, ‘নিরাপত্তাহীনতায় টিএসসি ছেড়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তারা ১৬ এপ্রিল চলো চলো ঢাকা চলো কর্মসূচি, মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় ফের অবস্থান, প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন অব্যাহতের ঘোষণা করেছে। ’

তিনি দাবি না মানা পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীদের ক্লাস এবং পরীক্ষা বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, যদি ১৫ এপ্রিলের মধ্যে কোটা সংস্কারের ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না জানানো হয় তাহলে আগামী ১৬ তারিখ চলো চলো ঢাকা চলো কর্মসূচি পালন করা হবে। দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজধানীতে চলে আসবে।

বিপাশা বলেন, আমরা নিজেদের এখানে নিরাপদ বোধ করছি না। কর্মসূচি আজকের মতো শেষ। আজকে কর্মসূচি স্থগিত। কাল সকাল ১১টায় ফের রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হবে লাগাতার ধর্মঘট ও ক্লাস বর্জন কর্মসূচি।

কোটাব্যবস্থা সংস্কারের আন্দোলন আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত স্থগিতের সিদ্ধান্ত মানছেন না সাধারণ আন্দোলনকারীরা। সচিবালয়ে সোমবার বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বৈঠকে আন্দোলন স্থগিতের এই সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠক শেষে সচিবালয় থেকে পরিষদের ১৯ সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজু ভাস্কর্যের সামনে আসেন। এ সময় সেখানে সাধারণ আন্দোলনকারীরা জড়ো হন।

পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানানোর পর ‘ভুয়া মানি না মানব না’ স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষুব্ধ সাধারণ আন্দোলনকারীরা।

এতে পরিষদের আহ্বায়ক বলেন, ‘আপনারা যদি আমাদের সিদ্ধান্ত না মানেন তাহলে আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে সরে যাব। এক মাসে প্রধানমন্ত্রী দুইবার দেশের বাইরে থাকবেন, ক্যাবিনেট মিটিংয়ে আলোচনাটা দেরি হবে বিধায় এক মাস পেছানো হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে দাবি আদায়ে কার্যকরী সিদ্ধান্ত না হলে প্রয়োজনে আগামী ৭ মে ফের আন্দোলন।’

সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, আগামী মাসে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা ও রোজা। এই পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে মুলো ঝুলিয়েছে সরকার। আমরা এ সিদ্ধান্ত মানি না। অন্তত কোটা সংস্কারের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।

এরপর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি মোড়, শাহবাগ মোড়, সব হলের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। রোকেয়া হলের সামনে লাঠি হাতে অবস্থান নেন ছাত্রীরা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান নিয়ে তাদের থামাতে চেয়েছিল সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। কিন্তু আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের ধাওয়া দেন। ধাওয়া খেয়ে মলচত্বরে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। পরিস্থিতি এখনও থমথমে। যে কোনো সময় সংঘর্ষ বাধতে পারে।

এর আগে সরকারের আশ্বাসে পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ।

আন্দোলনকারীদের এই অংশটি বলছে, সব শিক্ষার্থী আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নন। তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

বিদ্যমান কোটার বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে—সরকারে এমন আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন আগামী ৭ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন আন্দোলনকারীরা। সোমবার বিকেলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সরকারের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সচিবালয়ে আন্দোলনকারীদের প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত আসে। তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কারের ব্যাপারে সরকার অনড় অবস্থানে নেই। আমরা তাদের দাবির যৌক্তিকতা ইতিবাচকভাবে দেখি।’

বৈঠকের পর বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তারা সরকারের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করছেন। তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে বৈঠকে আজকের মধ্যে আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার হওয়া সবাইকে মুক্তি দেওয়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পরে সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের একটি অংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে। শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ও বাংলা একাডেমি এলাকায় পৃথকভাবে অবস্থান নিয়ে তারা সিদ্ধান্তকে ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। তারা বলেন, এ সিদ্ধান্ত তারা মানতে রাজি নন। কোটা সংস্কারে সুস্পষ্ট আশ্বাস না দিলে তাদের পক্ষে এ দাবি মানা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস না থাকায় তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

আন্দোলনকারীদের এ অংশটি বলছে, অন্য ইস্যু সামনে চলে এলে এ ইস্যু হারিয়ে যাবে।

ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

বিদ্যমান কোটার সংস্কার চেয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলন করে আসছে। গত রোববার তাদের পদযাত্রা ও অবস্থা কর্মসূচি চলাকালে ঢাকায় পুলিশ বাধা দিলে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।

আন্দোলন স্থগিত রাখতে নারাজ বিক্ষোভকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা

কোটা সংস্কার প্রশ্নে আন্দোলনকারী ছাত্রনেতারা স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে যে সমঝোতায় পৌঁছান, সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জমায়েত হওয়া বিক্ষোভকারীরা মানতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন।

গতরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সোমবার দেশ জুড়ে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভের মুখে সরকার ছাত্রনেতাদের সঙ্গে এই বৈঠকে বসে।

বৈঠকের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের সামনে এসে জানান, আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীরা মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তাদের আন্দোলন স্থগিত রাখতে রাজী হয়েছে।

তিনি বলেন, ছাত্রদের দাবির যৌক্তিকতা সরকার ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। এ নিয়ে সরকার কঠিন অবস্থানে নেই।

তবে তিনি একই সঙ্গে একথাও জানান, যারা রবিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়েছে তাদের কঠিন শাস্তি পেতে হবে।

ওবায়দুল কাদের আরও জানিয়েছেন, মে মাসের ৭ তারিখের মধ্যে সরকার কোটা সংস্কারের দাবি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। আর সে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখতে রাজী হয়েছে ছাত্র নেতারা।

সচিবালয়ের এই বৈঠকে যে ছাত্রনেতারা উপস্থিত ছিলেন তাদের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা হাসান আল মামুন সাংবাদিকদের জানান, ৭ই মে পর্যন্ত তারা আন্দোলন স্থগিত রাখছেন।

সচিবালয়ে এই আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী প্রায় বিশ জন ছাত্র নেতা। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাড়াও আওয়ামী লীগের বেশ কিছু তরুণ নেতা এই বৈঠকে ছিলেন।

গতরাতে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এই আন্দোলন ব্যাপক রূপ নেয় এবং ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল তখন সরকারের তরফ থেকেই প্রথম আলোচনার প্রস্তাব দেয়া হয়।

ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠকে যে সমঝোতা হয়েছে, তাতে গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের মুক্তি এবং আহতদের চিকিৎসার খরচ সরকার বহন করবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

কিন্তু আন্দোলনের নেতারা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে টিএসসির মোড়ে বিক্ষোভরত ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবেশে মেগাফোন হাতে কিছু বলার চেষ্টা করেন তখন ছাত্র-ছাত্রীরা ‘না’ ‘না’ ধ্বনি দিয়ে তাদের থামিয়ে দেয়।

সেখান থেকে জানা যায়, হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী এখনো সেখানে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। তারা এই সমঝোতা মেনে নেবে, আপাতদৃষ্টিতে এখনো পর্যন্ত সেটা মনে হচ্ছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম এন্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের একজন ছাত্র হারুণুর রশীদ বলেন, কেন তারা এটা মানতে চাইছেন না।

‘এটা আন্দোলন দমিয়ে দেয়ার জন্য সরকারের একটা কৌশল। কারণ তারা এক মাস পর এটা বিবেচনা করবে। এক মাস পরে রোজা চলে আসবে। সেসময় ক্যাম্পাসে কেউ থাকবে না। আমার মনে হয় এটা সরকারের একটা চাল।’

বৈঠক শেষে আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দেন পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন।

তবে এই ঘোষণা মানছেন না আন্দোলনকারীরা। তাদের দাবি, দ্রুতই সরকারকে কোটা সংস্কারের দাবি মেনে নিতে হবে। একইসঙ্গে আটককৃতদের ছেড়ে দিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে শাহবাগমুখী সড়কে এরই মধ্যে অবস্থান নিয়েছে আন্দোলনকারীরা। তারা মিছিল করছে, স্লোগান দিচ্ছে। কংক্রিটের বিশাল পাইপ সংগ্রহ করে রাস্তার ওপর রেখেছে যাতে পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকতে না পারে।

এর আগে সচিবালয় থেকে ২০ প্রতিনিধি ফিরে এসে তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানালে আন্দোলনকারীরা তাদের উদ্দেশে, ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দেয়।

আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত শোনার সঙ্গে সঙ্গে ‘মানি না, মানি না’ বলে চিৎকার করে আন্দোলনকারীরা।

প্রতিনিধিরা তখন বলতে থাকে, ‘আপনারা যদি আমাদের সিদ্ধান্ত না মানেন তাহলে আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে সরে যাব।’

হাসান আল মামুন বলেন, ‘এক মাসে দুই বার প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকবেন, কেবিনেট মিটিংয়ে আলোচনাটা দেরি হবে বিধায় এক মাস পেছানো হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে দাবি আদায়ে কার্যকরী সিদ্ধান্ত না হলে প্রয়োজনে আগামী ৭ মে থেকে ফের আন্দোলন।’

আন্দোলনকারীদের আহ্বায়ক এ কথা বলার পর ‘ভুয়া’, ‘মানি না’, ‘মানব না’ বলে স্লোগান দিতে থাকে বিক্ষুব্ধ সাধারণ আন্দোলনকারীরা।

শিক্ষার্থীরা বলে, আগামী মাসে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা। শুরু হবে রমজান মাস। এই পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে মুলা ঝুলিয়েছে সরকার। তারা সিদ্ধান্ত মানবে না। কোটা সংস্কারের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।

সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের নেতৃত্বে বৈঠকে ২০ সদস্য অংশ নেয়। সোমবার সেতু মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এনামুল হক শামীম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, মুক্তযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এস এম কামাল হোসেন, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মী কানিজ ফাতেমা, আফসানা সাফা, একরামুল হক, আল ইমরান হোসাইন, লীনা মিত্র, আরজিনা হাসান, লুবনা জাহান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। থমথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিসি বাংলার শাহনাজ পারভীন জানান, সেখানে পরিস্থিতি এখনো উত্তেজনাপূর্ণ। শত শত ছাত্র-ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মোড়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয়ে সেখানে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে তারা সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা প্রথার সংস্কারের দাবিতে ক্রমাগত শ্লোগান দিচ্ছেন। এই বিক্ষোভকারীদের একই সঙ্গে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানও দিতে দেখা যাচ্ছে।

রোকেয়া হল থেকে আসা একটি বড় ছাত্রী মিছিল এই সমাবেশে যোগ দেয়। এতে একশোর বেশি ছাত্রী ছিল। টিএসসির মোড়ে জমায়েত হওয়া বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছাত্রীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে।

গতরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক সংঘর্ষের সময় যেভাবে তারা পুলিশি হামলার শিকার হয়েছে, সে কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা বেশ বিক্ষুব্ধ। গতরাতের বিক্ষোভ পুলিশ দমন করার পর তাদের আজ সকালের দিকে কিছুটা হতোদ্যেম মনে হচ্ছিল। কিন্তু রাজু ভাস্কর্যের সামনে জমায়েতে বহু ছাত্র-ছাত্রী এসে যোগ দেয়ার পর তাদের নতুন করে উজ্জীবিত বলে মনে হচ্ছে।

কড়া নিরাপত্তা

শাহবাগের মোড় দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকার সময় সেখানে ব্যাপক পুলিশ উপস্থিতি চোখে পড়েছে। যে পরিমান বিক্ষোভকারী ক্যাম্পাসে রয়েছে প্রায় সেই পরিমানে পুলিশ চারিদিকে অবস্থান নিয়েছে।

ছাত্রদের বিক্ষোভ দমনে তৈরি রাখা হয়েছে জলকামানবাহী গাড়ি। শাহবাগের মোড়ে একটি দীর্ঘ কর্ডন তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথ আটকে রেখেছে পুলিশ।

পুলিশের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছে সরকার সমর্থক ছাত্রলীগের বহু কর্মী। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে তারা ক্যাস্পাসে প্রবেশ করছে। মধুর ক্যান্টিনের সামনে ছাত্রলীগের কয়েকশ কর্মী চোখে পড়েছে।

ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীকে কেন সেখানে এসেছে প্রশ্ন করা হলে তারা জানিয়েছে, ছাত্রলীগের একটি সম্মেলন রয়েছে, সেজন্যেই তারা ক্যাম্পাসে এসেছে। কোটা বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে তাদের এই জমায়েতের কোন সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন ছাত্রলীগ কর্মীরা।

তবে ছাত্রলীগ কর্মীদের ভাব দেখে মনে হচ্ছিল, তারা বেশ সতর্ক অবস্থায় আছে।

গতরাতের সংঘর্ষের জের ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে ধর্মঘট হলে যেভাবে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকে, সেরকম একটা অবস্থা চলছে।

দেশজুড়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ

ছাত্রদের আন্দোলন আজ ঢাকার বাইরে আরও বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়েছে।

আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের একটি ফেসবুক পাতা “কোটা সংস্কার চাই (সব ধরণের চাকরির জন্য)” প্রতি মূহুর্তে এই আন্দোলনের নানা খবর দিচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে। সেখানে বিক্ষোভের ছবি এবং ভিডিও আপলোড করা হচ্ছে।

তবে এসব বিক্ষোভের খবর কোন স্বাধীন সূত্র থেকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

এই ফেসবুক পাতাটির ফলোয়োরের সংখ্যা এখন ১৩ লাখের বেশি।

এখনো থমথমে ঢাবি, সংঘর্ষের শঙ্কা

কোটাব্যবস্থা সংস্কারের আন্দোলন আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত স্থগিতের সিদ্ধান্ত মানছেন না সাধারণ আন্দোলনকারীরা। সচিবালয়ে সোমবার বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বৈঠকে আন্দোলন স্থগিতের এই সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠক শেষে সচিবালয় থেকে পরিষদের ১৯ সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজু ভাস্কর্যের সামনে আসেন। এ সময় সেখানে সাধারণ আন্দোলনকারীরা জড়ো হন।

পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানানোর পর ‘ভুয়া মানি না মানব না’ স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষুব্ধ সাধারণ আন্দোলনকারীরা।

এতে পরিষদের আহ্বায়ক বলেন, ‘আপনারা যদি আমাদের সিদ্ধান্ত না মানেন তাহলে আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে সরে যাব। এক মাসে প্রধানমন্ত্রী দুইবার দেশের বাইরে থাকবেন, ক্যাবিনেট মিটিংয়ে আলোচনাটা দেরি হবে বিধায় এক মাস পেছানো হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে দাবি আদায়ে কার্যকরী সিদ্ধান্ত না হলে প্রয়োজনে আগামী ৭ মে ফের আন্দোলন।’

সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, আগামী মাসে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা ও রোজা। এই পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে মুলো ঝুলিয়েছে সরকার। আমরা এ সিদ্ধান্ত মানি না। অন্তত কোটা সংস্কারের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।

এরপর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি মোড়, শাহবাগ মোড়, সব হলের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। রোকেয়া হলের সামনে লাঠি হাতে অবস্থান নেন ছাত্রীরা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান নিয়ে তাদের থামাতে চেয়েছিল সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। কিন্তু আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের ধাওয়া দেন। ধাওয়া খেয়ে মলচত্বরে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। পরিস্থিতি এখনও থমথমে। যে কোনো সময় সংঘর্ষ বাধতে পারে।

সোমবার যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ বৈঠক শুরু হয়। শেষ হয় ৬টা ১৮ মিনিটে।

বেঠক শেষে হাসান আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, কোটাব্যবস্থা সংস্কারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যৌক্তিক সংস্কার করার জন্য জনপ্রশাসন সচিবকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। এ সংস্কার আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ছাত্র-ছাত্রীদের জানিয়ে দেয়া হবে। তাই আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এ আন্দোলন স্থগিত করা হলো। কোটা সংস্কারের বিষয়টি আমলে নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

আটক ও আহতদের সম্পর্কে তিনি বলেন ‘এখন পর্যন্ত আমার যে ভাই-বোনেরা গ্রেফতার হয়েছেন সকলকে নিশর্তভাবে মুক্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যারা আহত হয়েছেন তদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে।’

বৈঠকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এনামুল হক শামীম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, মুক্তযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এস এম কামাল হোসেন, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

আর মামুনের নেতৃত্বে বৈঠকে পরিষদের ২০ সদস্যের মধ্যে কানিজ ফাতেমা, আফসানা সাফা, একরামুল হক, আল ইমরান হোসাইন, লীনা মিত্র, আরজিনা হাসান, লুবনা জাহান প্রমুখ ছিলেন।

তাদের পাঁচ দফা দাবি হলো- কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ না দেয়া, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহারের সুযোগ না দেয়া, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাট মার্কস ও বয়সসীমা নির্ধারণ করা ও কোটায় যোগ্যপ্রার্থী পাওয়া না গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধায় নিয়োগ দেয়া।