আজ শুক্রবার কারওয়ানবাজার ও বাবুবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে চালের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় বস্তা প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দেখা গেছে। খুচরায়ও কেজি প্রতি ১ থেকে ২ টাকা বেশি রাখছেন দোকানিরা। যার কারণ হিসেবে ঈদ ছুটিতে চাল কলগুলো বন্ধ থাকার কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা।
আগামী সপ্তাহে চালের দাম আরও বাড়ার আভাস দিয়ে কারণ হিসেবে ধানের মৌসুম শেষ হওয়ার কথা বলছেন চাল ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা, যদিও শুল্ক কমানোয় চাল আমদানি বেড়েছে ব্যাপকভাবে।
এদিন কারওয়ানবাজারে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা মিনিকেট চাল ২৮০০ থেকে ২৯০০ টাকা, নাজিরশাইল ২৮০০ থেকে ৩৪০০ টাকা, আটাশ ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকা, স্বর্ণা ও ভারত থেকে আসা মোটা চালের বস্তা ২১৫০ থেকে ২২০০ টাকা, পারিজা ২৩০০ টাকা এবং পাইজাম চালের বস্তা ২২০০ টাকায় বিক্রি হয়।
ঈদের আগে এই বাজারে এসব চালের দাম বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে কম ছিল বলে জানান কুমিল্লা রাইস এজেন্সির ব্যবস্থাপক আবুল কাশেম।
অপর দিকে বাবুবাজার চালের পাইকারি আড়তে শুক্রবার প্রকার ভেদে মিনিকেট চাল বস্তা প্রতি ২৭২০ থেকে ২৮৩০ টাকা, নাজিরশাইল ২৮০০ থেকে ৩২০০ টাকা, আটাশ ২৪০০ থেকে ২৪২০ টাকা এবং স্বর্ণা ও গুটি চালের বস্তা ২১৭০ থেকে ২২০০ টাকায় বিক্রি হয়।
বাবুবাজার চালের আড়তে ঈদের পর নতুন করে চাল না ঢোকায় একটু বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে আলোকচান রাইস এজেন্সির বিক্রেতা মো. মফিজ বলেন, “শনিবার থেকে দাম আরও বাড়বে।
খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার পাইকারি বাজারে নাজিরশাইল চাল কেজি প্রতি ৫৩ থেকে ৫৯ টাকা, বিআর আটাশ ও পারিজা ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা এবং গুটি ও স্বর্ণা চাল ৪১ থেকে ৪২ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।
সরকারি হিসেবেই এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে নাজিরশাইল চালের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১ টাকা ৯২ পয়সা। গত ২৯ অগাস্ট নাজিরশাইল চাল বিক্রি হয়েছিল ৫২ থেকে ৫৮ টাকায়।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ঢাকায় সরু চাল কেজি প্রতি ৫২ থেকে ৫৮ টাকা, সাধারণ মানের নাজিরশাইল ও মিনিকেট ৫২ থেকে ৫৫ টাকা, উত্তম মানের নাজিরশাইল ও মিনিকেট ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা, সাধারণ মানের পাইজাম ও লতা চাল ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা, উত্তম মানের পাইজাম ও লতা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, স্বর্ণা ও চায়না ইরি চাল প্রতিকেজি ৪৩ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক আলী শুক্রবার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ঈদের কারণে প্রত্যেকটা মিলই ১০ থেকে ১২ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে, এজন্য চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। মিল খুললেই যে চালের এই বাড়তি দাম কমে যাবে তা কিন্তু নয়। কারণ ধানের মৌসুম শেষ, ধানও শেষের দিকে। আগামী মৌসুমের আগে চালের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
মোটা চালের দাম আমদানিকারকদের কারণে হেরফের হয় জানিয়ে লায়েক আলী বলেন, অনেক সময় পরিবহন খরচ বৃদ্ধি এবং ভারত ও মিয়ানমার দাম বাড়িয়ে দেওয়ার কারণেও মোটা চালের দাম বাড়ে।
বাবু বাজারের চাল বিক্রেতা মো. মফিজ বলেন, “মোকামে বাড়তি দাম, তাই আমাদের এখানেও কিছুটা বাড়তি। শনি-রবিবার থেকে কেজিতে দু-এক টাকা করে বাড়বে। ঈদের জন্য লোকজন নেই, লোকজন এলে বিক্রি বাড়বে, দামও বাড়বে। ঈদের কারণে মিল বন্ধ থাকলেও কারওয়ানবাজারে চালের ঘাটতি তৈরি হয়নি বলে জানান ব্যবসায়ী আবুল কাশেম।
তিনি বলেন, চালের বাজারে গরম ভাবের কথা শুনছি। ঈদের আগের চালই বিক্রি করছি। পাইকারি বাজারের চালের বেশিরভাগ দোকানই খোলেনি, এজন্য দাম কিছুটা বাড়তি।
দাম বৃদ্ধির জন্য মজুদদারদের দায়ী করে এই ব্যবসায়ী বলেন, মোকামের লোকজনই চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করে। তারা চাইলে দাম বাড়বে, তারা চাইলেই কমে; সিন্ডিকেটের মতো।