সাইফুল ইসলামের Rootdine. সাফল্যের গল্প

0
সাইফুল ইসলামের Rootdine এর সাফল্যের গল্প

উদ্দোক্তা হওয়ার স্বপ্ন থাকে অনেকেরই। সবাই এ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতেপারে না। তবে, পিছিয়ে থাকার যুগ এখন আর নেই। শুন্য থেকে উঠে আসা অনেক উদ্দোক্তার গল্প আমাদের জানা আছে। এরকম একজন উদীয়মান উদ্দোক্তার গল্প আজ শুনাবো। যিনি শ্রম, সততা এবং আন্তরিক প্রচেষ্টায় সফলতার দারপ্রান্তে এসেছেন। কিন্তু ধৈর্য তার অগ্রযাত্রায় মূল উপাদান। তিনি অনলাইন শপ Rootdine এর স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন মানুষের ভালোবাসাই তাকে উদ্দোক্তা বানিয়ে দিয়েছে।

২০১১ সালের কথা। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে একাউন্টিং এ মাস্টার্স পাশ করে তিনি জয়েন করেন সনামধন্য ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এডরুক লিমিটেড। পোস্টিং হয় যশোর জেলা। কিন্তু ছয় মাস চাকরি করার পর অসুস্থ হয়ে নিজ জেলা বাগেরহাট ফিরে যান। বেড রেস্টে থেকে থেকেই স্বপ্ন দেখতে থাকেন ব্যবসায়ী হওয়ার। ছেড়ে দেন চাকরি। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন কাজ করবেন নিজ অঞ্চলের বিখ্যাত প্রাকৃতিক পণ্যনিয়ে। তিনি বলেন প্রত্যেক অঞ্চল বা জেলার কিছু স্রষ্টা প্রদত্ত জিনিস থাকে যা অন্য অঞ্চলের মানুষের কাছে দুস্প্রাপ্য। তাই এটির চাহিদা তাদের কাছে অটোমেটিক তৈরি হয়ে আছে। আর যেহেতু এটা স্রষ্টা প্রদত্ত তাই চাইলেই অন্য অঞ্চল এটি তৈরি করতে পারবেনা। যেমনঃ বাগেরহাটের খেজুরের গুড়, নারকেল, নারকেল তেল, চিংড়ি, সুন্দরবনের মধু।

কিন্তু চাইলেই তো আর ব্যবসা শুরু করা যায়না।ব্যবসা শুরু করতে লাগে অর্থ, পারিবারিক সাপোর্ট, এবং সব চেয়ে বড় যেটা প্রয়োজন তা হলো অভিজ্ঞতা। প্রডাক্ট সম্পর্কে অভিজ্ঞতা ছাড়া কোনো ব্যবসাতেই সফলতা আসে না। তাই তিনি চিন্তা করেন এখনই নয় আগে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।ব্যবসা শুরু করতে করতে তার তিন বছর সময় লেগে যায়।

এই তিন বছরের ভিতর তিনি আইডিবি থেকে স্কলারশিপ এ নেটওয়ার্কিং টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা শেষ করেন এবং ঢাকাতে একটা সফটওয়্যার ফার্মে চাকরিতে জয়েন করেন। এই চাকরিতে জয়েন করার পর থেকেই তিনি চাকরির পাশাপাশি এই ব্যবসাটিকে ছোট করে রান করার চিন্তা করেন। প্রথমেই তিনি মধু সংগ্রহ করে তার অফিসের সহকর্মীদের একটু একটু করে দেওয়া শুরু করেন। তাদের কাছ থেকে এই মধু সম্পর্কে ফিডব্যাক নেন, অভিজ্ঞতা অর্জন করতে থাকেন। তাদের মাধ্যমে বাড়তে থাকে কাস্টমারের সংখ্যা। তারপর ধীরেধীরে মধুর যে সোর্স গুলো আছে সেগুলো ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য সে কয়েকবার নিজ জেলা বাগেরহাটে যান। বিশ্বস্ত সোর্সের সন্ধানে লেগে থাকেন, মৌয়ালদের সাথে কথা বলে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এভাবেই মধুটি প্রথমে তার কাছের লোকদেরকে দেন এবং তাদের কাছ থেকে এর খুটিনাটি মতামত সংগ্রহ করেন তারপর সে সিদ্ধান্তে আসেন যে এই মধুর ব্যবসাটি আসলে করা সম্ভব এবং এর সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা পরিপূর্ণ হয়েছে।

দীর্ঘ পাঁচ বছর তিনি এভাবে চালানোর পরে যখন তিনি দেখেছেন তার এই মধুর একটা চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে এবং সবার কাছে এটা গ্রহণযোগ্য প্রডাক্ট হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে তখন তিনি নিশ্চিত হন যে আসলে ব্যবসাটা করা সম্ভব।

তার ব্যবসাকে বড় করে শুরু করার জন্য মুল যে শক্তিটা, এই শক্তি তিনি পেয়েছেন কাস্টমারদের কাছ থেকে। যারা তার মধু সংগ্রহ করেছে তারা ভালো ফিডব্যাক দিয়েছে, নতুন কাস্টমার এনে দিয়েছে। তিনি পাঁচ বছর চাকরির পাশাপাশি এভাবে করার পরে, অনলাইনে এই বিজনেসটা ব্যপক ভাবে করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করেন এবং অনলাইনে পেজ, ওয়েবসাইট, এবং অন্যান্য যেসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আছে সেইসব জায়গায় প্রচারনা শুরু করেন। এভাবেই তার সাফল্যের যাত্রা শুরু হয়েছে। আর ফেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। Rootdine এখন একটি পরিচিত মধুর ব্রান্ড এবং বাগেরহাটের অন্যান্য প্রডাক্ট নিয়ে অনলাইনে ব্যপক সুনাম অর্জন করেছেন।

তিনি বলেন, চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা চালানোটা ছিলো অনেক চ্যালেঞ্জিং। তবে, বাবা-ভাই-বোন বন্ধুরা সবসময় উৎসাহ দিতেন। এসবের মধ্যে ধীরেধীরে ভাগ্য খুলে যায়। ক্রেতাদের ভালবাসাতে মাথায় ব্যবসার পোকাটা স্থায়ী ভাবে ঢুকে যায়। মনস্থির করি, আমাকে ব্যবসায় সফল হতে হবে। সেই থেকে যুদ্ধ শুরু। এরপর প্রায় শূন্য থেকে আজকের এই অবস্থান।

তিনি জানান, চাকরির পাশাপাশি ব্যবসায়ের দেখভাল করতে হয়েছে। ফলে অবসর বলে কিছু ছিলনা। তবে ব্যবসা করা খুব কঠিন, এমনটি কখনো মনে হয়নি। চেষ্টা থাকলে যেকোনো মানুষই ব্যবসা বা কর্মক্ষেত্রে সফল হতে পারবেন। এসব কথা যখন বলছিলেন, তখন তার মুখে সাফল্যর তৃপ্তির হাসি। বললেন, পরিচিত কোনো ব্যক্তি যখন চাকরির করার পাশাপাশি ব্যবসা করার কথা বলেন, আমি তাঁদের উৎসাহ দিই ব্যবসা করো। কারণ, আমরা সবাই জানি, চাকরি এদেশে স্থায়ি কিছুনা। আর প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরিতো কচু পাতার পানির মতো। তার মতে কেউ যদি শতভাগ সততার সঙ্গে কাজ করে, সাফল্য তার মুঠোবন্দী হতে বাধ্য।

ফেইসবুক পেইজঃ https://www.facebook.com/rootdine/
ওয়েবসাইটঃ www.rootdine.com