আমরা সিনেমা কেনো দেখি? নিছক বিনোদনের উদ্দেশ্যে? বিনোদনের বাইরেও সিনেমাকে অনেকে জীবনের আয়না হিসেবে দেখে! আয়নার প্রতিবিম্বে যেমন নিজেকে দেখতে পাই তেমনি করে সিনেমাও মাঝেমাঝে ভেতরকে নাড়িয়ে দেয়, জাগিয়ে দেয় ভাবনাকে। সাদামাটা অথচ অনবদ্য, দার্শনিকতাকে জাগানো হলিউডের এমন পাঁচটি সিনেমা নিয়ে জানি চলুন…
• লাইফ ইজ বিউটিফুল (১৯৯৭)
“জন্ম মানে মৃত্যুর প্রতি অমোঘ যাত্রা, জন্মদিন মানে একটি সিঁড়ি অতিক্রম”…’রুদ্র মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ’র পঙ্কতিটুকুন কমবেশি সবারই জানা। তেমনি ইতালিয়ান সিনেমা ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’ও কমবেশি সবার দেখা। জীবন সুন্দর, নির্মমও বটে। নির্মমতাকে পাশ কাটিয়ে সৌন্দর্য্যকে উপভোগ করতে হয়। সেই সুযোগটুকুও যদি না থাকে কল্পনায় একটা জগৎ সৃষ্টি করে হলেও ভালো থাকতে হয়। ইতালিয়ান এই সিনেমাটি এসবকিছু নিয়ে ভাবাবে আপনাকে। ভাবনায় ডুবিয়ে গল্প বলে যাবে। ত্যাগের গল্প, দায়িত্বের গল্প, উপস্থিত বুদ্ধির গল্প। শেষটা যেমন চোখে জল আনবে তেমনি একচিলতে হাসিতে অলক্ষ্যেই উচ্চারিত হবে ‘লাইফ ইজ রিয়েলি বিউটিফুল!’
• ইটস ওয়ান্ডারফুল লাইফ (১৯৪৬)
জন্ম নিলে মৃত্যু নিশ্চিত, না জন্মিলে? যদি আমাদের জন্মই না হতো? পৃথিবীতে কেউই ব্যর্থ নয় যার বন্ধু আছে! হতাশায় ভুগছেন? সিনেমাটি দেখুন। মন ভীষণ ফুরফুরে? পরিবার নিয়ে বসে পড়ুন। সাদাকালো হলেও একরত্তি বিরক্ত হবেন না সর্বকালের অন্যতম সেরা এই মুভি দেখে। সিনেমার নায়ক হতাশায় ভোগে। নিজেকে শেষ করতে চায়। ঠিক এমন সময় দেবদূত আসে। গল্প মোড় নেয়!
• দ্য কিউরিয়াস কেইস অব বেঞ্জামিন বাটন (২০০৮)
চারদেয়ালে একলা বন্দী থাকলে কত কিছু মাথায় উঁকি মারে! উদ্ভট চিন্তা ভাবনা ঘিরে ধরে। কখনও ভাবি, যে প্রক্রিয়ায় জীবন চলছে তার উল্টোভাবে চললে কী হতো! বিধাতার খেয়ালে আমরা বেড়ে উঠছি আমাদের মতো করে। ১৯২২ সালে প্রকাশিত ‘স্কট ফিৎজেরাল্ড’ এর ছোটগল্প ‘দ্য কিউরিয়াস কেইস অব বেঞ্জামিন বাটন’ অবলম্বনে পরিচালক ডেভিড ফিঞ্চার অল্প অল্প করে পর্দায় বেঞ্জামিনের পুরো গল্পটা সাজিয়েছেন। আর আমাদের ভাবিয়েছেন, শিখিয়েছেন হাজার প্রতিকূলতার মাঝেও কিভাবে জীবনকে উপভোগ করতে; আত্নবিশ্বাসী হতে হয়, সন্তুষ্ট থাকতে হয়।
• চিলড্রেন অব হ্যাভেন (১৯৯৭)
কেউ কেউ অনেক পেয়েও সুখটুকু পায় না। আবার কেউ আছেন, অল্পেই তুষ্ট। একজোড়া স্কুল কেডস কতখানি গুরুত্ব রাখে আমাদের কাছে? ইরানি সিনেমাটি দেখুন, সাধারণ প্রশ্নটিই অন্যরকম হয়ে ঘুরপাক খাবে মনের জগতে! মাঝেমাঝে সিনেমা দেখে কাঁদতে হয়, নিজেকে ফিল করতে হয়! এটি তেমন এক সিনেমা। ছোটো দুই শিশুকে নিয়ে পরিচালক মাজিদ মাজিদি সবার হৃদয় ছুঁয়েছেন। দুই ভাইবোন, যাদের পরিবার চূড়ান্ত হতদরিদ্র। তাদের গল্পটাই এগিয়ে চলে, যা দর্শককে মুগ্ধ করে রাখবে।
• দ্য বাইসাইকেল থিপ (১৯৪৮)
আমাদের চারপাশে এমন অসংখ্য মানুষ রয়েছে যাদের ইচ্ছের ডানা কেটে যায় ভোরের প্রথম প্রহরে। কেউ কেউ মুষড়ে পড়ে, কেউ ঝেড়ে কাশে, কেউ আবার কিছু বুঝে উঠার আগে বদলে যায় দৃশ্যপট। জীবন এমনই। কখনও উজাড় করে বর দিবে, আবার আশার আলো নিভিয়ে দেবে দপ করে!
‘দ্য বাইসাইকেল থিপ’, বাংলায় সাইকেল চোর। ফিল্ম ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই সিনেমা ৭০ বছর পরেও বড্ড বাস্তবিক। চুরি, প্রশাসনের আলসেমি, সমাজ ব্যবস্থা, দারিদ্রতা, বেকারত্ব সবমিলিয়ে বর্তমানের আয়না যেন ৯ জন লেখকের সম্মিলিত এই চিত্রনাট্য! এত বছর পরেও এর আবেদন কমেনি। ইতালিয়ান চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির চিত্র বদলে দেবার পেছনে বাইসাইকেল থিপের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
উপরের চলচ্চিত্রগুলো স্রেফ রূপালি পর্দায় কয়েক ঘন্টার চিত্রায়ণ নয়। প্রতিটি সিনেমাই দর্শকের মনের অন্দরমহলে প্রবেশ করে ভাবাবে জীবন নিয়ে।