ঈদের ছুটিতে পুলিশের পক্ষ থেকে আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। তবে শুধু পুলিশের ভরসায় নিরাপদ ভেবে খালি বাসায় টাকা-স্বর্ণের মতো মূল্যবান সম্পদ রেখে বাড়ি না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, রাজধানীর লাখ লাখ বাসা শুধু পুলিশের পক্ষে পাহারা দেওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই বাসা সুরক্ষিত আছে কি না চেক করা, যাওয়ার সময় নিরাপত্তারক্ষীকে বলে যাওয়া বা প্রতিবেশীকে বলে যাওয়ারও অনুরোধ জানান তিনি।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে মঙ্গলবার (২০ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।
ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফাঁকা বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে কমিশনার বলেন, ঈদের ছুটিতে পুলিশের পক্ষ থেকে আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। অনেক মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে যায়, এর ফলে বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনেকটা অরক্ষিত অবস্থায় থাকে। যার ফলে চুরি-ডাকাতি, সম্পদহানির আশঙ্কা থাকে। এ নিয়ে গত ১৫ দিন ধরে আমরা কাজ করেছি, এ সময়ে একাধিক চোর-ডাকাত পার্টিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে নিজ বাড়ির নিরাপত্তার প্রাথমিক দায়িত্ব নিজেকেই পালন করতে হবে।
কমিশনার বলেন, আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। কোরবানির পশুর হাটগুলোর ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ ঢাকা মহানগরীর সব বিপনিবিতান, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তির টাকা লেনদেন ও পরিবহনে মানি এস্কর্ট ব্যবস্থা প্রবর্তন, সব লঞ্চ ও বাস টার্মিনাল কেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
কমিশনার বলেন, ডিএমপির জনবল স্বল্পতা থাকা সত্ত্বেও ঈদের ছুটির সময়ে পুলিশি টহল বৃদ্ধিসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন ও গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই রোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আমরা বিশ্বাস করি পুলিশের নেওয়া পদক্ষেপের পাশাপাশি ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে যদি নিরাপত্তা সচেতনতাবোধ তৈরি হয় তাহলে পুলিশ এবং ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগ ও অংশগ্রহণে সার্বিক আইন-শৃংঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও অপরাধ দমনে অনেক বেশি সফল হওয়া সম্ভব।
সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে আসন্ন ঈদে আপনার প্রতিষ্ঠান, বিপনিবিতান, আবাসনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশের নেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি নিচের নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করার জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ জানান তিনি।
১. নিজস্ব প্রতিষ্ঠান, আবাসন, অ্যাপার্টমেন্ট, বিপনিবিতানে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সিকিউরিটি গার্ডের ডিউটি জোরদার করা এবং যেকোনো ধরনের অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে ২৪ ঘণ্টা নজরদারির ব্যবস্থা রাখা। সিকিউরিটি গার্ডের ডিউটি তদারক করার জন্য মার্কেট মালিক সমিতি, ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ইত্যাদি কর্তৃক তদারকি কমিটি করে ২৪ ঘণ্টা পালাক্রমে উক্ত কমিটি দায়িত্ব পালন করবেন।
২. দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীদের ব্যক্তিগত প্রাক-পরিচিতি পুলিশের মাধ্যমে যাচাই করার ব্যবস্থা করা।
৩. প্রতিষ্ঠান, বিপনিবিতান, আবাসনে সিসিটিভি স্থাপন করুন। সিসিটিভিসহ অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা সক্রিয় থাকার বিষয়টি নিয়মিত নিশ্চিত করুন।
৪. সিসি ক্যামেরার ক্ষেত্রে ধারণকৃত ভিডিও হার্ড ডিস্কে ঠিকমত রেকর্ড হচ্ছে কি না তা নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
৫. প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একসঙ্গে ছুটি না দিয়ে একটি অংশকে দায়িত্ব পালনে প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করতে পারেন।
৬. দায়িত্বরত গার্ড এবং প্রতিষ্ঠানের কাছে নিকটস্থ থানা, সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ এবং পুলিশ কন্ট্রোলরুমের মোবাইল এবং ল্যান্ড ফোনের নম্বর রাখা, যাতে যেকোনো দুর্ঘটনা, অপরাধ সংঘটনের আশংকা তৈরি হলে দ্রুত পুলিশকে অবহিত করুন।
৭. মূল্যবান সামগ্রী যেমন স্বর্ণালংকার, দলিল, অর্থ ইত্যাদি নিরাপদ হেফাজতে রাখুন এবং তালাবদ্ধ করুন। কাছের আত্মীয়-স্বজনের কাছে রাখুন অথবা ব্যাংক লকারের সহায়তা নিন।
৮. বাসা ত্যাগের আগে রুমের দরজা-জানালা সঠিকভাবে তালাবদ্ধ করুন। যেসব দরজা জানালা। দুর্বল অবস্থায় আছে তা মেরামতের মাধ্যমে সুরক্ষিত করে নিন। প্রয়োজনে একাধিক তালা ব্যবহার করুন।
৯. বাসা ত্যাগের আগে যেসব প্রতিবেশী বা পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা ঢাকায় অবস্থান করবেন তাদেরকে আপনার বাসার প্রতি লক্ষ্য রাখতে অনুরোধ করুন এবং ফোনে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন।
১০. আপনার অনুমতি না নিয়ে কেউ যেন বাসায় প্রবেশ করতে না পারে এ বিষয়ে বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীকে সতর্ক করুন। নিরাপত্তাকর্মী না থাকলে আগন্তুক এর পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে দরজা খুলবেন না।
১১. মহল্লা ও বাড়ির সামনে সন্দেহজনক কাউকে ঘোরাফেরা করতে দেখলে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি ও থানাকে অবহিত করুন।