যশোর শহরের বেশিরভাগ হোটেল, চায়ের দোকান ও রেঁস্তোরায় সরবরাহ করা খাবার পানিতে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এমন ধরনের ক্ষতিকর অণুজীবের উপস্থিতি শনাক্ত করা গেছে। সম্প্রতি যবিপ্রবি এর এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত কয়েক মাস যাবত যশোর পৌরসভার বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকানে সরবারাহকৃত পানির গুণগতমান নির্ধারণে একটি সমীক্ষা চালান যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের একদল গবেষক। সেই সমীক্ষার ফলাফলে সরবরাহকৃত পানির নমুনায়ই অণুজীবের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে।
জানা যায়, গবেষক দলটি যশোর পৌরসভার বিভিন্ন চায়ের দোকান, রাস্তার পাশের ফাস্ট ফুডের দোকান, সাধারণ রেস্তোঁরা ও সজ্জিত রেস্তোঁরাসহ মোট ৩৫টি স্থানের পানির নমুনা সংগ্রহ করে পানির গুণগতমান যাচাই করে। এই গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, নমুনাগুলোর পানির অস্বচ্ছতা (টার্বিডিটি), বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা, পিএইচ (Ph), মোট দ্রবীভূত দ্রবণ, নাইট্রেট, সালফেট, ফসফেটের মানসমূহ বাংলাদেশ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত সীমার মধ্যে থাকলেও বেশ কয়েকটি নমুনায় ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের ঘনত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানের চেয়ে বেশি ছিল। শুধু তাই নয় ৪৬% নমুনায় লৌহের ঘনত্ব তো বাংলাদেশ অনুমোদিত সীমাই ছাড়িয়ে গেছে।
পাশাপাশি বেশিরভাগ নমুনাগুলোই ফিকাল কলিফর্ম (স্তন্যপায়ী প্রাণীর পেট থেকে মলমূত্রের মাধ্যমে বা মৃতদেহ পচে জলে বা মাটিতে মেশা বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া) দ্বারা দূষিত হয়েছে। এসকল নমুনার মধ্যে বিশেষ করে রাস্তার পাশের ফাস্টফুডের ও ফুচকার দোকানগুলোতে সরবরাহ করা পানি জৈবিকভাবে খুবই দূষিত বলে প্রমাণিত হয়েছে।
গবেষক দলের মতে, যশোর পৌরসভার খাবারের দোকান এবং রেস্তোঁরাগুলোতে সরবারাহকৃত পানি জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক ও হুমকিস্বরূপ। তাই এই সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে যশোর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও দায়িত্বরত প্রশাসনকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।
গবেষণার প্রাপ্ত এ ফলাফলগুলো Springer Publication এর Applied Water Science জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে বলে জানা গেছে। এই গবেষণা দলটির সম্পূর্ণ নেতৃত্বে ছিলেন যবিপ্রবি ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষেদের ডিন এবং পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের (ইএসটি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাইবুর রহমান মোল্যা।
এছাড়াও সদস্য হিসেবে ছিলেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ সাদিদ হোসেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক এফ কে সায়মা তানজীয়া ও যবিপ্রবি ইএসটি বিভাগের স্নাতকোক্তর শিক্ষার্থী শিরিনা আক্তার।
