নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটে ফেন্সি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট নামের একটি রেস্তোরাঁসহ তিনটি দোকানে তালা লাগিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মেয়র কাদের মির্জার বিরুদ্ধে।
রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় ‘দলীয় প্রতিপক্ষের কাছে খাবার বিক্রি’ করার অজুহাতে ৩০-৪০ জনকে নিয়ে ফেন্সি হোটেলে এ কান্ড ঘটান মেয়র। এ সময় হোটেলের সামনে থাকা দু-তিনটা মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
অপরদিকে দোকানের সামনে মোটরসাইকেল রাখায় ফারহানা হার্ডওয়্যার ও কামালের সবজির আড়তেও তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। পরে রাতে কামালের দোকানের চাবি ফেরত দিলেও বাকি দোকানগুলো বন্ধ রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা গণমাধ্যমকে জানান, রোববার বসুরহাট বাজারের দিন থাকায় লোক সমাগম অনেক বেশি ছিল। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মেয়র কাদের মির্জা পৌরসভা থেকে ৩০-৪০ জন অনুসারী নিয়ে হোটেলের সামনে এসে মালিক পক্ষকে গালিগালাজ করতে থাকেন। পরে ভেতরে নাস্তা খেতে আসা হোটেল ভর্তি লোকজনকে বের করে দিয়ে ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন।
হোটেলের মালিক পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মেয়ের জামাতা মো. সুরুজ মিয়া। সোহরাওয়ার্দীর ছোটভাই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সেলিম চৌধুরী বাবুল। তিনি বসুরহাট সরকারি মুজিব কলেজের সাবেক ভিপি। তিনি একসময় কাদের মির্জার অনুসারী থাকলেও সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
হোটেল মালিক মো. সুরুজ মিয়া জানান, মেয়র আবদুল কাদের মির্জা নিজেই লোকজন নিয়ে এসে তার হোটেলে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। কী কারণে বা কোন অপরাধে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হলো তা তিনি একদম জানেন না। তবে শুনেছেন মেয়রের ভাগিনা মাহবুবুর রশিদ মঞ্জুর লোকজন এখান থেকে খাবার নেওয়ার কথা শুনে মেয়র রাগ করেছেন বলে তিনি শুনেছেন।
এ ব্যাপারে জানার জন্য রবিবার রাতে আবদুল কাদের মির্জার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ এক অনুসারী দাবি করেন, হোটেলের কিছু অংশ সরকারি জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের সামনে সবসময় ময়লা ফেলা ও গাড়ি রেখে যানজট তৈরি করা হয় এবং এই বিষয়ে বারবার সতর্ক করা হলেও তারা কথা শোনেননি।
মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ঘোষিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইস্কান্দার হায়দার চৌধুরী বাবুল বলেন, হেটেলের মালিক মো. সুরুজ মিয়া তাকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে সরাসরি মেয়রের সঙ্গে কথা বলতে মালিককে পরামর্শ দিয়েছেন।
মেয়র আবদুল কাদের মির্জার ভাগনে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের মুখপাত্র মাহবুবুর রশিদ মঞ্জু বলেন, ওই হোটেল থেকে তিনি বা তার কোনো লোকজন খাবার কিনতে যাননি। একই অভিযোগে এর আগেও অন্য আরেকটি হোটেলে ভাঙচুর করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
বসুরহাটের মেইন রোডের ফারহানা হার্ডওয়্যারের মালিক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, বিকেলে তিনি আসরের নামাজ পড়তে মসজিদে গেলে মেয়র এসে তার দোকানে তালা লাগিয়ে দেন। শুনেছেন দোকানের সামনে কারো একটা মোটরসাইকেল রাখা ছিল। তা দেখে মেয়র ক্ষিপ্ত হয়েছেন।
একই অভিযোগে হাইস্কুল রোডের কামালের সবজির আড়তেও তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। আড়তদার কামাল উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, রাতে তার দোকানের চাবি ফেরত দেওয়া হয়েছে।
কোম্পানিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, দোকান বন্ধের বিষয়ে মালিকপক্ষের কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।