সিনেমার পোকাদের কাছে আইএমডিবি বেশ পরিচিত নাম। ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজ বা সংক্ষেপে আইএমডিবি (IMDb) বিশ্বের সবচাইতে বড় অনলাইন মুভি ডেটাবেজ। কোনো মুভির খুঁটিনাটি জানতে সবার প্রথম পছন্দ এটি। কোনো মুভিতে কে কে থাকছেন, পরিচালনায় কে, বাজেট কত ইত্যাদি নানাবিধ তথ্যের জন্য এর জুড়ি মেলা ভার।
আইএমডিবির প্রতিষ্ঠাতা কোল নিডহ্যামের হাতে এখনও রয়েছে সিইও-র দায়িত্ব। ওয়েবসাইট শুরুর ভাবনাটি কোথা থেকে এলো, এমন প্রশ্ন জাগতেই পারে। নিডহ্যামের বয়স যখন মাত্র চার বছর, তখন একটি ছবি আঁকা প্রতিযোগীতায় পুরষ্কার হিসেবে জিতে নেন ‘’স্নো হোয়াইট অ্যান্ড দ্য সেভেন ডোয়ার্ফ” সিনেমার টিকিট। সেখান থেকে সিনেমার প্রতি ভালো লাগা শুরু। তারপর যখন ভিসিআরের চলন এলো, সেই ভালো লাগা আরও বাড়লো। এক বন্ধুর ভিডিয়ো শপ ছিল, যেখান থেকে ভিসিআর এনে নিয়মিত মুভি দেখতেন আর বিবিধ বিষয়াদি ডায়েরিতে নোট করতেন। মুভির নাম, পরিচালক, কলাকুশলী থেকে শুরু করে প্রযোজক, স্টুডিও সব কিছু নোট করতেন নিডহ্যাম। থাকলেন। একটা সময় পর তিনি ভাবলেন, ডায়েরিতে লেখার কষ্ট কেনো করছি? একটি ডাটাবেজেই সবকিছু যোগ করে রাখতে পারি। প্রযুক্তিতেও ছিল আগ্রহ। ১২ বছর বয়সে বড়দিনের উপহার হিসেবে কম্পিউটার পান। এরপর ইউনিভার্সিটি অফ লিডস থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন নিডহ্যাম।
এর আগে ভাবনা অনুযায়ী একটি ডাটাবেজে তিনি যেসব সিনেমা দেখেছেন সেগুলোর তথ্য লিখতে লাগলেন। ১৯৮৫ সালে অনলাইনে একটি গ্রুপের সাথে পরিচিত হন, যেখানে মুভিপ্রেমীরা তাকে তার ডেটাবেজ সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করে।ম১৯৯০ সালে তিনি একে সফটওয়্যারে পরিণত করলেন, যাতে সেটি ইন্টারনেট সংযোগ আছে এমন কম্পিউটারে ব্যবহার করা যায়। দঅনলাইনে পাবলিশ করলেন আইএমডিবি নামে। এভাবে চললো কয়েক বছর। ১৯৯৩ সালে কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির পিএইচডির একজন শিক্ষার্থী তাকে পরামর্শ দিলেন, এই ডেটাবেজটিকে একটি ওয়েবসাইটের সাথেযুক্ত করতে। এতে আরও অনেকে এই ডেটেবেজের সাথে যুক্ত হতে পারবে। মূলত এরপরেই আইএমডিবি ওয়েবসাইট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা পায়। আইএমডিবি যখন নাম যশ কামিয়ে কোম্পানি হিসেবে পরিণত হতে শুরু করে, তখন ১৯৯৮ সালে অ্যামাজন ৫৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে কিনে নেয় আইএমডিবিকে।
আইএমডিবির রেটিংয়ের গ্রহণযোগ্যতা তুমুল। বলা ভালো, সবার চেয়ে বেশি। এখানে রেটিং বেশি হলে, দর্শকেরা সেই সিনেমাকে সাদরে গ্রহণ করে। এর রেটিং নির্ধারিত হয় ব্যবহারকারীদের দেয়া রেটিংয়ের উপর। ওয়েবসাইটে লগইন করে নির্দিষ্ট সিনেমায় রেট করতে পারেন তারা। আইএমডিবি ছাড়াও অসংখ্য মুভি ক্রিটিক ওয়েবসাইট আছে, যাদের অধিকাংশ রিভিউতে জোর দেয় বেশি। কিন্তু আইএমডিবি কেবল রিভিউতে বিশ্বাসী নয়। তারা সিনেমার বিভিন্ন বিষয়াদি তুলে ধরার পাশাপাশি উক্ত সিনেমার সাথে যারা জড়িত তাদের সমন্ধেও তুলে ধরেন। কলাকুশলীদের পোর্টফলিও থাকায় দর্শকরা বিশদ জানতে পারেন পছন্দের ব্যক্তির ব্যাপারে। এছাড়া সিনেমাটি কোনো অ্যাওয়ার্ডে কয়টা পুরস্কার পেলো, কয়বার মনোনীত হলো এসব উল্লেখ থাকায় সবিস্তারে জানা যায়। যেহেতু এটি একটি বৈশ্বিক ওয়েবসাইট এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেওয়া, ফলে এক দেশের সিনেপ্রেমী আরেক দেশের সিনেমা সম্পর্কে জানতে পারে। এতে আগ্রহ বাড়ে বিশ্ব চলচ্চিত্রের প্রতি। যার প্রমাণ মেলে শশাঙ্ক রিডেম্পশন চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে। মুক্তির পর ফ্লপ হওয়া এই সিনেমাটি আইএমডিবির বদৌলতে বর্তমান সময়ে সবার পছন্দের শীর্ষে। রেটিংয়েও দখল করে আছে শীর্ষস্থান।
দুই যুগের বেশি সময় ধরে আইএমডিবি সাফল্যের সাথে পরিচালনা করে আসছে নিজেদের। সমৃদ্ধ হচ্ছে বিশ্ব চলচ্চিত্র, আর তা ভক্তদের কাছে পৌঁছে দিতে আইএমডিবির রয়েছে উল্লেখযোগ্য অবদান।