কিছু মানুষের কথা না জানলে মনে হবে জীবনের ষোল আনাই বৃথা। কিছু জীবনযুদ্ধের গল্প আপনার আনাড়ি হয়ে থাকার হাজারটা অজুহাতকে এক নিমেষেই হারিয়ে দিতে পারে।
হ্যা আজ বলবো একজন আজন্ম অপরাজেয় মানুষের জীবন গল্প। ১৯১০ সালের ২১ জানুয়ারী হাঙ্গেরিতে এক সাধারণ পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন এই অসাধারণ মানুষটি। নাম তার ক্যারোলি। পুরো নাম karoly Takacs।
শ্যুটিং এ হাত পাকিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেন ১৯৪০ সালের আন্তর্জাতিক অলিম্পিকের। নিখুঁত থেকে আরো নিখুঁত শ্যুটার হবার চেষ্টা চলছে তখন পুরো দমে। এরই মধ্যে ১৯৩৮ সালের প্রথম দিকে শুরু হলো তার আর্মি ট্রেনিং।
এই ট্রেনিং ক্যাম্পেই ভাগ্য তার সাথে করলো এক নির্মম উপহাস। হাজার চোখের স্বপ্নে লালন করা সেই নিখুঁত শ্যুটার হাত এক নিমেষেই ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল হ্যান্ড গ্রেনেটের আঘাতে। কে জানে অন্তরীক্ষে বসে সৃষ্টিকর্তা হয়তো তার জীবন নকশায় একেঁছিলেন ভিন্ন কিছু?
দুর্ঘটনার পর দীর্ঘ একমাস চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। ডান হাত কেটে ফেলা হয় তার। এক হাতেই শুরু করেন নতুন জীবনের খোঁজ। এ জীবনে অপূর্ণতা ছিল ঠিকই তবে পূর্ণতা ছিল স্বপ্নে। একটি হাত নেই এমন হাতাশার বাণী নয় বরং এখনও একটি হাত আছে সেই আশার বাণীই তাকে নিরাশ হতে দেয়নি।
বাম হাতেই শুরু করেন শ্যুটিং এর চর্চা। চারপাশের নানান সমালোচনার মধ্য দিয়ে চলতে থাকলো তার ১৯৪৪ সালের অলিম্পিকের স্বপ্ন দেখা। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্যে সেটাও বন্ধ হয়ে গেল। নাহ তবুও থেমে গেলেন না ক্যারোলি। এগিয়ে চলল পরবর্তি অলিম্পিকের প্রস্তুতি।
১৯৪৮ সালের অলিম্পিকে এলো সেই প্রতীক্ষিত দিনটি। দীর্ঘ সংগ্রামের পর অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করলেন ক্যারোলি। একটি মাত্র হাতের নিখুঁত ছোঁয়ায় সবাইকে মাত করে দিলেন। প্রথমবারের মত অলিম্পিকে সেরা শ্যুটার হিসেবে স্বর্ণ জিতলেন তিনি। না এখানেই শেষ নয়। তিনি ১৯৫২ সালের অলিম্পিকেও অংশগ্রহণ করলেন এবং দ্বিতীয়বার স্বর্ণ জিতলেন।
প্রথমবারের মত অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় শ্যুটিং এ দুবার স্বর্ণ জেতার ইতিহাস গড়লেন ক্যারোলি। এক হাতেই যিনি বিশ্ব জয় করে নিলেন। আর সাথে জয় করলেন অগণিত মানুষের ভালোবাসা…
আত্ম-উন্নয়ন ও মেডিটেশন ক্যাটাগরির সকল বই দেখুন
শুভ কামনায়
রকমারি ডট কম