ডুব গোলাপের বিছানা নয়

0
ডুব

এই ছবি দেখতে হলে দুটি শর্ত আমি দেব ব্যাক্তিগতভাবেঃ

শর্ত-১ – ” ডুব হুমায়ূন আহমেদ এর বায়োপিক/জীবনি ” এই ধারণা নিয়ে হল এ প্রবেশ করা যাবে না।

শর্ত-২ – হুমায়ূন আহমেদ কে? অথবা শুধু নামে হুমায়ূন আহমেদ কে চেনা কারণ উনি মেয়ের বান্ধবীকে বিবাহ করেছিলেন এই ভাবে চিনলে হল এ ঢুকা থেকে বিরত থাকবেন। সেই টাকা দিয়ে বলাকায় শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ পপকর্ণ সহ দেখে খেয়ে আসবেন।
ডুব
এই দুটি শর্তের কন্ট্রাস্ট কম্পেয়ার এ যাব এবার।
”গুণী নির্মাতা মুস্তাফা সারোয়ার ফারুকি বরাবরের মত সিনেমার নামে সুন্দর একটি ৮৫ মিনিট এর টেলিফিল্ম বানালেন ” এই কথা বাঙ্গালি বলবেই। কারণ পর্দায় ছোপ ছোপ দাগ আর গান বাজনা না থাকলে একে সিনেমা মানতে আমাদের মনে খুত খুত করে।

শুধুমাত্র ডুব ছবির কাহিনীকে যদি বিশ্লেষণ করি , তবে ডুব হল একটি পারিবারিক সঙ্কট এর গল্প। এই সঙ্কট সাধারণ কোন সঙ্কট না, এই সঙ্কট প্রকট একটি সঙ্কট। যার নেপথ্যের নায়ক ইরফান খান একজন ঝাপসা আবেগের মানুষ। এই প্রচ্ছন্ন আবেগের মানুষ এক সময় প্রকট ভালোবেসে যাকে বিয়ে করেছিলেন, তার সমাপ্তি ঘটান নতুন আরেকটি অধ্যায়ের সূচনার মাধ্যমে।

ডুব ছবির অনেক বড় একটা চরিত্র হচ্ছে নৈশব্দ। চরিত্রগুলোর যে হাহাকার তা নৈশব্দ ছাড়া বোঝানো সম্ভবও নয়। প্রচণ্ড মান/অভিমান এর ছবি ডুব, “অভিমান জমে জমে আমি ব্যাথাহীন” শেষ পর্যন্ত যা ভয়াবহ এবং একই সাথে অর্থবহ নিস্তবধতা তৈরি করে।
ডুব ছবির প্রথমার্ধ দীর্ঘ, কাহিনির ব্যাপ্তি অনেক সময় নিয়ে নিলেও পরিচালক শেষার্ধ বুলেটের মত শেষ করেছেন।

এবার আসি হুমায়ূন আহমেদ এর সাথে এই ছবির সম্পৃক্ততার ব্যাপারে। ইহা কথা সত্য পরিচালক সাহেব হুমায়ূন আহমেদ এর জীবনের কিছুটা অংশ এখানে ব্যাবহার করেছেন, এটা উনি স্বীকার করুক অথবা না করুক, উনি কিংবা দর্শক এর কারোরই তা বুঝতে গবেষণার প্রয়োজন নাই। উনি গল্প নিয়ে খেলেছেন। এখান অখান থেকে কাহিনী জোড়া লাগীয়ে সুন্দর এক কাপ চা বানিয়েছেন। সেই চা তিনি আমাদের পর্দার আড়ালে থেকে হুমায়ূন চা বলে খাওয়াচ্ছেন। আমরা সেই চা খাচ্ছি। উনি ভাল করেই জানেন এই চা হুমায়ূন মিশ্রিত না হলে বাঙ্গালি খেত না এবং মজার ব্যাপার হলো এই চা ঠান্ডা হতে শুরু করেছে। মানুষ বুঝতে পেরেছে এই চা তে শুধু হুমায়ূন আহমেদ কে ব্যাবহার করা হয়েছে ফ্লেভার হিসেবে, সিমপ্লি আর কিচ্ছু না।

হুমায়ূন আহমেদ স্যার এর শেষ সময়কার একটা বই “মেঘের ওপর বাড়ি” এই বইতে লেখক নিজেই তার মৃত্যু নিয়ে কাহিনির খেলা খেলেছেন, ঠিক যেমনটা তিনি মিছির আলীকে নিয়ে খেলতেন। ওই বই পড়লে হঠাত মনে হবে , আল্লাহ্‌ এটাত ঊনার ই কাহিনী, আবার লেখক হঠাত করেই পাঠককে পাজল্ড করে দিয়েছেন। উনি ভালবাসতেন দর্শক কে পাজল্ড করতে। মুস্তফা সারোয়ার ফারুকিও সেইম একই কাজটা করেছেন, কিন্তু খুব আনাড়িভাবে। উনি হুমায়ূন আহমেদ এর শুধু স্পর্শকাতর ব্যাপারটা নিয়ে খেলেছেন।

হুমায়ূন আহমেদ এর বায়োপিক বানানো এতটা সহজ কাজ না। উনি একজন মাল্টি ডাইমেনশনাল মানুষ ছিলেন। সাহিত্য,সিনেমা,শিক্ষা এবং ব্যাক্তি হুমায়ূন কে সামান্য ডুব, আই রিপিট সামান্য ডুব দিয়ে মেজার করা হবে জগতের শ্রেষ্ঠ বোকামির মধ্যে একটা। হুমায়ূন আহমেদ স্যার এর ভাষায় তাকে সকাল-বিকাল নিয়ম করে থাপড়ানো দরকার।

ইরফান খান এমনই, গভীর অভিনয়। তিশার অভিনয় আসলেই সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে।

তবে হ্যা, পরিচালক বললেন এটা হুমায়ূন আহমেদ এর বায়ো না, কিন্তু আমি বলি কি গুলতেকিন আহমেদ চরিত্রে রোকেয়া প্রাচীকে কিন্তু দারুন মানিয়েছে যার সাবেক স্বামী আসিফ নজরুল এবং তার বর্তমান স্ত্রী কিন্তু হুমায়ূন কন্যা শিলা আহমেদ।
ফারুকি সাহেব, ডুবে ডুবে নিজেও খেলেন আমাদেরও খাওয়ালেন।

দেয়ারফোর, হলে গিয়ে মুভিটা দেখে আসতে পারেন অবশ্যই। পাপ হবে না এটলিস্ট।

লেখকঃ Muttakin Khokon

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে