সানজিদুল আলম
এদেশে ব্যর্থতার মূল কারণ গুলোর মধ্যে একটা হল বন্ধুবান্ধব, আত্নীয়স্বজন বা আশেপাশের মানুষদের কাছ থেকে নিরুৎসাহিত হওয়া। আপনি ধরুন উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হয়েছেন বলে পেপারে আপনার একপৃষ্ঠা ইন্টার্ভিউ আসলো, আপনার আশেপাশের মানুষদের চোখে পরবেনা এটা। কিন্তু আপনার প্রতিষ্ঠানের ছোট কোন অনিয়মের ছোট একটা নিউজ যদি পত্রিকার এক কর্নারেও আসে, সেই একই মানুষেরা পেপারকাটিং নিয়ে ঘুরবে, সবার সাথে আলোচনা করবে আপনি ‘অসৎ’ কাজ করছেন বলে। কিন্তু দূর দুরান্ত থেকে যাদের আপনি চেনেনই না তারা আপনাকে নিয়ে গর্ববোধ করবে।
আবার ধরুন আপনি কাজের কারণে ব্রিটেইন বা এমেরিকার প্রেসিডেন্টসম কারও সাথে আলোচনায় বসে ছবি আপ্লোড দিলেন ফেসবুকে। তাদের চোখে এটা পরলেও পরবেনা। কিন্তু প্রোফাইলে যদি কোনভাবে কোন মেয়ের সাথে ছবি দেখে ফেলে, এটা আশেপাশের সব জায়গায় নিমিষেই ছড়িয়ে যাবে। আপনি খারাপ হয়ে গেছেন, মেয়ে নিয়ে ঘুরছেন, পারলে গ্রামেও কথা রটে যাবে আপনি পালিয়ে বিয়ে করে ফেলেছেন।
আপনি পড়াশোনা শেষে কোন ইনোভেটিভ উদ্যোগ নিতে চান?আপনার প্ল্যান শেয়ার করার সাথে সাথেই উপদেশ পাবেন “এসব বাদ দিয়া চাকরির চেষ্টা কর, ছোটখাটো একটাতে ঢুকে যাও”. অথছ বছর খানেক পর হয়ত আপনার কাছেই ছেলের চাকরি চাইতে আসবে।
আপনি পলিটিকাল সাইন্স পড়ছেন? তারা বলবে এইসব না পড়ে ইকোনমিক্স পড়া উচিত ছিল। আর হয়ত ৫ বছর পর কোন বড় ইকোনমিক্স রিসার্চ ফার্মে অর্থনীতিতে পলিটিকাল ক্রাইসিসের ইম্প্যাক্ট নিয়ে গবেষণা করবেন।
আপনি ফার্মাসি পড়ছেন? তারা বলবে এইসব না পড়ে ডাক্তারি পড়তে পারতা। আর হয়ত ৫ বছর পর কোন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির তরফ থেকে ডাক্তারদের ট্রেইনিং করাবেন।
আপনি কম্পিউটার সাইন্সে পড়ছেন? তারা বলবে এসব না পড়ে ইলেক্ট্রিক্যাল বা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারতা! হয়ত ৫ বছর পর সবারই নির্ভরশীল হতে হবে এই কম্পিউটার গ্রেজুয়েটদের উপর।
এরা মুর্খতায় বসবাস করে, এরা দুনিয়াতে অল্পই দেখেছে অল্পই জেনেছে। তারা পেশা মানে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার আইনজীবী বোঝে। তারা জানেনা প্রত্যেক বিষয়ে রিসার্জ অর্গানাইজেশন হচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে, যেখানে চাকরি তৈরি হচ্ছে। তারা জানেনা সরকারি চাকরির বাইরেও হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে দ্বিগুণ বেতন দেয়া হয়। তারা বোঝেনা চাকরি যে দেয় অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের মালিকও একদিন চাকরির বদলে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ বেছে নিয়েছিল। তারা এটা কি করে জানবে গতানুগতিক চাকরির বাইরেও মিডিয়াকর্মী, ফটোগ্রাফার, ফ্রিল্যান্সার, উন্নয়নকর্মী এরকম হাজারো পেশা আছে।
এই মুর্খদের এড়িয়ে চলে নিজের গন্ডির বাইরে মানুষকে চিনতে হবে, মিশতে হবে। তারা আপনার উদ্ভট উদ্যোক্তা হওয়ার আইডিয়া নিয়ে পজিটিভ ফিডব্যাক দিবে, অগতানুগতিক পেশাকে এপ্রশিয়েট করবে, আনকমন সাব্জেক্টে পড়ছেন শুনে সাজেশন দিবে আরও ভালভাবে কিভাবে শেখা যায়। নেটওয়ার্কিংই এইসব নেগেটিভ মানুষ থেকে বের করে এনে পথ দেখাতে পারে। নিজে যোগ্যদের কাছ থেকে উৎসাহ নিন, আর অন্যদেরও উৎসাহিত করুন।
দিন শেষে মানুষ হয়ে সফল হওয়াটা জরুরি!