একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গন। নির্বাচন ছাপিয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায়। রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি আন্দোলনে যাওয়ার আভাস দিলেও সহিংসতায় না জড়ানোর কথা বলছে দলটির নেতৃত্ব। তবে, সহিংসতার আশঙ্কা বিবেচনায় রেখে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গত ৩০ জানুয়ারি দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার সময় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের মিছিল থেকে পুলিশের প্রিজনভ্যানে হামলা চালানো হয়। ওই ভ্যান ভাঙচুরের পর সেখানে থাকা দুই বিএনপিকর্মীকে ছিনতাই করা হয়। এরপর থেকে এ ঘটনায় জড়িত বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
যদিও বিএনপি মনে করছে, এ ধরনের আন্দোলনে মাঠে পুলিশের সঙ্গে মারামারির ঘটনা ‘স্বাভাবিক’। তারাই আবার দাবি করছে, সরকার ‘হীন উদ্দেশ্য’ বাস্তবায়ন করতে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। কিন্তু পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, আইন অনুযায়ী ভিডিও ফুটেজ দেখে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের ধরা হচ্ছে। তাছাড়া, এ ধরনের ঘটনা আর কখনোই ঘটতে দেওয়া হবে না।
বিএনপির প্রচার বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, আন্দোলনের সময় মাঠে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওইদিন যখন নেতাকর্মীদের প্রিজন ভ্যানে উঠিয়ে নেওয়া হয়, স্বাভাবিকভাবেই এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ওই ঘটনায় ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এর আগে ম্যাডাম (খালেদা) কোর্টে যাওয়ার সময় এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। তখনও নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ওইদিনের ঘটনায় সর্বোচ্চ ৫-১০ জন জড়িত ছিল, তাদের গ্রেফতার করুক। সারাদেশে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে কেন? গত ৩-৪ দিনে শুধু ঢাকায়ই ৫শ’ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কিন্তু প্রিজনভ্যানে হামলার পরিস্থিতিকে বিএনপির এ নেতা ‘স্বাভাবিক’ বললেও পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনার দিন পুলিশ যথেষ্ট ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছে। বিচারিক কার্যক্রম নিয়ে কেউ অসন্তুষ্ট হলে তিনি হাইকোর্টে গিয়ে জানাতে পারেন। কিন্তু এর জন্য ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত বিএনপির অন্তত ২শ’ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হামলার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে ধরা হয়েছে তাদের।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাফ বলে দিয়েছেন, পুলিশের ওপর যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। ওই হামলার ঘটনার পর নতুন মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী স্পষ্ট বলে দেন, এ ধরনের হামলার চেষ্টা হলে কঠোর পদক্ষেপ নেবে পুলিশ।
নির্বাচন ও বিএনপির ভবিষ্যৎ আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলে দেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও বলেছেন, যারা পুলিশের ওপর হামলা করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিএনপিকে হয়রানি নয়, সন্ত্রাসী ধরা হচ্ছে। সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশ প্রয়োজনে আরও কঠোর হবে বলেও জানাচ্ছেন পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা।