‘বৃক্ষমানব’ হিসেবে পরিচিত সাতক্ষীরার আবুল বাজানদার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন।
এ নিয়ে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আমরা গত আড়াই বছর তার চিকিৎসা করে প্রতিদানে এই পেলাম? জানি না এর পেছনে কী উদ্দেশ্য আছে তার। প্রধানমন্ত্রী নিজেই তার চিকিৎসার দায়িত্ব দিয়েছিলেন আমাকে। সে এখন কী বলছে তা প্রধানমন্ত্রীকে জানাবো।’
আবুল বাজানদার সম্প্রতি ঢামেক হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। এর আগে প্রায় আড়াই বছর সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ করেন বাজানদার। গণমাধ্যমে এ নিয়েখবর প্রকাশিত হয়।
‘এখানে আবুল বাজানদার ছাড়াও অনেক রোগী আছেন’ বলে ডা. সামন্ত লাল সেন মন্তব্য করেন আবুলের পরিবারের চারজনকে খাবার দেওয়ার সময় অন্য রোগীরা আমাকে বলতেন, স্যার আপনি তো আমাদেরকে এভাবে খাবার দেন না। সেই আবুল আড়াই বছর চিকিৎসা নিয়ে চলে যাওয়ার পর গণমাধ্যমে চিকিৎসকদের নিয়ে অভিযোগ করায় আমার খুব কষ্ট লেগেছে।’
‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় চিঠি লিখে বাজানদারের রক্ত ও অন্যান্য স্যাম্পল বিদেশে পাঠিয়ে বিনামূল্যে পরীক্ষা করিয়ে এনেছি। ডা. লতা গিয়ে তার স্যাম্পল জমা দিয়ে এসেছিল। অথচ আবুল এখন বলছে, তার রোগ জেনেটিক না। আমার প্রশ্ন হলো, রোগী কীভাবে বুঝবে যে, রোগ জেনেটিক কিনা? এটা তো চিকিৎসক ভালো বলতে পারবেন।’
এই দিকে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. নুরুন নাহার লতা বলেন, ‘হাসপাতালের মোটা চালের ভাত খেতে পারতেন না বাজানদার। তাই তাকে ও তার পরিবারকে (স্ত্রী, মেয়ে ও মা) ডক্টরস ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে দেওয়া হতো। পরে তা বন্ধ করায় সে আপত্তি জানায়। কিন্তু হাসপাতালের নিয়মানুযায়ী শুধু রোগী খাবার পাবে। অন্যদের খাবার কিনে দিতেন সামন্ত লাল সেন স্যার।’
বাজানদারের অভিযোগ অনুযায়ী, অধ্যাপক কবির চৌধুরীকে বিদেশি চিকিৎসক বলা হয়েছে। তবে অধ্যাপক হোসাইন ইমাম জানান, ‘অধ্যাপক কবির চৌধুরী মূলত বাংলাদেশি চিকিৎসক।’
অভিযোগে আরও বলা হয়, কবির চৌধুরী ৫-৬টি অস্ত্রোপচার করেছেন। অধ্যাপক হোসাইন ইমামের দাবি, ‘তিনি কোনও অস্ত্রোপচার করেননি। কবির চৌধুরী স্যার আমাদের সার্জিক্যাল টিমকে সহযোগিতা করেছেন, উপদেশ দিয়েছেন। আবুলের রোগটি আসলেই জেনেটিক সমস্যা। এই কথাটা সবাইকে বুঝতে হবে।’
যে ছুটির কাগজ প্রসঙ্গে আবুল বাজানদার অভিযোগ তুলেছেন সেই ব্যাপারে এই চিকিৎসক বলেন, ‘নিজে থেকে কোনও রোগী চলে যেতে চাইলে তাকে লিখিত দিয়ে যেতে হয় যে, তার কিছু হলে সেই দায়দায়িত্ব তার নিজের। সবার ক্ষেত্রে একই নিয়ম। আবুলের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু আবুল হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়।’
গণমাধ্যমকে আবুল বাজানদারের বিষয়ে কোনও কিছু লেখার আগে যাচাই-বাছাই করার আহ্বান জানিয়েছেন ঢামেকের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. কামরুননাহার লতা। তিনি বলেন, ‘আবুল বাজানদার না বলে চলে গেছেন। তিনি এখন নিজের যাওয়াটাকে ন্যায়সঙ্গত করার জন্য অনেক কিছু বলবেন, এটাই স্বাভাবিক।’
আর যদিও সহকারী অধ্যাপক ডা. তানভীর আহমেদের কথায় আবুল বাজানদারের অসন্তোষের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তিনি বলেছেন, ‘তাকে ছয়তলার যে কেবিনে দেওয়া হয়, সেখানে থাকতে রাজি ছিল না সে। কারণ এসি নেই। তাই তার কষ্ট হতো। কিন্তু আরও ১৬ জন রোগী কিন্তু কেবিনে থাকছেন। কিন্তু তিনি এসি ছাড়া থাকতে পারেন না।’