প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল লন্ডনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। লন্ডনের ল্যানক্যাস্টার হাউসে স্থানীয় সময় গতকাল বিকাল ৩টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায়) এ বৈঠক হয়। কমনওয়েলথ সরকারপ্রধানদের ২৫তম শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন। বাকিংহাম প্যালেসে এ সম্মেলন চলছে।
প্রতিবেশী দুই দেশের শীর্ষ নেতার বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি, দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বাণিজ্য সহযোগিতা, দুই দেশের মধ্যে রেল ও সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধিসহ দুই দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় আলোচনায় স্থান পায় বলে জানা গেছে।
প্রায় এক বছর আগে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী সর্বশেষ বৈঠক করেন। এর মধ্যে তৃতীয় কোনো দেশেও তারা মুখোমুখি হননি। এ বছর বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশেই জাতীয় নির্বাচন হবে। এ কারণে লন্ডনে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠককে বর্তমান সরকারের আমলে শেষ শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক মনে করা হচ্ছে। ভারতীয় কূটনৈতিক সূত্র বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ভারত তার অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতে চায়। সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে চীনের অর্থনৈতিক তৎপরতা বেড়েছে। এসব বিষয়ে সতর্ক নজর রেখেছে ভারত। দেশটি চায় এ অঞ্চলের চালকের আসনটি নিজের হাতে রাখতে।
এ কারণে ‘বিশেষ বন্ধু’ বাংলাদেশের সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় ভারত। আঞ্চলিক রাজনীতিতে ঢাকাকে নয়াদিল্লির পাশেও চায় মোদি সরকার। কিন্তু চীনের সঙ্গে ঢাকার সাম্প্রতিক সম্পর্ক নিয়েও চিন্তিত দেশটি। ফলে মেয়াদের শেষ প্রান্তে এসে দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকটি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বৈঠকে এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করেন দুই প্রধানমন্ত্রী, এমনটাই বলছে কূটনৈতিক সূত্র।
কমনওয়েলথের সংস্কার চাইলেন প্রধানমন্ত্রী : কমনওয়েলথের সব ক্ষেত্রে সংস্কার চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সদস্য দেশগুলোর পরিবর্তনশীল চাহিদা ও প্রত্যাশা পূরণে কমনওয়েলথের সংস্কারের দাবি জানিয়ে এ জন্য খ্যাতনামা ব্যক্তিদের নিয়ে একটি গ্রুপ তৈরিরও সুপারিশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল স্থানীয় সময় দুপুরে লন্ডনের ল্যানক্যাস্টার হাউসে কমনওয়েলথ দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের প্রথম এক্সিকিউটিভ সেশনে এ আহ্বান জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
সদস্য দেশগুলোর পরিবর্তনশীল চাহিদা ও প্রত্যাশা পূরণে কমনওয়েলথের বিভিন্ন সংস্থার ভূমিকা ও কার্যক্রম পুনর্নির্ধারণ ও পুনর্গঠন করার কথা বলেন শেখ হাসিনা। কমনওয়েলথের বিভিন্ন ব্যবস্থা ও উদ্যোগ বাংলাদেশ নিবিড়ভাবে অনুসরণ করে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমনওয়েলথ মহাসচিবের ঘোষিত ২০২০-২০২১ কৌশলগত পরিকল্পনার প্রশংসা করার পাশাপাশি ২০৩০ উন্নয়ন এজেন্ডারও প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমনওয়েলথ ঘোষণায় কানেকটিভিটি, সাইবার সিকিউরিটি, গভর্নেন্স বিষয়ে কমনওয়েলথ সচিবালয়ের উচিত একটা প্রায়োগিক অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা। নাজুক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে কমনওয়েলথ মিনিস্ট্রিয়াল অ্যাকশন গ্রুপের ভূমিকা স্পর্শকাতর।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর পর্যবেক্ষণ থেকে বলেন, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভালোভাবে বুঝে সে অনুযায়ী এবং কমনওয়েলথের ঐক্যের চেতনাকে সামনে রেখে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্র ও সুশাসন, আইনের শাসনই লক্ষ্য থাকতে হবে। কেননা এগুলো হলো টেকসই শান্তি ও স্থিতিশীলতার মূল ভিত্তি। তিনি বলেন, কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর গণতন্ত্র রক্ষা, শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গণতান্ত্রিক ও সুশাসনের প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নে সহায়তা ও সম্পৃক্ত হওয়াটাই সবচেয়ে ভালো উপায়।
সদস্য দেশগুলোর বাণিজ্য, অর্থনীতি ও টেকসই উন্নয়নের দিকে কমনওয়েলথ মনোযোগ দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (বাংলাদেশ সময় ৩টা) বাকিংহাম প্যালেসে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সম্মেলনে কমনওয়েলথের ৫৩টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উপস্থিত ছিলেন।