মহাবিশ্বের সৃষ্টি নিয়ে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত তত্ত্বের মধ্যে, “বিগ ব্যাং” বা ‘মহা-বিস্ফোরণ, তত্ত্বটি সূচনাকালে বিজ্ঞানমনস্কদের মধ্যে বেশ ভালোভাবেই বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছিলো । এই তত্ত্বানুসারে, কোন এক বিশেষ সময়ে, একটি অতি ক্ষুদ্র কণার অত্যন্ত ত্বরিতগতিতে বিস্ফোরিত হওয়ার মাধ্যমে আমাদের মহাবিশ্বের সৃষ্টি বলে ধারণা করা হয় । এযাবতকাল পর্যন্ত এটি বিজ্ঞানীমহলে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়ে এসেছে । তবে এর বিরোধী মতামতও রয়েছে যে, মহাবিশ্বের কোন সূচনাকাল ছিলো না ।
এই “বিগ ব্যাং”য়ের পরের ধারণা হলো, আমাদের এই মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে প্রসারিত হতে থাকবে। গ্যালাক্সি ও নক্ষত্র সমুহ আর কখনো একত্রিত হবে না। এই প্রাথমিক পর্যবেক্ষন বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছিলেন।
এখন নতুন তথ্য বিশ্লেষণের পর উঠে এসেছে, “বিগ ব্যাং” বা মহাবিস্ফোরণের বিপরীতে “Big Crunch” বা মহা সংকোচনের ধারণা।
সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক তথ্য বিশ্লেষন করে বিজ্ঞানীরা যে Big Crunch এর কথা বলছেন তা হলো, মহাজাগতিক গড় ঘনত্ব, সংকট ঘনত্ব (Critical value) থেকে বেশী হলে, মহাকর্ষ বল যথেষ্ট পরিমানে শক্তিশালী হবে। ফলে মহাবিশ্বের প্রসারন থেমে গিয়ে মহাসংকোচনের দিকে ধাবিত হবে। আমেরিকার বিজ্ঞানী ফ্রিম্যান দেখিয়েছেন Big Crunch এর প্রায় 1 বিলিয়ন বছর পূর্বেই গ্যালাক্সিপুঞ্জের শুন্য জায়গা সংকুচিত হতে শুরু করবে। Big Crunch এর 100 বিলিয়ন বছর পূর্বে একক গ্যালাক্সির মধ্যের জায়গাও কমে যাবে। এভাবে গ্রহ নক্ষত্রগুলো একে অন্যেকে আকৃষ্ট করে একসঙ্গে মিলিত হবে এবং অতি উষ্ঞ ও অতি ঘন বস্তুপিন্ড তৈরী করবে, যা বিকট শব্দে বিষ্ফোরিত হবে। আর ঐ অবস্থায়ই হলো Big Crunch মহা-সংকোচন।
এই বৈজ্ঞানিক ধারণার সাথে তথ্যগত মিল পাওয়া যাচ্ছে আল-কোরআনের সূরা আম্বিয়ার ১০৪ নং আয়াতে ।
তাছাড়া আল-কোরআনে মহাবিশ্বের চুড়ান্ত পরিনতি সম্পর্কে ব্যাপক ও বিস্তৃত তথ্য দেয়া হয়েছে বিভিন্ন আয়াতে।
সুরা আম্বিয়া-104,ইয়সিন-53,ইনফিতার-1/2,ইনশিকাহ-1, রহমান-26 প্রভৃতি আয়াতে থুব স্পষ্ট তথ্য বিবৃত হয়েছে।
যেমন সুরা আম্বিয়ায় বলা হয়েছেঃ
(Surah Anbiya-104):- And (remember) the Day when We shall roll up the heavens like a scroll rolled up for books, as We began the first creation, We shall repeat it, (it is) a promise binding upon Us. Truly, We shall do it.
বঙ্গানুবাদঃ (সুরা-আম্বিয়া-১০৪):- “সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে নেব,যেমন গুটানো হয় লিখিত কাগজপত্র। যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম,সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব।আমার ওয়াদা সুনিশ্চিত,আমাকে তা পূর্ণ করতেই হবে।”
এই গুটিয়ে নেয়ার সাথে তুলনা করা যায় মহাবিশ্বের সংকোচনের ধারণাকে । মহা-সংকোচনের ধারণায় বিজ্ঞানীরা যেমন বলছেন, আমাদের মহাবিশ্বের প্রসারণ এক সময় থেমে গিয়ে মহাবিশ্বের গড় ঘনত্ব যখন সংকট ঘনত্ব থেকে বেশি হবে, তখন মহাকর্ষ বল অত্যন্ত শক্তিশালী হওয়ায়, শুরু হবে “বিগ ক্রাঞ্চ” বা মহা সংকোচন প্রক্রিয়া, তেমনি আল-কোরআনের সূরা আম্বিয়ার এই ১০৪ নম্বর আয়াতেও বলা হচ্ছে আকাশসমূহ গুটিয়ে নিয়ে এসে একত্রিত করার কথা।
এটি সত্যিই বিস্ময়কর তথ্য যা কোরআনে বর্ণিত আছে। দেখা যাচ্ছে এই তথ্যের সাথে বৈজ্ঞানিক নতুন তত্বও সাংঘর্ষিক নয় । তবে বিজ্ঞান যেহেতু পরীক্ষা, গবেষণা, অবজারভেশন ও প্রমাণে বিশ্বাস করে, তাই এ তত্ত্বও যে অদূর ভবিষ্যতে বাতিল বা ভুল প্রমাণিত হবে না তা বলা যায় না ।
অর্থাৎ মহাবিশ্বের সর্বশেষ পরিণতি নিয়ে যে আমাদের এই অপার কৌতূহল, তার উত্তর কেবল সময়ই আমাদের দিতে পারে ।
লেখকঃ রিদওয়ান উর রাহমান