চিকিৎসাবিজ্ঞানিরা বরাবরই মানসিক অবসন্নতাকে হৃদরোগের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখে আসছেন। এতটুকুতেই প্রমাণিত হয়, টেনশন কতটা ভয়ংকর হতে পারে আমাদের জীবনে। পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষ প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হচ্ছে নানান সমস্যার। ভাবতে হচ্ছে অসংখ্য ভাবনা। পরিবার, পরিজন, সমাজ, নিজস্বতা মিলিয়ে ভাবনার ডালপালা বিস্তৃত হতে থাকে। সেসব থেকে পরিত্রাণের জন্য ভাবতে হয়। মানুষ সবকিছু ছেড়ে পালিয়ে বাঁচতে পারলেও নিজের কাছে বরাবরই ধরা খায়। অতিরিক্ত চিন্তা শারীরিক ও মানসিক দুই ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলে, যাতে ব্যাঘাত ঘটে স্বাভাবিক জীবনযাপনে। অতিরিক্ত চিন্তা থেকে নিজেকে বাঁচানোর অসংখ্য উপায় চোখের সামনেই ঘুরছে। শুধু চোখ মেলে দেখতে হবে।
বাস্তবতা মানতে শিখুন
চিন্তা করতে মানা নেই, শুধু বুঝতে হবে- যে চিন্তাটুকু করছি তা কতখানি যৌক্তিক? একজন বাস্তববাদী মানুষ জানে কখন, কোথায়, কোন চিন্তা কতটুকু করা উচিৎ! যার ফলে তিনি যেকোন পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে নেবার ক্ষমতা রাখেন। বাস্তববাদীরা পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। তাদের দর্শন হচ্ছে- আমার চাওয়া অনুযায়ী হয়নি, তাতে কী হয়েছে! এখন হয়নি, সামনে হবে। এতে করে দুশ্চিন্তা দূরে সরে যায়। মোদ্দাকথা, প্রত্যাশা কম রাখুন।
তালিকা তৈরি করুন
যখন মনে হবে প্রচন্ড টেনশনে ভুগছেন, আপনার চিন্তার বিষয়বস্তুর শেষ নেই, যেদিকে তাকান খালি চাপ আর চাপ; ঠিক ওই মুহূর্তে খাতা কলম নিয়ে বসে পড়ুন। কী কী বিষয়ে চিন্তা করছেন তার একটি তালিকা তৈরি করুন। দেখবেন, অল্প কয়েকটি লিখার পর মাথায় তেমন কিছু আসবে না আর। সবচেয়ে মজার বিষয়টি খেয়ালে আসবে এখনই! এতক্ষণ ধরে যে কটা সমস্যা লিখলেন, প্রায় সবগুলি অতি সাধারণ চিন্তা এবং এর অধিকাংশই আপনার আশপাশের মানুষজনেরও আছে। এরপর স্বভাবতই চিন্তার মাত্রা কমতে থাকবে।
পছন্দের কাজ করুন
অলস মস্তিষ্ক চিন্তার কারখানা। যখন কেউ একা থাকে তখন বিভিন্ন জিনিস মাথায় ঘুরপাক খায়। এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে বেশি সময় নেয় না। তাই যখনই মনে হবে চিন্তা গ্রাস করে ফেলছে তাড়াতাড়ি আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠুন। পছন্দের কাজটি করতে পারেন ওইসময়ে। সেটি হতে পারে বইপড়া, সিনেমা দেখা, গেমিং, লেখালেখি অথবা ভ্রমণ। ভ্রমণের ক্ষেত্রে দূরে কোথাও যেতে হবে এমন কিছু নেই। বন্ধুদের নিয়ে বাড়ির পাশের রেস্টুরেন্টেও ঢুঁ মেরে আসতে পারেন। ভোজনও হল, ঘুরাও হল, চিন্তামুক্তও হওয়া গেল!
নিজের উপর আস্থা রাখুন
আপনি কে, কতটুকু যোগ্যতা আছে, কতটা কী করতে পারবেন এসব নিয়ে প্রশ্ন করুন নিজেকে। এবার সেই অনুযায়ী চলুন। আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনুন। জীবনে চাপ থাকবে, বাঁধা থাকবে, ব্যর্থতার চোখরাঙানি থাকবে। তাই বলে থেমে থাকা যাবে না। এসবের বিরুদ্ধে এগিয়ে যাবার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হোন। নিজের উপর আস্থা রাখুন, আত্মবিশ্বাসী হোন। আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান ব্যক্তি পৃথিবীর সব চাপকে তুঁড়ি মেরে উড়িয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে।
ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ুন
ব্যায়াম করা এমনিই জরুরি। সকাল বেলা দশ মিনিট হাঁটাহাঁটি কিংবা দৌড় সারাদিন শরীর মন ফুরফুরে রাখতে সাহায্য করে। সবচাইতে ভাল দাওয়াই হতে পারে- মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম। মানসিক চাপ দূর করতে মেডিটেশনের কার্যকারীতা বলার অপেক্ষা রাখে না। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভ্যানিয়ার কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণালব্ধ ফলাফল বলছে- কোন ব্যক্তি যদি ২৫ মিনিট করে টানা তিনদিন মেডিটেশন করে, সেই ব্যক্তির মানসিক চাপ, হতাশা, দুশ্চিন্তা অন্যদের তুলনায় দ্রুত দূর করতে মেডিটেশন সহায়তা করে।
প্রাণ খুলে হাসুন
সুখী থাকার অন্যতম প্রধান চাবিকাঠি হল- হাসিখুশি থাকা। চাপের মাঝেও শুকনো হাসি দেবার চেষ্টা করুন। অন্যকে হাসান। মানুষের সঙ্গে মিশুন। হাসি তামাশার ফলে দেহের বিভিন্ন নালীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। গম্ভীর মানুষের তুলনায় যারা হাসিখুশি থাকে, তাদের শরীরের শতকরা বিশভাগ ক্যালরি বেশি পোড়ানো যায়। জোর করে হলেও হাসুন। শুকনো হাসিটা একসময় তৃপ্তির হাসিতে পরিণত হবে। দূর করবে টেনশন। কথায় বলে না- নো চিন্তা, ডু ফুর্তি!
ঘুমান
ঘুমের চাইতে বড় ওষুধ আর কিছু নেই। আমাদের মানসিক চিন্তার একটা বড় প্রভাবক পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া। ঘুমালে শরীরের পাশাপাশি মস্তিষ্কও বিশ্রাম পায়। তাই যত চাপেই থাকুন, একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। পর্যাপ্ত ঘুম হলে অপ্রোয়জনীয় বা অতিরিক্ত চিন্তা মাথায় খুব কমই ঘুরপাক খেতে পারবে।