কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ হামলার প্রতিবাদ এবং অজ্ঞাতনামা ৭০০-৮০০ জনের নামে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা। শুক্রবার বিকাল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি জানানো হয়। শনিবারের মধ্যে মামলা প্রত্যাহার না হলে দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা এবং গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ৭০০-৮০০ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করে পুলিশ। শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক মির্জা মো. বদরুল হাসান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
এর আগে গত বুধবার রাজধানীর হাইকোর্ট মোড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতদের ওপর পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে এবং লাঠিচার্জ করে। এতে ১৬ জন আহত হয় এবং ৬৩ জনকে আটক করা হয়। পরে ছাত্র বিক্ষোভের মুখে রাত ৯টার দিকে তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। পরে সেদিনই আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়।
এর প্রতিবাদে শুক্রবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনকারীরা। এতে বক্তব্য রাখেন আন্দোলনকারীদের আহ্বায়ক হাসান আল-মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান ও মো. রাশেদ খান।
হাসান আল-মামুন বলেন, বুধবার আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই হামলা চালিয়েছে পুলিশ। আটক করা হয় তিনজনকে। আটককৃতদের ছাড়াতে রমনা থানায় গেলে পুলিশ আমাদের ৫০-৬০ জনকেআটক করে। দুপুরে আটকের পর থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত আমাদের একটু পানিও দেয়নি তারা। তবুও আমরা শান্তিপূর্ণ ভূমিকা পালন করি। এমন একটা ছবি বা প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না যে, ছাত্ররা সহিংস হয়েছে। তবুও এ ধরনের মামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়রানিমূলক। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।
শনিবার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। এই দিনের মধ্যে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তা নাহলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
ফারুক হাসান বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর অহিংস আন্দোলনে বিশ্বাসী। আমাদের আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ। কিন্তু পুলিশ বিনা উসকানিতে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এরপর তারাই আবার মামলা করেছে, যা মিথ্যা, বানোয়াট, হয়রানিমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অবিলম্বে এ মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তা নাহলে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
প্রধানমন্ত্রীকে ‘মা’ সম্বোধন করে তিনি বলেন, আপনি আমাদের অভিভাবক। ৩০ লাখ বেকারের দাবি মেনে নিন। আর তা নাহলে আমাদের জেলে নিন। তবুও এ বৈষম্যের অবসান হোক। এভাবে চলতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলনে তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সুনির্দিষ্ট ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নিয়ে আসা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে খালি থাকা পদগুলোতে মেধাবীদের নিয়োগ দেয়া, কোনো ধরনের বিশেষ পরীক্ষা না নেয়া, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা এবং চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একবারের বেশি ব্যবহার না করা।
এর আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি কোটা সংস্কারের দাবিতে শাহবাগে মানববন্ধন করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। পরে আবার ২৫ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেন তারা। ৩ মার্চের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান দাবি করে। সমাধান না হওয়ায় আবার আন্দোলনে নেমেছেন তারা।
দাবি পূরণ না হওয়ায় ৪ মার্চ রাজধানীর শাহবাগে কোটা সংস্কার চেয়ে বিক্ষোভ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশী। দাবি আদায়ে ১৪ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও স্মারকলিপি প্রদানের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। পাশাপাশি ওইদিন সারাদেশের সব জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়ার কথা ছিল তাদের। কিন্তু ঢাকা শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে ১৬ জন আহত হয় এবং ৬৩ জনকে আটক করা হয়।