সিনহার ‘পানি পানি’ বলে করা আর্তনাদও মন গলাতে পারেনি ওসি প্রদীপের

0
সিনহার 'পানি পানি' বলে করা আর্তনাদও মন গলাতে পারেনি ওসি প্রদীপের

আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলার প্রথম নির্ধারিত তিনদিন শেষ হলো বাদী ও সফরসঙ্গী সিফাতের সাক্ষ্য ও জেরার মধ্য দিয়ে। এ তিনদিনে মোট ১৫ জন সাক্ষীকে সাক্ষ্যের জন্য ডাকা হলেও প্রধান দুই সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষ করতেই তিনদিন সময় লেগে যাওয়ায় বাকি ১৩ জনের সাক্ষ্য নেয়া আর সম্ভব হয়নি। তাই আদালত আগামী ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যের জন্য নির্ধারণ করেছেন বলে জানা গেছে।

এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজার জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, সোমবার সকাল সোয়া ১০টায় কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সিনহা হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিচারকাজ শুরু হয় এবং বুধবার আদালতের নির্ধারিত সাক্ষ্যগ্রহণের তিনদিন শেষ হয়। এ তিনদিনে শুধুমাত্র মামলার বাদী শারমিন ফেরদৌস ও সিনহার সফরসঙ্গী প্রত্যক্ষদর্শী শাহেদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে; যেখানে ১৫ আসামির পক্ষে পৃথকভাবে সিফাতকে জেরা করা হয়। এছাড়া প্রথম নির্ধারিত তিনদিনে ১৫ আসামিকে তলব করা হলেও তিনদিনে কেবল দুজনের সাক্ষ্য নেয়া সম্ভব হওয়ায় বাকি ১৩ জন সাক্ষীর পরবর্তীতে সাক্ষ্য নেওয়া হবে। এ মামলায় মোট সাক্ষী ৮৩ জন হলেও সাক্ষ্য ও জেরার সময় আসামি ওসি প্রদীপ-লিয়াকতসহ মামলার ১৫ আসামিকে কাঠগড়ায় উপস্থিত করা হয়।

এদিকে এ মামলার সাক্ষী ও সিনহার সফরসঙ্গী সিফাত তার জবানবন্দিতে সিনহা হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেওয়াকালীন হত্যাকাণ্ডের অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে তিনি আদালতকে জানান, সেদিন রাতে (৩১ জুলাই, ২০২০) লিয়াকত আলীর গুলিতে যখন রাস্তায় ঢলে পড়ে কাতরাচ্ছিলেন সিনহা মো. রাশেদ খান সেসময়ে টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রথমে লিয়াকত আলীর সঙ্গে আড়ালে গিয়ে কথা বলেন। এরপর প্রদীপ সিনহার কাছে গিয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে আপত্তিকর ভাষায় গালমন্দ করেন এবং তিনি নিজের পা দিয়ে সিনহার শরীর নড়াচড়া করে দেখেন। সেসময়েও সিনহা জীবিত ছিলেন এবং ‘পানি পানি’ করে আকুতি করছিলেন। কিন্তু প্রদীপ তখন সিনহার বুকে লাথি মারেন এবং পা দিয়ে গলা চেপে ধরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এছাড়া তল্লাশি চৌকির ভেতরে নিয়ে সিফাতকেও মারধর করেন প্রদীপ।

অপরদিকে বাদী শারমিন ফেরদৌস আদালতকে জানান, লিয়াকত ওই সময়ে কাকে যেনো ফোনে বলছিলেন— ‘টার্গেট ফেলে দিয়েছি, তোরা তাড়াতাড়ি আয়।’ অপর আরেক ফোনে তিনি বলেন, ‘স্যার একটাকে ডাউন করেছি, আরেকটারেও ধরে ফেলেছি।’ এছাড়া সিনহা পানি ও শ্বাস নিতে চাইলে লিয়াকত তাকে গালাগাল করে কোমরে লাথি মেরে ফেলে দেন এবং মাথা চেপে ধরেন। এরপর লিয়াকত নির্দেশ দেন তার ফোর্সকে আশপাশের মানুষকে ভয় দেখাতে; যাতে কেউ সিনহাকে সাহায্য করতে না পারে, এ ঘটনার ছবি বা ভিডিও করতে না পারে। শারমিন দাবি করেন তার ভাইকে হত্যার পর ইন্সপেক্টর লিয়াকতের কথোপকথনের একটি অডিওতে বিশ্ববাসী এসব কথোপকথন শুনেছেন। তাই তিনি ওসি প্রদীপ-লিয়াকতসহ জড়িতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান।