প্রস্তাবিত বাজেটে অগ্রাধিকার কয়েকটির খাতের মধ্যে গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে খাদ্যশস্য বিতরণ কর্মসূচি একটি। এ কর্মসূচির আওতায় আগামী অর্থবছরে ২৮ লাখ ৩৬ হাজার টন খাদ্যশস্য (চাল ও গম) বিতরণ করা হবে। প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতে দেশের ভেতর থেকে ২০ লাখ টন জোগান দেওয়া হবে। বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে ৯ লাখ টন। এসব খাদ্যশস্য বিনা ও স্বল্প মূল্যে বিতরণ করা হবে। আর এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা।
খাদ্যশস্য বিতরণ কর্মসূচিতে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে ৩ লাখ ৮৪ হাজার টন বেশি চাল ও গম বিতরণ করা হবে। চলতি অর্থবছরে স্বল্প ও বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা (সংশোধিত) হচ্ছে ২৪ লাখ ৫২ হাজার টন।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা দুর্যোগের কারণে খাদ্যশস্য উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়ে খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশকে তেমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। আগামী অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ২০ লাখ ৫৫ হাজার টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি পূর্ণমাত্রায় সংগ্রহ করে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেবে।
এমনিতে করোনার কারণে দেশে নতুন করে আড়াই কোটি মানুষ গরিব হয়েছে। বেকার হয়েছে অনেক মানুষ। চাকরি হারিয়ে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে অনেক দিনমজুর। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ আরও বেশি কষ্টে আছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল ধারণা করছে এমন পরিস্থিতি আগামী অর্থবছরেও বিরাজ করবে। ফলে এসব দিক বিবেচনা করে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি বেশি মাত্রায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, স্বল্প ও বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিদেশি সহায়তা পাওয়া যায়। আশা করা হচ্ছে আগামী অর্থবছরে বিদেশ থেকে ৩০২ কোটি টাকা সহায়তা মিলবে। এ অর্থ দিয়ে বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে ১ লাখ ৫ হাজার টন। এছাড়া এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৩ লাখ টন চাল এবং ৫ লাখ টন গম আমদানি করা হবে দেশীয় টাকায়। এক্ষেত্রে সরকারের ব্যয় হবে ২ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। এটি প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে চলতি বাজেটে এক্ষেত্রে ১০ লাখ টন চাল এবং ৫ লাখ ৬৬ হাজার টন গম আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ছিল। সে অনুযায়ী আমদানি অব্যাহত আছে।
স্বল্প ও বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের বড় অংশ জোগান দেওয়া হয় অভ্যন্তরীণভাবে চাল ও গম সংগ্রহ করে। সে অনুযায়ী আগামী অর্থবছরে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে দেশের ভেতর থেকে চাল সংগ্রহ করা হবে ১৮ লাখ ৯৪ হাজার টন এবং গম দেড় লাখ টন। প্রস্তাবিত বাজেটে এ চাল সংগ্রহে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা এবং গমের জন্য ৪২০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। তবে চলতি অর্থবছরে অভ্যন্তরীণভাবে ১৩ লাখ টন চাল ও ১ লাখ টন গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল।
চালের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ওএমএস কর্মসূচি বড় ভূমিকা রাখে। এজন্য আগামী বছর মূল্য স্থিতিশীল রাখতে প্রায় ১৫ লাখ টন খাদ্যশস্য খোলাবাজারে ওএমএস এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে বিক্রয় করা হবে। এছাড়া খাদ্য বিতরণ করা হবে কাবিখা (ত্রাণ), কাবিখা (ভূমি), কাবিখা (আশ্রয়ণ প্রকল্প), ভিজিএফ (ত্রাণ) ভিজিএফ (মৎস্য), ভিজিডি, জিআর, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও স্কুল ফিডিং ও অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমেও।
প্রস্তাবিত বাজেটে আরও উল্লেখ করা হয়, আগামী অর্থবছরে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার টন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে টিআর কর্মসূচির আওতায় ৮০ হাজার টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হবে। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে জিআর (সাধারণ ত্রাণ) ১ লাখ ২৫ হাজার টন চাল এবং ভিজিএফ কর্মসূচিতে ২ লাখ ১০ হাজার টন ও কাবিখা খাতে ২ লাখ টন খাদ্যশস্য বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় বিতরণ করা হবে ৯৮ হাজার টন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিতরণ করা হবে কাবিখা কর্মসূচিতে ৩৭ হাজার ৫শ টন। আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্কুল ফিডিং কার্যক্রমের আওতায় বিতরণ করা হবে ১০ হাজার ৫০ টন চাল।