হালদা মুভি রিভিউ (স্পয়লার বিহীন)

0
হালদা মুভি রিভিউ

তৌকিরের “অজ্ঞাতনামা” ইউটিউবে দেখার পর পণ করেছিলাম, এরকম নির্মাতার মুভি হলে গিয়ে না দেখলে ঋণী থাকা হয়ে যাবে, তাই এরপরের মুভি মুক্তির প্রথম দিনেই গিয়ে দেখে আসলাম। ফলাফল? পয়সা উসুল!

আমি ভাই মুভি-পাগলা। বিভিন্ন ভাষার আনুমানিক প্রায় হাজার খানেক মুভি দেখেছি। কিন্তু হলের বিশাল স্ক্রীনে চমৎকার সাউন্ড সিস্টেমে হালদা প্রথম সীনেই আমাকে যেভাবে কব্জা করে ফেললো, থাইল্যান্ডের সিনেমা হলে ইন্ডিয়ানা জোনস আর ক্রিস্টাল স্কালের মুভির শুরুতেও এত কব্জা হইনি।
হালদা মুভি রিভিউ
মুভির ক্যাটাগরি করতে গেলে এটাকে ড্রামা বলতে হবে। এছাড়াও মুভির চরিত্রগুলোর সাথে অন্তরঙ্গতার সুবাদে কিছুক্ষণ দেখার পর থেকেই আমাদেরকে মুভির চরিত্রগুলোকে নিয়ে টেনশন করতে হবে। তাদের সুখে সুখী হতে হবে, তাদের দুখে দুখী হতে হবে। এই অন্তরঙ্গতার জন্য অভিনয়শিল্পীদের এবং নির্মাতাদের বিশাল ক্রেডিট দিতেই হচ্ছে।

মুভিতে অসাধারণ অভিনয় দেখে মুগ্ধ হতে হয়েছে। এম্নিতে তিশা আর মোশাররফ করিমের মুখ বাকা করে নাকি সুরের টেটনামো দেখা আমার পছন্দ নয়। শংকায় ছিলাম। কিন্তু, তারা দুজনেই তাদের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন চমৎকার ভাবে, একবারো তাদের টেটনা-পাকনা বলে মনে হয়নি।

মুভিতে পার্শ্বচরিত্রগুলোও এমন অসাধারণ অভিনয় করেছে, একটা উদাহরণ দিলে হয়তো বুঝবেন। সিসিমপুরে সুমনা নামের একজনের চরিত্র আছে। উনার আসল নাম সম্ভবত রুনা খান। উনার অভিনয় দেখে উনার চরিত্রের প্রেমে পড়ে যাবার মত অবস্থা। আমি শুধু ভাবছিলাম, এরকম ভালোবাসার বউ থাকলে মানুষ অন্য কিছু কি করে ভাবে? মুভি দেখা শেষ করে বের হবার সময় সিনেমা হলের বাইরে যখন উনার সাথে দেখা হয়ে গেল, সেলফি তোলার সুযোগ ছাড়লামনা (অবশ্যই আমার বউকে মাঝখানে রেখে)। পরে বউকে যখন আরো একটু ভালো করে সেলফি তুলতে বললাম, সে আমাকে সেই অভিনেত্রীর সাথে ছবি তুলতে বললো! ভাই, লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিলাম!

মুভির কাহিনী আর চরিত্রগুলোর অভিনয় গুণে আপনাকে কোনো না কোনো দৃশ্যে হয়তো কাঁদতে হতে পারে। আমার বউ এক দৃশ্যে চোখের পানি ফেলছিলো, আমি দেখে ফেলেছি। কিন্তু তার কিছুক্ষণ পর আমার চোখে যখন পানি আসলো, আমার বউয়ের দিকে তাকানোর সাহস হয়নি, যদি আমার চোখের পানি দেখে ফেলে!

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় মুভিটা একটুও বেখাপ্পা মনে হয়নি। নিচের ইংরেজি সাবটাইটেল থাকায় বুঝতে সুবিধা হয়েছে অনেক। আর চিত্রায়ণ, শব্দগ্রহণ এত চমৎকার কি করে করলো, সেটাই ভাবছিলাম। সব কি বিদেশি প্রযুক্তি নাকি? কিন্তু, শিল্পী মন না থাকলে এত সুন্দর চিত্রায়ণ কি সম্ভব? অসম্ভব সুন্দর সব দৃশ্য, চোখ জুড়িয়ে যায়, মুগ্ধ হয়ে দেখতে হয়।

মুভির কাহিনী আগেই বুঝে যাওয়া আমার একটা বিশাল গুণ। বিদেশি ডিটেকটিভ মুভির অপরাধী পর্যন্ত আগেই ডিটেক্ট করতে পারা এই আমি মুভির এক পর্যায়ে বউয়ের মোবাইলে ড্রাফটে সিনেমার এন্ডিং লিখে দিয়েছিলাম, আমার প্রেডিকশন ভুল প্রমাণিত করে তৌকির এমন একটা এন্ডিং দিলেন, উনাকে জহির রায়হান পদক দেয়া ছাড়া আর কোনো ভাষা আমার কাছে নেই।

এতদূর পড়েই বুঝতে পারছেন, মুভির টিকেটের পয়সা আমার উসুল হয়েছে। কিন্তু বোনাস সহ উসুল হবার জন্য সিনেমা শেষে প্রিয় অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবুর সাথে একটা সেলফি, একেবারে চেরি অন টপ! তৌকির এবং সকল অভিনেতা, অভিনেত্রী ও কলা-কুশলীরা, ধন্যবাদ আপনাদেরকে। অপেক্ষায় রইলাম পরবর্তি মুভির জন্য, ইনশাআল্লাহ

লেখকঃ Ferdous Zahid

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে