হোটেল খুঁজুন ঘরে বসেই!

0
হোটেল খুঁজুন ঘরে বসেই হোটেল চেইন

“কক্সবাজার গিয়েছিলাম ব্যবসায়িক কাজে। হোটেল রুম নিয়ে যেনো রীতিমত ভোগান্তিতে পড়তে হলো। ঢুঁ মারলাম দেশীয় কিছু বুকিং সার্ভিস সাইটে। আশানুরুপ কিছুই পেলাম না সেখানে। তাছারা সি এন জি, আটো ড্রাইভারদের সেখানেও যেনো রীতিমত কমিশন নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। নিজ পছন্দের এবং সামর্থ অনুযায়ী হোটেল পাওয়া যেনো খুবই কষ্টের”। আসিফ বলছিলো কথাগুলো।

হোটেল চেইন সিইও

আসিফ ইফতেখার এই তরুণের পুরোনাম। পড়াশোনা অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। ঝোঁক ছিলো ব্যবসার প্রতি, নিজেকে সবসময় কল্পনা করতেন উদ্যোক্তা পরিচয়ে গড়ে তোলার। তা বাস্তবায়ন করতেই যেনো নিজের সাথে ঘটে যাওয়া একটি ভোগান্তির সমাধানে নিজের উদ্যোগ নিয়ে হাজির। নিজের হোটেল ভোগান্তির সে ঘটনা থেকেই হাজির হয়েছেন সহজেই ইন্টারনেটের সাহায্যে হোটেল খোঁজার মোবাইল অ্যাপ “হোটেল চেইন” নিয়ে।

হোটেল চেইন hotel chain app

কি আছে এই অ্যাপে?

হোটেল বুকিং সিস্টেমটিকে একজন গ্রাহকের কাছে সহজ করে তোলার জন্যই সাজানো এই “হোটেল চেইন” অ্যাপ। হোটেল বুকিং থেকে শুরু করে হোটেলে প্রবেশ থেকে বের হওয়া পর্যন্ত মধ্যকার সকল সহযোগীতা প্রদান করে আসছে আসিফের এই উদ্যোগ, তাও খুবই অল্প টাকায়। “যেহেতু আমাদের দেশের মানুষ এরকম অ্যাপের সাথে অভ্যস্থ নয় তাই তাদের সহযোগীতা করার জন্য আমাদের টিম সবসময় প্রস্তুত থাকে”, যোগ করেন আসিফ।

গল্পের শুরুটা কীভাবে?

আসিফের সেদিনের ভোগান্তির পর থেকে নিজের সেই আইডিয়ার কথা জানান নিজের কাছের একজন ভাই রাশিদুল এবং বন্ধু ফারদিনকে। তাছাড়া জানিয়েছিলেন কাছের অন্যদেরও। সাড়াও পেলেন অনেক বেশি। তবে ব্যাপারটা কল্পনার মতো এতটা সহজও ছিলোনা যেনো। কিন্তু আসিফের মাথায় ঘেঁতে যাওয়া সেই লক্ষ্যের সামনে প্রতিবন্ধকতাগুলো যেনো নিমিষেই হারিয়ে যাত্রা শুরু করলো দেশের হোটেল বুকিং সার্ভিস ভিত্তিক সেবা “হোটেল চেইন”। পরিকল্পনা যতটা কঠিন তা বাস্তবায়ন করা যেনো আসিফের ভাষায় আরো চ্যালেঞ্জিং। শুরুতে বাংলাদেশের সকল পর্যটন-ব্যবসায়িক কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে নিজেদের কাজ পরিচালনা করছে এই অ্যাপ। কেনো

নামটা হোটেল চেইন?

প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির সিওও রাশিদুল ইসলাম এবং এইচ আর ফারদিন মাহমুদ বলেন, “শুরু থেকেই আমাদের প্রধান লক্ষ্য দেশের সকল হোটেলকে একটি শিকলের মধ্যে নিয়ে আসা, সে ভাবনা থেকেই নামটি “হোটেল চেইন”। ইংরেজি হওয়ায় নামটি যেনো বুঝতে সুবিধা বিদেশীদের জন্যও”। অ্যাপ ডিজাইন করেই নেমে পড়েন কাজে। শুরুতেই ছুটে যান কক্সবাজারের হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে। কষ্টের প্রতিদান পেতে যেনো সময় লাগেনি। প্রথম দেখাতেই আগ্রহ হন প্রথম সারির বেশকিছু হোটেল। তবে ব্যাতিক্রম ছিলো কিছু কিছুর ক্ষেত্রে। মজার বিষয় যারা অনাগ্রহ দেখিয়েছিলেন এই তরুণদের উদ্যোগে, তারাই পরবর্তীতে এসেছেন একসাথে কাজ করার আগ্রহ নিয়ে।

হোটেল চেইন hotel chain app use

কীভাবে একজন গ্রাহক অ্যাপটি ব্যবহার করবেন?

গুগল প্লে স্টোরে “Hotel Chain” লিখে সার্চ দিলেই দেখা মিলবে এই অ্যাপের। ইন্সটল করে ওপেন করে প্রথমে খুলতে হবে নিজের একাউন্ট। এরপর নিজের পছন্দের জায়গায় এবং বাজেট অনুযায়ী হোটেল ফিল্টার করলেই পেয়ে যাবেন হোটেলের তালিকা। এরপর মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই পারবেন নিজের পছন্দের হোটেল বুকিং দিতে। “আমরা আমাদের অ্যাপটি এমনভাবে ডিজাইন করেছি যেনো একজন ব্যবহারকারী অ্যাপটি ৫ সেকেন্ড ব্যবহার করেই আগ্রহ খুঁজে পেয়ে যান।” যুক্ত করেন আসিফ। অন্যান্য হোটেল বুকিং অ্যাপের ন্যায় শুধু হোটেল বুকিং দেওয়ার মাধ্যমেই শেষ করেন না নিজেদের দায়িত্ব, হোটেলে অবস্থান থাকাকালীন গ্রাহকের কোনো অভিযোগ পেলেই নেন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা। গ্রাহকের সন্তুটিকে ঘিরেই যেনো নিজেদের প্রতিটি দিন। বর্তমানে দেশের বিশেষ কিছু জেলাতে কাজ করলেও শীঘ্রই ছড়িয়ে যাচ্ছেন সারা দেশে। এছাড়াও সেবা দিচ্ছেন আরো ৫ টি দেশে। সেবা পাওয়া যাচ্ছে পাশের দেশ ভারতেরও কয়েকটি রাজ্যেও। হোটেলের পাশাপাশি আছে হেলিকপ্টার সহায়তাও। তাছাড়াও গ্রাহকদের অনুরোধে প্রদান করেন বিমানের টিকেট বুকিং এর সুবিধাও। মূলত মোবাইল এপ্লিকেশন ভিত্তিক হলেও কিছু কিছু সেবা পাওয়া যাচ্ছে তাদের ওয়েবসাইটেও।

বর্তমানে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রায় ৭০০ হোটেল এবং দেশ বিদেশের হাজারো ব্যবহারকারী নিয়ে এগিয়ে যাওয়া এই উদ্যোগের পেছনের শক্তি কারা? আসিফের ভাষায় তার হোটেল চেইন টিমই যেনো নিজেদের চালিকাশক্তি। খানিকটা যোগ করেন আসিফ, “এই মানুষগুলো না থাকলে আজ নিজেদের গল্প বলার সুযোগটা হতো না”। আগামীর লক্ষ্যটাও নিশ্চয়ই ভিন্ন? প্রশ্নের উত্তরে জানিয়ে রাখলেন ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় হোটেল বুকিং সেবা থেকে এশিয়ার সবচেয়ে বড় হোটেল বুকিং সেবা হিসেবে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হোটেল বুকিং সেবা হিসেবে রূপান্তরের। এরই সাথে যেনো এই তরুণের চোখে উঁকি দিচ্ছিলো নিজের এই কাজের মাধ্যমে লাল সবুজের দেশটার পতাকাকে বিশ্বের মানচিত্রে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য।