গত ১০০ বছর ধরে ফিলিস্তিনের ভাইয়েরা অভিশপ্ত ইহুদীদের হাতে মার খেয়েই যাচ্ছে। বিশেষ করে, ১৯৬৭ সালের পর থেকে প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত, অপমানিত, উচ্ছেদ, হত্যা, দেশান্তর হয়েই যাচ্ছে। এখান প্রশ্ন হল, মুসলমানরা আর কত দিন অভিশপ্ত ইহুদীদের হাতে মার খাবে? আর কতদিন ফিলিস্তিনের ভাইদের রক্ত দিতে হবে? কবে আসবে মুসলমানদের সুদিন? উত্তর হল, ইনশাল্লাহ খুব শীঘ্রই মুসলমানদের সুদিন ফিরে আসছে। খুব শীঘ্রই ইহুদীদের অত্যাচার, লাঞ্ছনা, উচ্ছেদ, হত্যা, গনহত্যা, ধর্ষণ, ও দেশান্তর থেকে মুক্তি পাবে। মুসলমানরা খুব শীঘ্রই জেরুজালেমকে খেলাফতের রাজধানী করবে।
“মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে জঘন্য দুশমন হল ইহুদী ও মুশরিকরা (মূর্তি পূজারী)”(সূরা মায়েদা, আয়াত নং – ৮২)
Greater Israel এর সিমানা কতটুকু?
বর্তমান সময়ে যারা Eschatology বা, আখিরুজ্জামান নিয়ে পড়াশোনা করেন তাদের কারো কারো ধারণা পৃথিবীর ভবিষ্যত সুপার পাওয়ার রাষ্ট্র হবে ঈসরাইল এবং ইহুদীরা খুব শীঘ্রই তাদের Greater Israel প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে এবং একই সাথে তারা পুরো পৃথিবীর নেতৃত্ব দিবে। সাধারণত Greater Israel বা, বৃহত্তর ঈসরাইল বলতে সম্পূর্ণ ফিলিস্তিন, পশ্চিম দিকে মিশরের সিনাই উপত্যকা ও আলেকজেন্দরিয়া, পূর্ব দিকে ইরাকের ফোরাত নদীর উপকূল রামাদি, ফাল্লুজা, নাসিরিয়া, কুফা ও কুয়েত পর্যন্ত। উত্তর দিকে সমগ্র সিরিয়া ও তুরস্কের আন্তকিয়া প্রদেশ পর্যন্ত। দক্ষিণ দিকে জর্ডান ও সৌদি আরবের উত্তরাংশকে বুঝানো হয়ে থাকে। বিশেষ করে শাইখ ইমরান নজর হোসেন ও তার অনুসারীরা এই ধারনাটি ফলাও করে প্রচার করার পর, এটি আরো জোরালো হয়। যদিও পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা তাদের ধারণার উল্টো বলেছেন,
“এটি কখনো সম্ভব নয়, ‘যে জাতিকে আমি একবার ধ্বংস করে দিয়েছি, তারা আবার (ধ্বংস পূর্ব অবস্থায় ফিরে) আসবে”।
(সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং – ৯৫)
এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়, ইহুদীরা কখনো Greater Israel বা, ইহুদীদের কল্পিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। ভবিষ্যতে ঈসরাইল কোন ভাবেই সুপার পাওয়ার হবে না, এটা একেবারেই নিশ্চিত করে বলা যায়। কারন আল্লাহ তায়ালা ইহুদীদের ইতিপূর্বে দুই বার ধ্বংস করেছিলেন।
অবৈধ রাষ্ট্র ঈসরাইল কিভাবে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল?
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের উসমানীয় খিলাফত পতনের পর ফিলিস্তিনসহ বেশিরভাগ আরব এলাকা ইংল্যান্ড- ফ্রান্সের দখলে চলে যায়। ১৯১৭ সালের ২রা নভেম্বর বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস বালফোর ইহুদীবাদীদেরকে লেখা এক চিঠিতে ফিলিস্তিনের ভূখন্ডে একটি ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন, যা ইতিহাসে বেলফোর ডিকলারেশন নামে পরিচিত। বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিন এলাকায় ইহুদিদের আলাদা রাষ্ট্রের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয় এবং বিপুলসংখ্যক ইহুদি ইউরোপ থেকে ফিলিস্তিনে এসে বসতি স্থাপন করতে থাকে।
১৯০৫ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা ছিল মাত্র কয়েক হাজার। কিন্তু ১৯১৪ সাল থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত বৃটিশদের সহযোগিতায় ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা ১৫ হাজারে উন্নীত হয়। এরপর প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনে ইহুদী অভিবাসীদের ধরে এনে জড়ো করা শুরু হলে ১৯১৯ থেকে ১৯২৩ সাল নাগাদ ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা ৩৫ হাজারে পৌঁছে যায়। ১৯৩১ সালে ইহুদীদের এই সংখ্যা প্রায় ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১ লাখ ৮০ হাজারে পৌঁছায়। এভাবে ফিলিস্তিনে ইহুদী অভিবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকে এবং ১৯৪৮ সালে সেখানে ইহুদীদের সংখ্যা ৬ লাখে উন্নীত হয়।বৃটিশরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফিলিস্তিন ছেড়ে যাওয়ার সময় ঈসরাইল নামে একটি রাষ্ট্রের ঘোষণা দিয়ে যায়, যা শুরু থেকেই আরবরাষ্ট্র গুলো বিরোধিতা করতে থাকে। যা পরবর্তীতে ইহুদী ও আরব মুসলিমদের যুদ্ধে পর্যন্ত জড়ায় । এপর্যন্ত সর্বমোট আরবদের সাথে ইহুদীদের চারটি যুদ্ধ হয়েছে। এ নিয়ে এই ভিডিও ডকুমেন্টারিতা দেখতে পারেন
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=786745328382624&id=100011414919422
১, ১৯৪৮ আরব ঈসরাইল যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের প্রত্যক্ষ মদদে ইউরোপ থেকে ইহুদীদের কে ফিলিস্তিনে জড়ো করে। এবং ৯ মাস যুদ্ধের পর ইহুদীরা ফিলিস্তিনের ৫০% এলাকা দখল করতে সক্ষম হয় এই যুদ্ধ বিরতির মাধ্যমে সমাপ্তি হয়।
২, ১৯৫৬ সালে দ্বিতীয় আরব ঈসরাইল যুদ্ধ। যুদ্ধ বিরতি শেষ হওয়ার পর পুনরায় যুদ্ধ শুরু হয়।
৩, ১৯৬৭ সালে তৃতীয় আরব ঈসরাইল যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ঈসরাইল আনুষ্ঠানিক ভাবে যুদ্ধ শুরুর আগেই মিশর, সিরিয়া, জর্ডানের এয়ারপোর্ট আক্রমণ করে সিনাই উপত্যকা, জেরুজালেম, গোলান পর্বত মালা দখল করে নেয়। এই যুদ্ধ মাত্র ৬ দিন চলে। এই যুদ্ধে আরব রাষ্ট্র গুলো মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৪, ১৯৭৩ সালে চতুর্থ আরব-ঈসরাইল যুদ্ধ, এই যুদ্ধে মিশর ও সিরিয়া ঈসরাইলের বিরুদ্ধে মারাত্মক ভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। পরবর্তীতে জর্ডান, সৌদি আরব, আলজেরিয়া, ইরাক, কিউবা যুদ্ধে যোগ দেয়। কিন্তু ঈসরাইল মারাত্মক ভাবে ক্ষতির মুখে পরে একপর্যায়ে পরমাণু বোমা হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়, এবং এই সিদ্ধান্ত তারা আমরিকাকে জানায়। পরবর্তীতে আমরিকার মধ্যস্থতায় যুদ্ধের সমাপ্তি হয়। একপর্যায়ে ঈসরাইল সিনাই উপত্যকা মিশরকে ফেরত দেয়।
এছাড়াও লেবাননের হিজবুল্লাহর সাথে ২০০৬ সালে এবং গাজা উপত্যকার হামাসের সাথে ২০১৪ সালে ঈসরাইল যুদ্ধে জড়িয়ে ছিল।
ইসরাইল ও ইহুদীদের ধ্বংসের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের ভবিষ্যৎবাণীঃ
“আমি বনি ঈসরাইলকে কিতাবে সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলাম তোমরা পৃথিবীতে দুই বার অবশ্যই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে এবং ঔদ্ধত্য দেখাবে মারাত্মক ভাবে”।
(সূরা বনি ঈসরাইল, আয়াত নং-৪)
অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার হল, কোরআনের এই আয়াত নাজিল হওয়ার পূর্বে ইহুদীরা পৃথিবীতে দুইবার অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৭ সাল ও খ্রিস্টাব্দ ৭০ সালের পূর্বে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিল । আর এই আয়াত নাজিল হওয়ার পরেও তারা দুইবার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। প্রথমবার ইউরোপিয়ান ইহুদীরা (১৯৪৮-২০২৩ সাল ইনশাল্লাহ) পর্যন্ত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। এবং দ্বিতীয় বার দাজ্জালের আবির্ভাবের সময়ে ইরানের ইস্ফাহান শহরের ৭০ হাজার ইহুদী ও হাদীসের বর্ণনাকৃত তুর্কিরা মিলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, যেখানে ২০১৬ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী তাদের সংখ্যা ২৫০০০ হয়ে গেছে ।লিংকঃ
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Persian_Jews
ইতিপূর্বে পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার কারনে, আল্লাহ তায়ালা ইহুদীদের কিভাবে ধ্বংস করেছিলেন সেই বর্ননাও পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন।
” অতঃপর যখন(বনি ঈসরাইলকে ধ্বংসের) প্রতিশ্রুত সেই প্রথম সময়টি এলো (খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৭ সালে) তখন আমি তোমাদের (বনি ঈসরাইলের) বিরুদ্ধে প্রেরণ করলাম আমার কঠোর যোদ্ধা বান্দাদেরকে (বখতে নাসরের নেতৃত্বে ব্যাবিলনীয় বাহিনী) অতঃপর তারা প্রতিটি জনপদের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে পড়ল, এ ওয়াদা পূর্ণ হওয়ারই ছিল। অতঃপর আমি তোমাদের জন্যে তাদের বিরুদ্ধে পালা ঘুরিয়ে দিলাম, তোমাদেরকে ধনসম্পদ ও পুত্রসন্তান দ্বারা সাহায্য করলাম এবং তোমাদেরকে জনসংখ্যার দিক দিয়ে একটা বিরাট বাহিনীতে পরিণত করলাম। তোমরা যদি ভালো কর, তবে নিজেদেরই ভালো করবে আর যদি মন্দ কর, তা-ও নিজেদের জন্যেই। এরপর যখন (অবিচার অনাচারের) দ্বিতীয় সে সময়টি এলো (৭০ খ্রিস্টাব্দে) তখন অন্য বান্দাদেরকে প্রেরণ করলাম (সেনাপতি টাইটাসের নেতৃত্বে রোমান বাহিনী) , যাতে তোমাদের মুখমন্ডল বিকৃত করে দেয় আর (সুলাইমান আঃ নির্মিত) মসজিদে ঢুকে পড়ে যেমন প্রথমবার (তাদের পূর্বসূরিরা) ঢুকেছিল, এবং যেখানেই ঢুকে, সেখানেই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল “।
(সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত নং ৫-৭)
দ্বিতীয়বার ধ্বংস হওয়ার পর অর্থাৎ ৭০ খ্রিস্টাব্দে বনী ইসরাইলের উপর জেরুজালেম শহর তাদের জন্য হারাম হয়ে যায় এবং তারা পুরো বিশ্বে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
“আর আমি তাদেরকে (ইহুদিদেরকে) বিভক্ত করে দিয়েছি বিভিন্ন দেশময় বিভিন্ন শ্রেণীতে “।
(সূরা আ’রাফ, আয়াত নং – ১৬৮)
” এরপর আমি বনি ঈসরাইলকে বললাম, তোমরা (এবার) বসবাস করতে থাক। যখন আখিরাতের প্রতিশ্রুতির সময় আসবে, তখন তোমাদের একত্রিত করে নিয়ে আসব”।
(সূরা বনি ঈসরাইল, আয়াত নং – ১০৪)
” আশা করা যায়, (তোমরা যদি আল্লাহকে মেনে চল তাহলে) তোমাদের রব তোমাদের উপর রহম করবেন। কিন্তু তোমরা (ইহুদীরা) যদি পুনরায় (বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি) কর। আমিও আবার (তোমাদেরকে ধ্বংস) করব। আর আমি কাফেরদের জন্য জাহান্নামকে করেছি কয়েদখানা।
(সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত নং – ৮)
এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা ইহুদীদেরকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, ইহুদীরা যদি পুনরায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে আগের মত আবার ধ্বংস করবেন। যেরকম ভাবে আগে দুইবার ধ্বংস করেছিলেন।যেমনটি খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৭ সালে এবং খ্রিস্টাব্দ ৭০ সালে ধ্বংস করেছিলেন।
“অবশ্যই আল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত ইহুদীদের উপর এমন লোক পাঠাতে থাকবেন, যারা তাদেরকে (ইহুদীদের) নিকৃষ্ট শাস্তি প্রদান করতে থাকবে”।
(সূরা আরাফ, আয়াত নং- ১৬৭)
সুবহানাল্লাহ!! আল্লাহ কতইনা সত্য কথা বলেছেন? মদিনাতে চুক্তি ভঙ্গ ও বিশ্বাসঘাতকতার কারনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বনু কুরাইজার সব পুরুষ ইহুদীদের হত্যা করেছিলেন এবং নারী ও শিশুদের দাসী হিসেবে সাহাবীদের মধ্যে বন্টন করেছিলেন। হযরত উমর (রাঃ) ইহুদীদেরকে আরব উপদ্বীপ থেকে বের করে দিয়েছিলেন। এমনকি গত শতাব্দীতে জার্মানি ও অস্ট্রিয়াতে ইহুদীরা যখন মারাত্মক উৎপাত শুরু করে দিয়েছিল, ঠিক তখনই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে চরমভাবে শায়েস্তা করেছিলেন। কথিত আছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, হিটলার ৬০ লক্ষ ইহুদীকে হত্যা করেছিলেন।
এছাড়াও বর্তমানে যেহেতু তাদের উৎপাত আবার বেড়ে গেছে, মুসলমানদের উপর তাদের অত্যাচার, অবিচার, জুলুম নির্যাতন বেড়ে গেছে, খুব শীঘ্রই আল্লাহ দুনিয়ার সমস্ত ইহুদিদের কুরআনের বর্ননামতে ইসরাইলের মাটিতে একত্র করে মনোনিত বান্দাদের দ্বারা চুড়ান্তভাবে শায়েস্তা করবেন।
তথ্যসংগ্রহঃ জাহাঙ্গীর আলম