ভারতীয় চলচ্চিত্রের মোস্ট কমপ্লিট অ্যাক্টর মোহনলাল বিশ্বনাথ যেন কেরালার এক টুকরো নির্মলতা। তায়কোয়ান্দোতে ব্ল্যাক বেল্ট পাওয়া ‘লালেট্টা’ (ভক্তরা মোহনলালকে আদর করে লালেট্টা ডাকে) ক্যামেরার সামনে প্রথম দাঁড়ান ১৯৭৮ সালে। বন্ধুরা মিলে তৈরি করেন ‘তিরানোট্টাম’ নামের সিনেমা। কিন্তু সেন্সর জটিলতায় সেটি মুক্তি পায়নি। ১৯৮০ সালে পরিচালক ফাজিল তার প্রথম ছবির জন্য একটা নতুন মুখ খুঁজছিল। ‘মঞ্জিল ভিরিঞ্জা পোক্কাল’ মুভিতে ভিলেনের ভূমিকায় অভিনয় করে ছাড়িয়ে গেছেন হিরো শঙ্করকে! ১৯৮৪ সালে প্রিয়দর্শনের পরিচালনায় কমেডি ড্রামা ‘পোচাক্করু মক্কুত্তি’, বক্স অফিসে পায় বিগ হিটের তকমা।
১৯৮৬ সালকে মোহনলালের ক্যারিয়ারের মোস্ট ভ্যালুয়েবল সাল বললে ভুল বলা হবে না। এক বছরে ৩৪টি সিনেমা রিলিজ করার বিশ্বরেকর্ডের জন্যে নয় শুধু, সে বছর সুপারস্টার হবার পথে একধাপ এগিয়ে যান তিনি। নির্মাতা থাম্পি কান্নাথানাম ‘রাজাভিন্তে মাকান’ মুক্তির পর মালায়লামের অন্যতম বিগেস্ট হিটের তকমা পেয়ে যায়। মোহনলালের কপালে লাগে সুপারস্টারের তকমা। ১৯৮৮ তে বন্ধু প্রিয়দর্শনের সাথে ফের জুটি বাঁধেন। ‘চিত্রম’ টাইটেলের মুভিটি অনন্য রেকর্ড গড়ে! ৩৬৫ দিন, মানে গোটা একটা বছরজুড়ে কেরালার কোনো না কোনো থিয়েটারে চলেছে এটি!
উত্থান যেখানে আছে, পতনের গল্পও থাকবে সেখানে। কমপ্লিট অ্যাক্টর মোহনলালের ক্যারিয়ারেও আছে আপ অ্যান্ড ডাউনস! ২০০০ সালে ‘নারশিমা’ সিনেমা দিয়ে মলিউডে নিজেকে অনন্য উচতায় নিয়ে যান তিনি। শাজি কৈলাসের নির্মাণে সেই মুভি বক্স অফিস ভেঙ্গেচুরে দেয়। লালেট্টা বনে যান সুপার হিউম্যান। কিন্তু খুব বেশিই হয়ত উপরে উঠে গিয়েছিলেন। তাকে নিয়ে ভক্তদের আশার পারদও চড়তে শুরু করে তরতরিয়ে।
ফলাফল, টানা ফ্লপ যেতে থাকে মুভি; কমতে থাকে খ্যাতি। তবে তিনি মোহনলাল যিনি ভিলেন থেকে শুরু করে অ্যাকশন, কমেডি, রোমান্টিক, এক্সপেরিমেন্টাল ক্যারেকটার সবকিছুতে নিজের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন! যার সমন্ধে রজনীকান্ত বলেন- তিনি এমন কিছু চরিত্র করেছেন, যেগুলো আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারি না! এমন একজন মানুষের ফেরাটা সময়ের ব্যাপার। ২০১৩ সালে মুক্তি পায় ‘দৃশ্যম’, ভারতের অন্যতম সেরা থ্রিলার ভাবা যেই সিনেমাকে। চমৎকার ন্যাচারাল অভিনয়ে রাজার মতো ফিরেন তিনি। ছবিটি আয় করে ৭৫ কোটি রূপি!
মোহনলাল যেন মালায়লাম বক্স অফিসের মনস্টার! ছোট এক ফিল্মপাড়া, সেখান থেকে ১০ কোটিও এক সময় অনেক মনে হতো! অথচ সেখান থেকে মোহনলাল বের করেছেন ১০০ কোটির সিনেমা। পিছন ফিরে তাকালে দেখবেন মলিউডের প্রথম ৫,১০,২০,৩০, ৫০, ১০০ কোটি আয় করা সবগুলো মুভির অভিনেতা একজনই, মোহনলাল বিশ্বনাথ। তেলেগুতে জনতা গ্যারেজ নামে ছবিতে এনটিআর জুনিয়রের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন, সেটি বক্স অফিসে ১০০ কোটি ছাড়ায়। যা মোহনলালকে এনে দেয় দারুণ অর্জন। একমাত্র মলিউড অভিনেতা হিসেবে মালায়লাম ও তেলেগু দুই জায়গায় ১০০ কোটি আয় করা ছবি রয়েছে তার দখলে।
ফেসবুক, টুইটার প্রতিনিয়ত সরগরম থাকে লালেট্টার নিত্যনতুন লুক, চ্যালেঞ্জিং কাজের জন্য। পরিচালক রাম গোপাল ভার্মা একবার বলেছিলেন- কাজ দিয়ে যদি ডিরেক্টরদের শতভাগ খুশি কেউ করতে পারে সেটি মোহনলাল। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছ থেকে কর্ণেল উপাধি পাওয়া একমাত্র অভিনেতা মোহনলাল ২০০৬ সালে নির্বাচিত হন কেরালার সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি হিসেবে। তিনি ম্যামোত্তির মতো মেগাস্টার নন, ডায়লগ পাঞ্চের জন্য বিখ্যাত সুরেশ গোপি নন, তিনি সবার চেয়ে আলাদা। সবকিছুর মিশ্রণ! ক্যারিয়ারে ২০টি ব্লকবাস্টার সিনেমা উপহার দেওয়া লালেট্টাকে এমনি এমনিই তো আর ‘কমপ্লিট অ্যাক্টর’ বলা হয় না!