রোনালদিনহো গাউচো : যার নাম উচ্চারিত হবে যুগে যুগে

0
রোনালদিনহো গাউচো : যার নাম উচ্চারিত হবে যুগে যুগে

গলি থেকে এভারেস্ট জয় করা প্রত্যেকের গল্প থাকে, কাঠখড় পুঁড়িয়ে চেনাতে হয় নিজেকে। রোনালদিনহো গাউচো নিজেকে চিনিয়েছেন। তিনি ধুলো উড়িয়েছেন আকাশে। রূপান্তর করেছেন মেঘে। মেঘ ঝরেছে বৃষ্টি হয়ে।
রোনালদো ডি অ্যাসিইস মোরেইরা। খুনে চেহারার এক্সপ্রেশনে বিপক্ষের কপালে চিন্তার ভাঁজ তুলতেন নিয়মিত। খেলা শেষে হাস্যরসে মাতাতেন সতীর্থদের। বিভিন্ন চ্যারিটি, ট্রাস্টে তিনি হাত খুলে দান করেন। ইউএনএইডস এর শুভেচ্ছাদূত হিসেবে এইচঅাইভি এইডস সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করেছেন, মানুষের জন্য নিরলসভাবে খাটেন। খ্যাতির সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছেও ভোলেননি নিজের অস্তিত্ব, যা তাকে নিয়ে গেছে আরও উপরে। পুরো ক্যারিয়ারে পাঁচ শতাধিক ম্যাচে মোটে তিনটা লাল কার্ড প্রমাণ দেয় তিনি কেমন ছিলেন।

লিওনেল মেসিকে বলা হয় চলতি শতাব্দীর জাদুকর। ড্রিবলিংয়ে অনন্য প্রতিভা সময়ের সেরা এই তারকার ড্রিবলিংয়ে নাকানি চুবানি খায়নি এমন ডিফেন্ডার পাওয়া মুশকিল। জানেন, মেসির আদর্শ রোনালদিনহো নামের ভদ্রলোকটি? তার পায়ে গেলে যেন কথা বলতো ফুটবল। যখন যেভাবে যেদিকে চাইতেন, বল লেগে থাকত পায়ে। যেন পা বলছে, তুই তৈরি? মনিবের প্রশ্নে তৎক্ষনাৎ জবাবে বলটাও বলত, জি জাহাপন! তারপরও সন্দিহান মনের কমতি নেই। প্রযুক্তির যুগে সার্চ ইঞ্জিন গুগল সহজলভ্য। একবিংশ শতাব্দীর সেরা ড্রিবলার নিঃসন্দেহে রোনালদিনহো, গুগলেও দ্বিমত করবে না।

দেঁতো রোনালদিনহোকে লোকে চেনে, তিনি ট্যারাও! ভয় নেই। এটি শুধু উপমার প্রতীকী ব্যবহার। ট্যারা শব্দটি সবার পরিচিত। যারা ট্যারা তারা এক দিকে তাকালে মনে হয় অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। ইতস্ততভাবে মাঝেমধ্যে আমাদের খেই হারিয়ে যায়। হতভম্ব হই। একইভাবে, মাঠে রোনালদিনহো ভড়কে দিতেন বিপক্ষকে। এক দিকে তাকিয়ে অন্য দিকে সফল পাস দেয়ায় তিনি অনবদ্য। বিপক্ষ কিছু বুঝে উঠার আগে সর্বনাশের উদ্দেশ্যে সতীর্থের কাছে বল পাঠিয়ে দিতেন।

মেসিকে আবার আনি। বার্সেলোনার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোল স্কোরারের প্রথম গোলের অ্যাসিস্ট মেকার ছিলেন রোনালদিনহো। মূহুর্তে স্টাইল পরিবর্তন করা, চকিতে চোখে হারিয়ে ফেলা, ঘোমটার আড়ালে নয়, প্রকাশ্যে খেমটা নাচাতে সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন রোনি। সত্তরের দশকের রিভেলিনো থেকে নব্বইয়ের দশকের রোমারিও, রোনালদো, রিভালদো কিংবা শত্রু শিবিরের ম্যারাডোনা সবাইকে এক মোহনায় দাঁড় করান রোনালদিনহো। এরা সকলে তার আদর্শ! এতজনকে আদর্শ মেনেছেন বলেই কি-না সকলের দোষগুণ মিলিয়ে নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছেন বিধ্বংসী রূপে। অথচ এমন ভয়ংকর চেহারাকে আপন করে নিয়েছে সবাই, এমনকি প্রতিপক্ষের তারকারাও। বার্সোলোনার যে কয়জন ফুটবলার চির শত্রু রিয়াল মাদ্রিদের কাছ হতে স্ট্যান্ডিং অভেশন পায়, তাদের মধ্যে রোনি একজন। ২০০২ সালের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ত্রিফলা আক্রমণের ‘থ্রি আর অস্ত্রে’র একজন রোনালদিনহোর নিন্দুক নেই তেমন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে নিজ দলের ২৩-০ গোলের ব্যবধানে জয়ী হওয়া ম্যাচে সবগুলো গোল করে লাইমলাইটে আসা কিংবদন্তি রোনালদিনহো ফুটবল খেলাকে নিজের আপন পায়ে অনন্য উচ্চতায় তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ার জুড়ে, তার সুমিষ্ট হাসিতে।

দুইবারের ব্যালন ডি’অর, একটি বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল ও বার্সোলানার জীবন্ত এই কিংবদন্তির নাম উচ্চারিত হবে যুগে যুগে। অর্ধ যুগের মতো শাসিয়েছেন ফুটবল বিশ্ব। এত অল্প সময়ে এতটা আলো ফুটবল দুনিয়ায় ছড়াতে পেরেছে খুব অল্প জনই।