আদিমকাল থেকেই মনের ভাব প্রকাশের বিভিন্ন মাধ্যম প্রচলিত হয়ে আসছে।কিন্তু এই আধুনিক যুগেও মনের ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে নতুন নতুন সব মাধ্যমের দেখা মিললেও কথা বলে ভাবের আদান-প্রদানের আবেদন এখনো হারায়নি। কিন্তু কথা বলতে গিয়েই মাঝে মাঝে আমরা এমন সব কথা বলে ফেলি, যা পরবর্তী সময়ে অন্যের মন খারাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়; কিংবা তৈরি হয় ভুল-বোঝাবুঝি।
মনের ভাব,ভালাে লাগা,খারাপ লাগা ইত্যাদি প্রকাশ করার জন্য আমাদের কথা বলতেই হয়।কিন্তু অন্যের সাথে কথা বলতে গিয়ে কথা বলার কারণে এমন সব পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, তার সহজ উপায় বলেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অ্যানি বাড়ৈ। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় আমরা না বুঝে বা না ভেবেই অনেক কিছু বলে ফেলি। যা পরবর্তীকালে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেকোনো কথা বলার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, আমি যা বলতে চাইছি বা যে তথ্যটি জানাতে চাইছি, তা যেন সহজ ও সরাসরি হয়। দুই রকমের অর্থ বা “ডাবল মিনিং” করা যায় এমন কথা এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। মোদ্দা কথা হলো, গুছিয়ে মনের কথাগুলো বলতে হবে। তার আগে ভেবে নিতে হবে।’
>>যখন পাশাপাশিঃ খুব কাছের কেউ মারা গেছেন এমন অবস্থায় আলাদা করে সান্ত্বনা দেওয়ার চেয়ে আপনি তাঁর পাশে আছেন এই আস্থাটা তৈরি করা জরুরি। সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে দুজনের মধ্যে-এমন সময় আবেগের বশবর্তী হয়ে কিংবা কোনো একজনের পক্ষ নিয়ে বেফাঁস কথা বলে ফেললে অযাচিত উত্তেজনা তৈরি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, একটা সময় যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তখন আপনার বেফাঁস কথাটা কিন্তু থেকে যাবে। সেদিনের কথার জন্যই আপনার সম্পর্কে ধারণাও বদলে যেতে পারে সেই মানুষের।
>>প্রশংসা করার ক্ষেত্রেঃ হয়তো কোনো এক অনুষ্ঠানে আপনার এক সহকর্মীকে দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে। আপনি প্রশংসাই করতে চাইলেন। মাথায় রাখবেন, এ ক্ষেত্রে ‘তোমাকে এই পোশাকে বেশ সুন্দর লাগছে’ বা ‘কোথা থেকে সেজেছ, খুব সুন্দর লাগছে’-এ রকম কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। তাঁকে সরাসরি বলুন, ‘তোমাকে চমৎকার লাগছে’। তা না হলে আপনি যা বলতে ও বোঝাতে চাইছেন, তা হারিয়ে যাবে। তার সাজ বা পােশাকের নতুনত্বে যদি আপনার মনে হয় তাঁকে তা মানাচ্ছে না তবে তাকে সেটা গুছিয়ে বলুন। কেননা, আপনার কাছে ভালো লাগছে না, মানে এই নয় যে তাঁকে ভালো দেখাচ্ছে না।
>>যখন আসে ব্যর্থতাঃ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতাও থাকবে। কিন্তু হতাশাগ্রস্ত হয়ে অন্যের ওপর নিজের ব্যর্থতা চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। আপনার ব্যর্থ হওয়ার পেছনে কারও ইন্ধন থাকলেও উচিত হবে রাগারাগি বা গালাগালি না করে শান্ত হয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা।শুধু তা-ই নয়, ব্যর্থ হয়ে নিজেকে নিয়ে অসন্তোষের কথাও বলেন অনেকে। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, নিজের প্রতি নিজে শ্রদ্ধাশীল না হলে কিন্তু অন্যদের কাছ থেকে শ্রদ্ধা আশা করা যায় না।
>>মতপ্রকাশের ক্ষেত্রেঃ যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে সবার একই রকম মত থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। কর্মক্ষেত্রে আপনার কোনো সিদ্ধান্ত পছন্দ হয়নি। সে ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটি বাজে হয়েছে বা অপরিপক্ব কাজ-এমন মন্তব্য করবেন না; বরং আপনি কেন অন্যভাবে কাজটি করতে চাইছেন, সে ব্যাপারে যুক্তি দিন। যদি আপনার মতামত ভুল হয়, সেটি যেমন মেনে নেওয়ার মানসিকতা রাখতে হবে,ঠিক তেমনি অপরের ভুলকেও ‘ক্ষমাসুন্দর’ দৃষ্টিতে দেখতে হবে।
>>আনন্দ প্রকাশের ক্ষেত্রেঃ আপনার সফলতায় প্রিয়জনদের আপনার আনন্দে শামিল করুন। কারণ, প্রত্যেক মানুষই আমাদের জীবনে কোনো না কোনোভাবে অবদান রাখেন।এছাড়া আপনার পরাজিত প্রতিদ্বন্ধীর সাথে আপনার বিজয় নিয়ে অহেতুক আলােচনা করবেন না এবং পারলে ওনাকে ভবিষ্যতের জন্য ঊৎসাহিত করুন।
>>ভালােবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রেঃ ভালোবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রেও মেনে চলুন একই নিয়ম। আপনার অনেক বড় অর্জন বা ব্যর্থতার দিনে আপনার সঙ্গী কাছে নেই? অভিমানী সুরে ‘তুমি আমাকে আর ভালোবাসো না’-এমন কথা না বলে বলুন, ‘তোমাকে মিস করছি’ এতে করে আপনার সঙ্গীও জানবেন, তিনি আপনার জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ভালােবাসার মানুষের অনুপস্থিতি বা আপনার জীবনে তার প্রয়ােজনটা তাকে ভালােবাসা দিয়েই বােঝানাের চেষ্টা করুন।